প্রচ্ছদ / আদব ও আখলাক / প্রচলিত দস্তরখান কি সুন্নতী দস্তরখান নয়?

প্রচলিত দস্তরখান কি সুন্নতী দস্তরখান নয়?

প্রশ্ন

প্রচলিত দস্তরখান সুন্নাত নয়। খানা যে বস্তর উপর রেখে খানা খাওয়া হয় তাকেই দস্তরখান বলে।

প্রমান:১।

ﻭاﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﺗﻄﻠﻖ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺎ ﻳﻮﺿﻊ ﻋﻠﻴﻪ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻷﻧﻬﺎ ﺇﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺎﺩ ﻳﻤﻴﺪ ﺇﺫا ﺗﺤﺮﻙ ﺃﻭ ﺃﻃﻌﻢ ﻭﻻ ﻳﺨﺘﺺ ﺫﻟﻚ ﺑﺼﻔﺔ ﻣﺨﺼﻮﺻﺔ ﻭﻗﺪ ﺗﻄﻠﻖ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻭﻳﺮاﺩ ﺑﻬﺎ ﻧﻔﺲ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﺃﻭ ﺑﻘﻴﺘﻪ ﺃﻭ ﺇﻧﺎﺅﻩ ﻭﻗﺪ ﻧﻘﻞ ﻋﻦ اﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺇﺫا ﺃﻛﻞ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﺷﻲء ﺛﻢ ﺭﻓﻊ ﻗﻴﻞ ﺭﻓﻌﺖ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ

(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী খ:৯,পৃ:৫৮০,মিরকাত)

২।

ﻗﻠﺖ ﻭاﻟﺘﺤﻘﻴﻖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺃﻥ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻫﻲ ﻣﺎ ﻳﺒﺴﻂ ﻟﻠﻄﻌﺎﻡ ﺳﻮاء ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺛﻮﺏ ﺃﻭ ﺟﻠﺪ ﺃﻭ ﺣﺼﻴﺮ ﺃﻭ ﺧﺸﺐ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻓﺎﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻋﺎﻡ ﻟﻬﺎ ﺃﻧﻮاﻉ ﻣﻨﻬﺎ اﻟﺴﻔﺮﺓ ﻭﻣﻨﻬﺎ اﻟﺨﻮاﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻓﺎﻟﺨﻮاﻥ ﺑﻀﻢ اﻟﺨﺎء ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻦ ﺧﺸﺐ ﻭﺗﻜﻮﻥ ﺗﺤﺘﻪ ﻗﻮاﺋﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺟﺎﻧﺐ

(“আওনুল মা’বূদ শরহে আবু দাঊদ” ইমাম ইবনুল কাইয়্যূম রহ এর কিতাব)

সুতরাং আমরা যে পাত্রে খানা খাই,এপাত্রই দস্তরখান।

আমাদের দেশে পাত্রের নিচে যে কাপড়,চামড়া বা প্লাষ্টিক বিছানো হয়, তা বাস্তবে দস্তরখান নয়।

কারণ এগুলোর উপর তো খানা রাখা হয় না। বরং খাবারের পাত্র রাখা হয়।

অবশ্য সরাসরি এগুলোর উপর খানা রেখে খেলে তখন এগুলোকেও দস্তরখান বলা হবে।

এ বিষয়ে আপনার মতামত/ তাহকিক আসা করছি।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত দু’টি ইবারতের কোথাও প্রচলিত দস্তরখান দস্তরখান হতে পারে না বলে স্পষ্ট কোন কথা নেই।

ফাতহুল বারীর ইবারতে যার উপর রেখে খানা খাওয়া হয়, তাকেই দস্তরখান বলে উদ্ধৃত করা হয়েছে।

এছাড়া খাবার, খাবারের পাত্র এবং খাবারের অবশিষ্টাংশকেও দস্তরখান বলার কথা এসেছে। এছাড়া বুখারীর উদ্ধৃতিতে আনা হয়েছে যে, যখন ব্যক্তি কোনকিছুর উপর রেখে খানা খায়, তারপর তা উঠিয়ে ফেলা হয়, তখন বলা হয় যে, দস্তরখান উঠিয়ে নেয়া হয়েছে।

এখানে স্পষ্ট করে প্রচলিত দস্তরখান দস্তরখান নয় বলাটা দুস্কর।

আর আউনুল মা’বুদে এসেছে যে, খাবারের জন্য যা বিছানো হয়, সেটিকেই দস্তরখান বলা হয়। চাই সেটি কাপড়ের হোক বা চামড়ার বা অন্য কিছুর।

আউনুল মা’বুদের ইবারত দ্বারাও প্রচলিত দস্তরখান বাতিল হচ্ছে না। কারণ দস্তরখান খাবারের জন্যই বিছানো হয়ে থাকে। আসলে মূল বিষয় হলো:

عَنْ يُونُسَ قَالَ عَلِيٌّ هُوَ الإِسْكَافُ عَنْ قَتَادَةَ عَنْ أَنَسٍ قَالَ مَا عَلِمْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَكَلَ عَلٰى سُكْرُجَةٍ قَطُّ وَلاَ خُبِزَ لَه“ مُرَقَّقٌ قَطُّ وَلاَ أَكَلَ عَلٰى خِوَانٍ قَطُّ قِيلَ لِقَتَادَةَ فَعَلاَمَ كَانُوا يَأْكُلُونَ قَالَ عَلٰى السُّفَرِ

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনও ‘সুকুরজা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন,তার জন্য কখনও পাতলা রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের উপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না। ক্বাতাদাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তাঁরা কিসের উপর আহার করতেন। তিনি বললেনঃ সুফরা তথা দস্তরখানের উপর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৮৩৮৬]

সে যুগে ‘সুফরা’ ছিল চামড়ার। তাতে আংটা থাকত। খুলে বিছালে দস্তরখান, গুটিয়ে ফেললে সফরের পাথেয় রাখার মত ছোট ব্যাগ। ‘সুফরা’তে সাধারণত শুকনা খাবার রেখে খাওয়া হত।

ঝুল জাতীয় বস্তু এমন দস্তরখানে রেখে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই ভিন্ন পাত্রে তা রাখাটাই স্বাভাবিক।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিভিন্ন ঝুল জাতীয় খাবার রুটির সাথে মিশিয়ে খাওয়ার কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এরকম বস্তু দস্তরখানে সরাসরি রেখে খাবার কোন সুযোগ নেই।

এর মানে অন্য কোন পাত্রে তা রাখা থাকে। শুকনো খাবার দস্তরখানে এবং ঝুল জাতীয় খাবার হলে তা অন্য পাত্রে রেখে খাওয়া।

আমাদের দেশে যেহেতু ঝুল জাতীয় খাবারই বেশি খাওয়া হয়,তাই দস্তরখানের উপর অন্য প্লেট রেখে খাওয়া হয়ে থাকে।

বাকি শুকনো খাবার দস্তরখানের উপর রেখে খেতেও কোন সমস্যা নেই। যদি দস্তরখান পরিস্কার থাকে।

তাই প্রচলিত দস্তরখান সুন্নত নয় বলাটা যৌক্তিক বলে মনে হয় না। বাকি আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

বৈধ কাগজপত্র ছাড়া রাস্তায় গাড়ি চালানোর হুকুম কী?

প্রশ্ন আমার প্রশ্ন হলো: মোটর সাইকেল কি কোন কাগজ ছাড়া ব্যবহার করা জায়েজ? উত্তর بسم …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *