প্রচ্ছদ / দুআ-দরূদ ও অজীফা / জুমআর দিন দরূদ পড়লে দরূদ পুলসিরাত পাড় করিয়ে দিবে?

জুমআর দিন দরূদ পড়লে দরূদ পুলসিরাত পাড় করিয়ে দিবে?

প্রশ্ন

বাংলাদেশের এক প্রসিদ্ধ বক্তা তার বয়ানে বলেন:

“যে শুক্রবারে এক হাজার বার দরূদ পড়ে। আল্লাহর রাসূল বলে আমি পুলসিরাতে দৌড়াবো। যদি পাড় না হইতে পারে, তাইলে দরূদের গাট্টি মাথায় দিয়া পাড় করাইয়া দিবো। পাড় করাইয়া দিবো, মঞ্জুর করাইয়া নিছেন। আমার উম্মত যেন ডাইরেক্ট দোযখে না পড়ে। তো আল্লাহ বলছেন, বন্ধু সিস্টেম কইরা দিলাম্। আপনার উম্মত ডাইরেক্ট দোযকে পড়বে না। পুলসিরাতের থেইকা যদি পইড়াও যায়।

যেরম গাছের থেইকা পইড়া গেলে ডাল ধইরা ঝুইলা থাকে। আপনার উম্মত পুলসিরাত ধইরা ঝুইলা থাকবে অতক্ষণ পর্যন্ত। যদি দরূদ পইড়া থাকে জীবনে, তো দুরূদ ছুইটা আসবে। আপনার উম্মতকে দরূদ উঠাবে পুলসিরাতের উপরে। তারপর দরূদ পাড় করাইয়া দিবে। ঐ পর্যন্ত আমি ঝুলাইয়া রাখমু, যতক্ষণ পর্যন্ত দরূদ ছুইটা আসবে।”

দরূদের এ ফযীলত কি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে? দয়া করে জানাবেন।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

দরূদ পড়া নিঃসন্দেহে অনেক সওয়াবের একটি কাজ। দরূদ পড়ার অনেক সওয়াবের কথা হাদীসের কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।

জুমআর দিন দরূদ পড়ার প্রতিও হাদীসে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

কিন্তু মাওলানা যে ফযীলত বলেছেন, এর পুরোটাই মাওলানা নিজে বানিয়ে আল্লাহ তাআলা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা বলে চালিয়ে দিয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা নবীকে ওয়াদা করেছেন যে, “উম্মতে মুহাম্মদী পুলসিরাতে ঝুলে থাকবে, তারপর দরূদ পড়ে থাকলে, দরূদ এসে তাকে পুলসিরাতের উপরে উঠিয়ে পাড় করে দিবে” এমন কোন হাদীস নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত নয়।

এটা পুরোটাই মাওলানার কল্পনাপ্রসূত বানোয়াট কথা।

আল্লাহ ও নবীর নামে মিথ্যা বলায় এ মাওলানার তওবা করা উচিত।

এমন বানোয়াট বর্ণনা বয়ান করা ও বিশ্বাস করা কোনটাই জায়েজ নয়।  

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ أَوْلَى النَّاسِ بِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَىَّ صَلاَةً ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَرُوِيَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏”‏ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا وَكَتَبَ لَهُ بِهَا عَشْرَ حَسَنَاتٍ

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার নিকটতম ব্যক্তি হবে যে আমার প্রতি বেশি পরিমাণে দরূদ পাঠ করেছে। আবূ ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান গারীব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে আরও বর্ণিত আছে, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি দশটি রহমত বর্ষণ করেন এবং তার জন্য দশটি সাওয়াব লিখে দেন। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪৮৪]  

عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ وَصَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا ثُمَّ سَلُوا اللَّهَ لِيَ الْوَسِيلَةَ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِي إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ أَرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ فَمَنْ سَأَلَ لِيَ الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ ‏

আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তোমরা যখন মুয়াযযিনকে আযান দিতে শোন, তখন মুয়াযযিন যা বলে তোমরাও তা বলবে এবং আমার উপর দরুদ পাঠ করবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ দশবার তার উপর রহমত প্রেরণ করেন। তারপর আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলা সওয়াল করবে, কেননা ওসীলা জান্নাতের একটি মনযিল। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে একজন ব্যতীত আর কেউ এর যোগ্য হবে না। আশা করি আমি হব সেই ব্যক্তি। অতএব যে ব্যক্তি আমার জন্য ওসীলা চাইবে, সে আমার সুপারিশের অধিকারী হবে। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৭৯]

عَنْ بُرَيْدِ بْنِ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مَنْ صَلَّى عَلَىَّ صَلاَةً وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيئَاتٍ وَرُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা’আলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করবেন, তার দশটি শুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তাঁর জন্য দশটি মর্যাদা উন্নীত করা হবে। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-১৩০০]

عَنْ أَوْسِ بْنِ أَوْسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فِيهِ خُلِقَ آدَمُ وَفِيهِ قُبِضَ وَفِيهِ النَّفْخَةُ وَفِيهِ الصَّعْقَةُ فَأَكْثِرُوا عَلَىَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَىَّ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ صَلاَتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرِمْتَ يَقُولُونَ بَلِيتَ ‏.‏ فَقَالَ ‏”‏ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ

আওস ইবন আওস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ দিনসমূহের মধ্যে জুমুআর দিনই সর্বোৎকৃষ্ট। এই দিনই আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয় এবং এই দিন তিনি ইন্তিকাল করেন। ঐ দিনে শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে। ঐ দিন সমস্ত সৃষ্টিকুল বেহুশ্ হবে। অতএব তোমরা ঐ দিন আমার উপর অধিক দুরূদ পাঠ করবে, কেননা তোমাদের দুরূদ আমার সম্মুখে পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার দেহ তো গলে যাবে। এমতাবস্থায় আমাদের দুরূদ কিরূপে আপনার সম্মুখে পেশ করা হবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ জাল্লা জালালুহু আম্বিয়ায় কিরামের দেহসমূহ মাটির জন্য (বিনষ্ট করা হতে) হারাম করে দিয়েছেন। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-১০৪৭]

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ভয়েস মেসেজে কবুল রেকর্ড করে দিলে তা স্বাক্ষিদের শুনালে কি বিবাহ হয়ে যায়?

প্রশ্ন আসসালামু আলাইকুম। দয়া করে আমার এই মেইল এর উত্তর দিন। এইটুকু অনুগ্রহ করুন।  আপনাদের …