প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।
সম্মানিত মুফতি সাহেব,
আমাদেরকে একটি বিষয় জানিয়ে বাধিত করবেন, বিষয়টি আমি বিস্তারিত নিচে লিখে দিলাম।
জনাব পারভেজ সাহেব বাবলু সাহেবের মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়।
বিয়ের দুই মাসের মাথায় স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হলে পারভেজ সাহেব তার স্ত্রীর সাথে খারাপ আচরণ করতে থাকে এবং একপর্যায়ে তার শ্বশুরকে (তথা বাবলু সাহেবকে) এই কথা বলেন যে,
>>>আমি আপনার মেয়েকে আর রাখবোনা।
অতপর উভয়পক্ষ সমাধানের আলোচনা করতে থাকে।
এক পর্যায়ে জনাব পারভেজ সাহেব বাড়িতে আসলে তার মুরব্বিরা বিষয়টির সমাধানের জন্য বসে।
সেই বৈঠকে সকলের সামনে পারভেজ সাহেব বলে ওঠেন
☞”আমি তো অনেক আগেই ওকে তালাক দিয়েছি,এখন আরেকটা বিয়ে করতে এসেছি ”
(এবং মেয়ের ৩ টা মামুলি ভুল তুলে ধরে কারন হিসেবে)
মুরব্বিরা কারনগুলোকে হাস্যকর বলে প্রত্যাখ্যান করে দেয়, ফলে পারভেজ সাহেব অনুতপ্ত হয়ে বলেন যে, আমি আসলে যা বলেছি আর যা করেছি এগুলো ভুল ছিল,আমি সংসার করতে চাই।
মুরব্বিরা বাবলু সাহেবের মেয়ের সাথে মাফ চাওয়ানোর মাধ্যমে উভয়কে মিলিয়ে দেয় এবং তারা এখন সংসার শুরু করছে।
আমার জানার বিষয় হল
১- পারভেজ সাহেবের বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট আছে কিনা?
২- যদি তালাক হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে কয় তালাক হয়েছে? এবং
৩-যদি তারা সংসার করতে চায় তালে বৈধ সুরত কি?
৪-এখন তাদের একত্রে থাকাটা বৈধ হচ্ছে কিনা?
উল্লেখ্য :একজনে বলেছেন যে,যেহেতু তালাকের কথা মেয়েকে সরাসরি বলেনি তাই তালাক হবেনা,
এবং কাগজ কলমে তো তালাক দেয়নি তাই তালাক হবেনা,এবং ছেলে যেহেতু বিষয়টার ভুল বুঝেছে,তাই তালাক হয়নি,
আমরা জানতে চাই,
৫-কাগজ কলমে তালাক না দিলে কি তালাক হয়না?
৬-তালাক দেওয়ার বিষয়টি নিজ স্ত্রীকে না বললে কি তালাক হবেনা?
বিষয় গুলো জানিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন। জাযাকাল্লাহ।
আফজাল
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
‘আমি তো অনেক আগেই ওকে তালাক দিয়েছি’ কথাটি পূর্বের দেয়া তালাকের স্বীকারোক্তি। তাই যদি আগে তালাক দিয়ে না থাকে, তাহলে এটি বলার দ্বারা এক তালাকে রেজয়ী পতিত হয়েছে কাযাআন।
সুতরাং একথা বলার পর স্বামী মৌখিকভাবে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিলেই হবে। কিংবা স্বামী হিসেবে একসাথে বসবাস করার দ্বারাই সংসার করা জায়েজ হয়ে যাবে। বাকি পরবর্তীতে স্বামী আর দুই তালাকের মালিক থাকবে।
আর যদি ইতোপূর্বে তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে স্বামীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, সে কয় তালাক দিয়েছে? যতো তালাক দিয়েছে ততো তালাকই পতিত হয়েছে। যদি তিন তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে আর উক্ত স্ত্রীর সাথে ‘হালালায়ে শরইয়্যাহ’ ছাড়া ঘরসংসার করা জায়েজ হবে না।
যদি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকে, তাহলে বর্তমানের ‘আমিতো অনেক আগেই ওকে তালাক দিয়েছি’ কথাটি পূর্বের তালাকের স্বীকারোক্তি হিসেবে নতুন করে কোন তালাক হবে না। বাকি পূর্বের তালাকই তালাকে রেজয়ী হিসেবে কার্যকর থাকবে।
সেই হিসেবে এখন মৌখিক বা শারিরীকভাবে রুজু করে নিলেই সংসার করতে পারবে।
আর কাগজে কলমে তালাক না দিলে তালাক হয় না, কিংবা স্ত্রীকে না জানালে তালাক হয় না এসব অজ্ঞতাসূচক কথা। এগুলোর কোন শরয়ী ভিত্তি নেই।
ولو أقر بالطلاق كاذبا أو هازلا وقع قضاء لا ديانة (رد المحتار، زكريا-4/440، كرتاشى-3/236)
ولو أقر بالطلاق وهو كاذب وقع فى القضاء…….. إذا قال: أردت به الخبر عن الماضى كذبا، وإن لم يرد به الخبر عن الماضى، أو أراد به الكذب، أو الهزل وقع قضاء وديانة (البحر الرائق، زكريا-3/246، كرتاشى-3/246، سكب الأنهر على هامش مجمع الأنهر-2/8)
من أقر بطلاق سابق يكون ذلك إيقاعا منه فى الحال (المبسوط للسرخسى، بيروت-6/133، كويته-4/109)
وإذا طلق الرجل امرأته تطليقة رجعلية، أو تطليقتين فله أن يراجعها فى عدتها رضيت بذلك، أو لم ترض (هداية-2/394)
وإن كان الطلاق ثلاثا فى الحرة، وثنتين فى الأمة لم تحل له حتى تنكح زوجا غيرها نكاحا صحيحا ويدخل بها، ثم يطلقها أو يموت عنها (الفتاوى الهندية-1/473، جديد-1/535)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]