প্রচ্ছদ / আধুনিক মাসায়েল / নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনতে ‘পজিটিভ থিংকিং’ কি নিষেধ?

নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনতে ‘পজিটিভ থিংকিং’ কি নিষেধ?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,

আমি মোস্তফা কামাল। একটি বিশেষ প্রশ্ন ছিল।

আমি “ল অব অ্যাট্রাকশন” কিংবা “পজিটিভ থিংকিং” নিয়ে আমার মনে থাকা প্রশ্নগুলোর উত্তর চাইছিলাম। সংক্ষেপে বলছি, “ল অব অ্যাট্রাকশন” এ বলা হয় আমরা যা চাই তা যদি বিশ্বাস করি যে আমি তা এরইমধ্যে পেয়ে গেছি, তাহলে আমরা তা পেয়ে যাব”

একটা উদাহরণ দিই__

মনে করুন আমি “ম্যাথ” এ ভীষণ কাঁচা। কিন্তু আমি চাইছি “ম্যাথ” এ ভালো করতে। আমি বিশ্বাস করা শুরু করলাম “আমি আল্লাহর রহমতে ম্যাথ অনেক ভালো পারি। যেকোন ম্যাথ আমি খুব সহজেই করে ফেলতে পারি।” আমি বিশ্বাস করা শুরু করলাম এ কথা।

এখানে যুক্তি দেওয়া হয় যে,

এভাবে বার বার বলতে থাকলে একসম্য় আমাদের “অবচেতন মন (সাব-কন্সিয়াস মাইন্ড)” বিশ্বাস করা শুরু করবে যে আমি আসলেই ম্যাথ ভালো পারি। তাতে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে অনেকগুণ। আর যখন কারও আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকে তখন তার কাছে কোন কাজই কঠিন মনে হয় না।

এখানে লক্ষ্যনীয় যে,

আমি যদিও ম্যাথ পারি না, তবুও আমি বারবার নিজেকে বলছি আমি ম্যাথ অনেক ভালো পারি, আমি যেকোন ম্যাথই সমাধান করতে পারি।  কিন্তু এ কথাটা আসলে মিথ্যে। কিন্তু তবুও আমি নিজেকে মিথ্যে কথা বলছি যে, আমি ম্যাথ খুব ভালো পারি। এখানে মিথ্যে শুধু নিজেকে বলছি, নিজের উন্নতি করার তাড়নায়। অন্য কাউকেও মিথ্যে বলছি না। অন্য কারও ক্ষতিও হচ্ছেনা এখানে।

শুধু নিজেকে বিশ্বাস করানো নয়, এর সাথে অবশ্যই চেষ্টা করতে হয় কাজটা সমাধান করে যাওয়ার। শুধু বিশ্বাস করলাম, আমি ম্যাথ পারি, কিন্তু উন্নতি করার কোন চেষ্টা করলাম না, এমন করলে আমি ম্যাথ এ কখনো উন্নতি করতে পারব না। এটা আমি জানি এবং মানি। কেউ যদি এভাবে বারবার নিজেকে বলে যায় যে সে সমস্ত ম্যাথ পারে (উদাহরণ এটা) এবং একইসাথে চেষ্টা করে যায় কাংক্ষিত ফলাফল লাভের জন্য। ইসলামে কি এক্ষেত্রে কোন নিষেধ আছে?

এটাকে আসলে “অ্যাফার্মেশন” বলে। যদি কেউ এভাবে অ্যাফার্মেশন করে যে, “আমি মহান আল্লাহর রহমতে সমস্ত ম্যাথ খুব সহজেই করতে পারি” – নিজের “অবচেতন মনকে” বিশ্বাস করানোর চেষ্টা করে যে, সে এখনই ম্যাথ এ অনেক ভালো (যদিও তা সত্যি নয়) এবং একইভাবে নিজেকে উন্নতির জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যায়, তবে কি ইসলামে অ্যাফার্মেশনে কোন বাধা আছে?

আমি অনেককে বলতে শুনেছি যে অ্যাফার্মেশন করা হারাম। অনেকে বলে কিছু নিয়ম মেনে চললে অ্যাফার্মেশন করা হালাল। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য করলে হালাল। তাই নিশ্চিত হতে চাইছিলাম যে, প্রকৃতপক্ষেই এখানে কোনভাবে মহান আল্লাহর প্রতি শিরক (আল্লাহ মাফ করুন) করা হয়ে যাচ্ছে কিনা? একটু জানাবেন। এই ম্যাসেজ এর উত্তরটি আমাকে একটু ব্যক্তিগত ভাবে জি-মেইলে পাঠালে উপকৃত হব।

একটি ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে চাইছি-

আমি বিশ্বাস করি, মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে সব ধরনের কাজ সমাধান করার শক্তি দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে শুধু মহান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চেষ্টা করে যেতে হয়। এখানে আমি শুধু এই চেষ্টা করছি যে, অবচেতন মনকে বিশ্বাস করিয়ে নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস প্রচন্ড বাড়িয়ে নেয়ার। কারণ আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ শুরু করলে কোন কাজকে কঠিন মনে হয় না। আর কাজটিকে তখন অনেক সহজ মনে হয় এবং খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায়।

আমি এখানে মোটেই এমন বিশ্বাস করছি না যে, আমার ব্রেন কিংবা ইউনিভার্স আমাকে এই জিনিসটা দিয়েছে।

তো আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য কি আমি অ্যাফার্মেশন করতে পারি? কিভাবে অ্যাফার্মেশন করলে ইসলামে কোনো সমস্যা হবে না? সঠিক পন্থাটি কি?

আমার ম্যাসেজটি লম্বা হয়ে গেছে এবং আমি নিশ্চিত নই আপনাকে পুরো ব্যাপারটি বোঝাতে পেরেছি কিনা-এজন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

আল্লাহর রহমাত হলে আমিও পারবো এমন দৃঢ়তার সাথে চেষ্টা ফিকির করাতে কোন দোষ নেই।

নিজের মনে আত্মবিশ্বাস আনয়নে এমন চিন্তা খারাপ নয়। গোনাহের কাজও নয়। তবে এক্ষেত্রে আত্মবিশ্বাসের সাথে সাথে চেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে, এবং আল্লাহর কাছে নিজের মেধা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য দুআ করতে হবে।

সেই সাথে ‘আমি পারি’ মনে করে আত্মগরীমা এবং অহংকবোধ করা থেকে নিজেকে সংযত রাখতে হবে।

فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ [٣:١٥٩]

অতঃপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা করুন আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন। [সূরা আলেইমরান-১৫৯]

وَقُل رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا [٢٠:١١٤]

বলুনঃ হে আমার পালনকর্তা,আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। [সূরা ত্বহা-১১৪]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *