প্রশ্ন
আমাদের দেশে প্রায়ই কিরাত সম্মেলন হয়ে থাকে। এসব সম্মেলনে দেশের এবং বিদেশের বিখ্যাত কারীগণ আমন্ত্রিত হয়ে সুন্দর সূরে কিরাত পাঠ করে থাকে।
কারী সাহেবগণ যখন সুন্দর সূরে বা লাহানে কিরাত পড়তে থাকেন, তখন অনেককেই দেখা যায় যে, জোরে জোরে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উঠেন। আবার অনেকে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলেন। আবার অনেকেই স্লোগান দিতে শুরু করেন।
কিরাত পাঠকালে শোরগোল করা এবং জোরে চিৎকার দিয়ে আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ বলা বা স্লোগান দেয়া কতটুকু শরীয়তসম্মত? দয়া করে জানাবেন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
কুরআনের তিলাওয়াতের সময় তা শ্রবণ করা কর্তব্য। কথাবার্তা বলা, জোরে আওয়াজ করা, স্লোগান দেয়া জায়েজ নয়।
তবে তিলাওয়াত শেষ করে থামার পর তাকে উৎসাহ প্রদান করতে এবং কুরআনে কারীমের সৌন্দর্যে মোহিত হয়ে স্বাভাবিক স্বরে আল্লাহ আকবার বলা, বা সুবহানাল্লাহ বলাতে কোন সমস্যা নেই। অস্বাভাবিক আচরণ করা, স্লোগান দেয়া জায়েজ নয়।
আমাদের দেশে যেভাবে প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কুরআনের তিলাওয়াত করা হয়, আর কারীগণ শ্রোতা থেকে এর বাহ বাহ তালাশ করে, হাদীসে এমন কারীর তিলাওয়াত ও শ্রবণকারীর ব্যাপারে কঠিন হুশিয়ারী এসেছে।
কুরআন শ্রবণের আদব হলো মনযোগ সহকারে তা শ্রবণ করা।
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ [٧:٢٠٤]
আর যখন কোরআন পাঠ করা হয়, তখন তাতে কান লাগিয়ে রাখ এবং নিশ্চুপ থাক যাতে তোমাদের উপর রহমত হয়। [সূরা আ’রাফ-২০৪]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” اقْرَأْ عَلَىَّ الْقُرْآنَ ” . قَالَ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ قَالَ ” إِنِّي أَشْتَهِي أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي ” . فَقَرَأْتُ النِّسَاءَ حَتَّى إِذَا بَلَغْتُ (فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا) رَفَعْتُ رَأْسِي أَوْ غَمَزَنِي رَجُلٌ إِلَى جَنْبِي فَرَفَعْتُ رَأْسِي فَرَأَيْتُ دُمُوعَهُ تَسِيلُ
আবদুল্লাহ (ইবনু মাসউদ) (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, আমাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাও। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনাকে আমি পড়ে শোনাব, অথচ আপনার উপরেই তো তা নাযিল হয়েছে। তিনি বললেন, অন্য কারো নিকট থেকে শুনতে আমার ভাল লাগে। তখন আমি সূরা নিসা পাঠ করলাম যখন فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيدًا “যখন প্রত্যেক উম্মাত হতে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবে এবং তোমাকে ওদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য উপস্থিত করব তখন অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে? (নিসাঃ ৪১) এ আয়াত পৌঁছলাম, আমি মাথা তুললাম কিংবা আমার পাশের এক ব্যাক্তি আমাকে হাত দিয়ে চাপ দিলে আমি আমার মাখা তুললাম। দেখলাম, তাঁর অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭৪০]
رفع الصوت عند سماع القرآن والوعظ مكروه، وما يفعله الذين يدعون الوجد والمحبة لا أصل له، ويمنع الصوفية من رفع الصوت وتخريق الثياب (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، باب الرابع فى الصلاة-5\319)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” تَعَوَّذُوا بِاللَّهِ مِنْ جُبِّ الْحُزْنِ ” . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا جُبُّ الْحُزْنِ قَالَ ” وَادٍ فِي جَهَنَّمَ تَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ ” . قُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَنْ يَدْخُلُهُ قَالَ ” الْقُرَّاءُ الْمُرَاءُونَ بِأَعْمَالِهِمْ
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জুব্বুল হুজন থেকে তোমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। সাহাবীগণ বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, জুব্বুল হুজন কি? তিনি বললেনঃ জাহান্নামের একটি উপত্যকা। এ থেকে খোদ জাহান্নামও প্রতিদিন একশ’ বার পানাহ চায়। বলা হলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ, কে তাতে দাখেল হবে। তিনি বললেনঃ ঐসব ক্বারী যারা লোকদের দেখানোর জন্য আমল করে। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৩৮৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৫৬]
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: ” اقْرَءُوا الْقُرْآنَ بِلُحُونِ الْعَرَبِ وَأَصْوَاتِهَا، وَإِيَّاكُمْ وَلُحُونَ أَهْلِ الْفِسْقِ وَأَهْلِ الْكِتَابَيْنِ، فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ مِنْ بَعْدِي قَوْمٌ يُرَجِّعُونَ بِالْقُرْآنِ تَرْجِيعَ الْغِنَاءِ وَالرَّهَبَانِيَّةِ وَالنَّوْحِ لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، مَفْتُونَةٌ قُلُوبُهُمْ وَقُلُوبُ مَنْ يُعْجِبُهُمْ شَأْنُهُمْ
হুযায়ফাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কুরআন পড়ো ‘আরবদের স্বর ও সুরে। আর দূরে থাকো ফাসিক ও আহলে কিতাবদের পদ্ধতি হতে। আমার পর খুব তাড়াতাড়ি এমন কিছু লোকের আগমন ঘটবে, যারা কুরআন পাঠে গান, বৈরাগী সুর ও বিলাপের সুর ধরবে। কুরআন মাজীদ তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করে অন্তরের দিকে যাবে না। তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মোহগ্রস্ত। এভাবে তাদের অন্তরও মোহগ্রস্ত হবে যারা তাদের এ পদ্ধতির তিলাওয়াতকে পছন্দ করবে। [শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৪০৬,আলমু’জামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৭২২৩]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
ইমেইল– [email protected]