প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
আমাদের এখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আজকের সেহরির শেষ সময় 04:08 মিনিটে আর আযানের সময় 04:13 মিনিটে । মুয়াজ্জিন সাহেব সেহরীর সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে আযান দিয়েছে অর্থাৎ 04:08 মিনিটে । আর মুসল্লীরা 04:11 এর সময় সুন্নত নামাজ শুরু করেছে । এখন আমার প্রশ্ন হল উক্ত সময়ে আযান দেওয়া কি সহিহ হয়েছে । এবং মুসল্লীরা যে সুন্নাত পড়েছে সে সুন্নত নামাজ কি হয়েছে ?
দয়া করে উত্তর দিলে উপকৃত হব ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথমে জেনে নিতে হবে যে, সময় হবার আগে আজান দিলে বা সুন্নত পড়লে তা শুদ্ধ হয় না।
দ্বিতীয় বিষয় হল, ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত সাহরীর শেষ সময় ও ফজরের সময় সংক্রান্ত বিষয়।
এ বিষয়ে বুঝতে হলে আমরা ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সাহরী ও ইফতারের সময়সূচীর ক্যালেন্ডারের বক্তব্যটি আগে দেখে নেয়া দরকার।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সাহরী ও ইফতারীর সময়সূচীর ক্যালেন্ডারের নিচে বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে লেখা আছে যে,
“সাহরীর শেষ সময় সতর্কতামূলকভাবে সুব্হি সাদিকের ৩ মিনিট পূর্বে ধরা হয়েছে এবং ফজরের ওয়াক্তের শুরু সুব্হি সাদিকের ৩ মিনিট পর রাখা হয়েছে। অতএব, সাহরীর সতর্কতামূলক শেষ সময়ের ৬ মিনিট পর ফজরের আযান দিতে হবে। সূর্যাস্তের পর সতর্কতামূলকভাবে ৩ মিনিট বাড়িয়ে ইফতারের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে”।
সুতরাং বুঝা গেল যে, ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ক্যালেন্ডার অনুপাতে সাহরীর শেষ সময় মানেই সুবহে সাদিক বা ফজরের সময় শুরু হওয়া নয়। বরং আরো তিন মিনিট পর ফজরের সময় শুরু হয়।
যেমন প্রশ্নোক্ত বক্তব্য অনুপাতে যদিও ক্যালেন্ডারে লেখা যে, ৪টা ৮ মিনিটে সাহরীর শেষ সময় বা সুবহে সাদিক। কিন্তু আসলে সাহরীর শেষ সময় বা সুবহে সাদিক হল ৪টা ১১ মিনিটে।
সতর্কতাস্বরূপ ক্যালেন্ডারে ৪টা ৮ লেখা হয়েছে। বিষয়টি ক্যালেন্ডারের নিচে কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করে দিয়ে তাদের যথার্থ দায়িত্ব পালন করেছেন।
সুতরাং ৪টা ৮ মিনিটে ফজরের আজান দিলে সময় হবার আগেই আজান হয়ে যাচ্ছে। তাই আজানটি পুনরায় দেয়া আবশ্যক।
আর ৪টা ১১ মিনিটে যারা সুন্নত পড়েছেন, তারা ফজরের সময় হবার পরই সুন্নত শুরু করেছেন। সুতরাং তাদের সুন্নতটি আদায় হয়ে যাবে। পুনরায় পড়তে হবে না।
কারণ, যদিও ফাউন্ডেশনের ক্যালেন্ডার অনুপাতে তখনো ফজরের সময় হয়নি, কিন্তু তারা নিচে উদ্ধৃত করে দিয়েছেন যে, আসলে ফজরের সময় হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ সতর্কতা হিসেবে সময়কে বাড়িয়ে দিয়ে লিখেছেন।
সারকথা হল, আজান শুদ্ধ হয়নি, সময়ের আগে দেবার কারণে। তবে সুন্নত শুদ্ধ হয়েছে সময়মত হবার কারণে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ بِلَالًا أَذَّنَ قَبْلَ طُلُوعِ الْفَجْرِ، فَأَمَرَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَرْجِعَ
হযরত ইবনে উমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় হযরত বেলাল রাঃ একদা ফজরের সময় হবার আগেই আজান দিলেন। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় আজান দিতে আদেশ করলেন। [সুনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৫৩২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৮৬৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৯৫৪]
(وَإِنْ أَذَّنَ قَبْلَ دُخُولِ الْوَقْتِ لَمْ يُجْزِهِ وَيُعِيدُهُ فِي الْوَقْتِ) لِأَنَّ الْمَقْصُودَ مِنْ الْأَذَانِ إعْلَامُ النَّاسِ بِدُخُولِ الْوَقْتِ فَقَبْلَ الْوَقْتِ يَكُونُ تَجْهِيلًا لَا إعْلَامًا وَلِأَنَّ الْمُؤَذِّنَ مُؤْتَمَنٌ قَالَ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – «الْإِمَامُ ضَامِنٌ وَالْمُؤَذِّنُ مُؤْتَمَنٌ اللَّهُمَّ أَرْشِدْ الْأَئِمَّةَ وَاغْفِرْ لِلْمُؤَذِّنِينَ» وَفِي الْأَذَانِ قَبْلَ الْوَقْتِ إظْهَارُ الْخِيَانَةِ فِيمَا ائْتُمِنَ فِيهِ وَلَوْ جَازَ الْأَذَانُ قَبْلَ الْوَقْتِ لَأَذَّنَ عِنْدَ الصُّبْحِ خَمْسَ مَرَّاتٍ لِخَمْسِ صَلَوَاتٍ وَذَلِكَ لَا يُجَوِّزُهُ أَحَدٌ (المبسوط للسرخسى-1/134)
عَنْ بِلَالٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهُ: «لَا تُؤَذِّنْ حَتَّى يَسْتَبِينَ لَكَ الْفَجْرُ هَكَذَا» وَمَدَّ يَدَيْهِ عَرْضًا، (سنن ابى داود، رقم الحديث-1171)
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا [٤:١٠٣
নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর ফরয নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। {সূরা নিসা-১০৩}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক ও প্রধান মুফতী – তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
ইমেইল[email protected]