প্রশ্ন
বর্তমান সময়ে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়ার হুকুম কি?
প্রশ্নকর্তা: মুহাঃ ইসমাইল হোসাইন
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ ঘোড়ার গোস্ত খাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন। দলীল হিসেবে আয়াত পেশ করেছেন সূরা নাহলের ৫ ও ৮ নং আয়াত।
সূরা নাহলের ৫ নং আয়াতে চতুষ্পদ জন্তুর মাঝে কতিপয়কে খাওয়া হালাল বলার পর আট নং আয়াতে ঘোড়া, খচ্চর ও গাধাকে শোভাবর্ধন এবং আরোহনের মাধ্যম বলা হয়েছে। খাওয়া হালালের কথা বলা হয়নি।
তাই তিনি বলেন যে, এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার গোস্ত খাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং তা কেবলমাত্র বাহন। [মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৩২০]
ঠিক একই বক্তব্য পাওয়া ইমাম আবূ হানীফা রহঃ থেকে। ইমাম আবূ হানীফা রহঃ ঘোড়ার গোস্ত খাওয়াকে মাকরূহ বলেছেন। মাকরূহটি তাহরীমী নাকি তানজিহী এ বিষয়ে ফক্বীহদের মাঝে মতভেদ হলেও তাহরিমীর মতটিই বেশি বিশুদ্ধ। [ফাতাওয়া আলমগীরী-৫/২৯০, হেদায়া-৪/৩৫২]
হাদীসের মাঝেও ঘোড়ার গোস্ত খাওয়ার বিষয়ে নিষিদ্ধতা পাওয়া যায়।
عَنْ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ، قَالَ: ” نَهَى رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَكْلِ لُحُومِ الْخَيْلِ وَالْبِغَالِ وَالْحَمِيرِ
হযর খালেদ বিন ওয়ালিদ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম ঘোড়া, খচ্চর ও গাধার গোস্ত খেতে নিষেধ করেছেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩১৯৮, সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৩৭৯০, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৪৩৩১, আলমু’জামুল কাবীর লিততাবারানী, হাদীস নং-৩৮২৬, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৪৭৬৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৮১৭]
তবে বুখারী মুসলিমসহ একাধিক সহীহ হাদীসে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া বৈধতার হাদীসও পাওয়া যায়। এ কারণে ইমাম আবূ ইউসুফ রহঃ এবং ইমাম মুহাম্মদ রহঃ এর মতে ঘোড়ার গোস্ত খাওয়া হালাল।
মূলত ঘোড়া একটি হালাল প্রাণী। তার গোস্ত মূলত জায়েজই। কিন্তু মুজাহিদদের বাহন এবং উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসের আলোকে ঘোড়ার গোস্ত খেতে ফিক্বহে হানাফীতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।
বাকি কেউ যদি খায় এটি নাজায়েজ বা হারাম হবে না। জায়েজ আছে। তবে এটি অনুত্তম কাজ।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ قَالَ: نَهَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ خَيْبَرَ عَنْ لُحُومِ الْحُمُرِ وَرَخَّصَ فِي لُحُومِ الْخَيْلِ (صحيح البخارى، رقم-5520)
عَنْ أَسْمَاءَ قَالَتْ: نَحَرْنَا فَرَسًا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَكَلْنَاهُ (صحيح البخارى، رقم-5519)
يكره لحم الخيل في قول أبي حنيفة رحمه الله تعالى، خلافاً لصاحبيه، واختلف المشايخ في تفسير الكراهة، والصحيح أنه أراد بها التحريم، ولبنه كلحمه، كذا في فتاوى قاضي خان. وقال الشيخ الإمام السرخسي: ما قاله أبو حنيفة رحمه الله تعالى أحوط، وما قالا أوسع، كذا في السراجية (الفتاوى الهندية 5/ 290)
وأما لحم الخيل فقد قال أبو حنيفة رضي الله عنه: يكره، وقال أبو يوسف ومحمد رحمهما الله: لا يكره، وبه أخذ الشافعي رحمه الله“ (بدائع الصنائع 5/ 38
قال: “ويكره لحم الفرس عند أبي حنيفة” وهو قول مالك. وقال أبو يوسف ومحمد والشافعي رحمهم الله: لا بأس بأكله لحديث جابر رضي الله عنه أنه قال “نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن لحوم الحمر الأهلية، وأذن في لحوم الخيل يوم خيبر” ولأبي حنيفة قوله تعالى: {وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً} [النحل:8] خرج مخرج الامتنان والأكل من أعلى منافعها، والحكم لا يترك الامتنان بأعلى النعم ويمتن بأدناها، ولأنه آلة إرهاب العدو فيكره أكله احتراما له ولهذا يضرب له بسهم في الغنيمة، ولأن في إباحته تقليل آلة الجهاد، وحديث. جابر معارض بحديث خالد رضي الله عنه، والترجيح للمحرم. ثم قيل: الكراهة عنده كراهة تحريم. وقيل كراهة تنزيه. والأول أصح (الهداية، كتاب الذبائح، فصل فيما يحل أكله وما لايحل، دار احياء التراث العربي – بيروت – لبنان-4/352)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]