প্রচ্ছদ / তাবলীগ জামাত / টঙ্গীর মাঠে নামায পড়া বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম?

টঙ্গীর মাঠে নামায পড়া বাইতুল্লাহ ও মসজিদে নববীতে নামায পড়ার চেয়ে উত্তম?

প্রশ্ন

From: Amirul Islam Sakib
বিষয়ঃ দাওয়াত ও তাবলিগ

প্রশ্নঃ
আসসালামুআলাইকুম ভাই,
আমি এক চিল্লার সাথি। আমার এলাকার মিলাদ কিয়াম করে এমন একজন ভাই আমাকে এইসব প্রশ্ন করেছেন। তিনি আমাকে যত তারাতারি সম্ভব এগুলার উত্তর দিতে বলেছেন দয়া করে আমাকে তারাতারি এগুলার উত্তর দিলে ভালো হত।

সে বলেছে:
তাবলিগীদের কাছে টঙ্গীতে নামাজ পড়া মক্কা শরীফ মদীনা শরীফে নামায পড়া থেকেও উত্তম।
আস্তাগফিরুল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ।
কত জঘন্য মিথ্যাচার। ইতিহাসে এমন নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর কেউ করেছে কিনা সন্দেহ। “দাওয়াতে তাবলীগ” নামক এক তাবলিগী বই পড়তে গিয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। এমন মিথ্যাচার কিভাবে করা সম্ভব?

এই তাবলিগী লেখক উক্ত কিতাবের ৮০ পৃষ্ঠায় লিখেছে , মক্কা শরীফে এক রাকাত নামাজ পড়লে এক লক্ষ রাকাত নামাজের ছাওয়াব। মদীনা শরীফে নামাজ পড়লে পঞ্চাশ হাজার রাকাত রাকাতের ছাওয়াব। বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফে নামাজ পড়লে পঁচিশ হাজার রাকাত নামাজের ছাওয়াব।
কিন্ত বিশ্ব এস্তেমায় এসে নামাজ পড়লে উনপঞ্চাশ কোটি রাকাত নামাজের ছাওয়াব হয়। (লা’হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
(রেফারেন্স: দাওয়াতে তাবলীগ, পৃষ্ঠা ৮০, লেখক: আশরাফ আলী তালেবী, প্রকাশনা: আফতাবীয়া লাইব্রেরি)

জঘন্য মিথ্যাচারের এখানেই শেষ নয়। এই নিকৃষ্ট কথার দলীল দিয়েছে ইবনে মাজাহ শরীফ ও আবু দাউদের নাম ভাঙ্গিয়ে।

এদের সত্যায়ন দ্বারাই বোঝা গেলো এরাও এই আক্বীদা পোষন করে থাকে। তাদের কাছে টঙ্গীতে নামাজ পড়ার মূল্য মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ, বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ থেকেও বেশি। নাউযুবিল্লাহ।

এরপরও যারা এদের দলে যোগ দিবে তারা আদৌ মুসলামান থাকবে কিনা বিচারের ভার আপনাদের হাতে থাকলো।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

বিশ্ব ইজতিমায় এসে নামায পড়লে উনপঞ্চাশ কোটি রাকাতের সওয়াব হবে বলা বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘণ।

বাইতুল্লাহ, মসজিদে নববী এবং বাইতুল মুকাদ্দাসে নামায পড়ার ফযীলত সম্বলিত হাদীসগুলো বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত। সুতরাং অন্য কোন স্থানে নামায পড়ার সাথে এসবের তুলনা করা কোনভাবেই সমীচিন নয়।

তাই বাইতুল্লাহ, মসজিদে নববী ও বাইতুল মুকাদ্দাসে নামায পড়ার চেয়ে অন্য কোথাও নামায পড়াকে উত্তম বলা যাবে না।

তবে একথা ঠিক যে, আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে ইবাদত করা অনেক বড়  সওয়াবের কাজ।

দু’টি হাদীসের সমন্বয়ে উনপঞ্চাশ কোটির সওয়াবের পরিমাণও বের করা যায়।

যেমন

عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبع مائة ضعف

হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়। [সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬, মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪]

এখালে লক্ষ্য করুন। এক টাকা খরচ করলে এখানে সাত শত গুণ সওয়াব লেখার কথা এসেছে। এবার দ্বিতীয় হাদীসটি দেখুন-

عن سهل بن معاذ عن أبيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إن الذكر في سبيل الله تعالى يضعف فوق النفقة بسبع مائة ضعف قال يحيى في حديثه بسبع مائة ألف ضعف

হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ শত গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।

বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া তার হাদীসে বলেন:  সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫, মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ, হাদীস নং-১৫১৮৬, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯, জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮]

এবার উভয় হাদীসকে একত্র করুন। প্রথম হাদীস দ্বারা জানতে পারলাম। এক টাকা খরচে সওয়াব পাওয়া যায় ৭ শত গুণ। আর দ্বিতীয় হাদীসে জানতে পারলাম খরচের তুলনায় জিকিরের আমলে পাওয়া যায় ৭ লক্ষ সওয়াব বেশি। এর মানে হল, একটি আমল করলে প্রতি আমলে খরচ করলে যত পাওয়া যেত তারও সাত লক্ষ গুণ বেশি সওয়াব।

তাই এবার ৭ শতককে ৭ লক্ষ দিয়ে গুণ দিন। ৭০০×৭০০০০০=৪৯,০০,০০,০০০।

তাহলে কি বুঝা গেল? আল্লাহর রাস্তায় একটি আমল করা ঊনপঞ্চাশ কোটি আমল করার সওয়াবের সমতূল্য।

উল্লেখিত হাদীস দু’টি সনদ হিসেবে দুর্বল। কিন্তু জাল নয়। আর সকল গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণ একমত দুর্বল হাদীস ফযীলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।

সুতরাং এ হিসেবে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে আমল করলে উনপঞ্চাশ কোটি সওয়াব পাওয়ার আশা রাখা যায়।

কিন্তু টঙ্গির মাঠের নামাযকে বাইতুল্লাহ, মসজিদে নববী ও বাইতুল মুকাদ্দাসের নামাযের সাথে তুলনা করাটা বাইতুল্লাহর সম্মানহানীকর। তাই এভাবে বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *