প্রচ্ছদ / আজান ও ইকামত / করোনা শংকায় আজানের শব্দ পরিবর্তন এবং মসজিদে জামাত তরকের হুকুম কী?

করোনা শংকায় আজানের শব্দ পরিবর্তন এবং মসজিদে জামাত তরকের হুকুম কী?

প্রশ্ন

আসসালামু আলাইকুম,

হযরত, আযানের বাক্য পরিবর্তন করে কেউ কি ইচ্ছামত বাক্য বলে আযান দিতে পারবে? সাহাবা (রা.) আনহুমগন এবং তাবে-তাবেয়ীনগনের যুগে কোন মহামারীর কারনে মসজিদে নামাজ বন্ধ হয়েছে কিনা?

কুয়েত আযানের বাক্য পরিবর্তন করেছে এবং মসজিদে নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

Best regards, 

Md. Jakaria Mia 

Sub-Assistant Engineer.

North-West Power Generation Company Ltd. 

An Enterprise of Bangladesh Power Development Board.

Khulna 225 MW Power Plant, Goalpara, Khulna.

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

মসজিদে সম্পূর্ণরূপে নামায বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এর কোন নজীর ইসলামের ইতিহাসে নেই। তবে মহামারী ছড়িয়ে পড়ার আশংকা হলে, অসুস্থ্য ব্যক্তিদের মসজিদে আসতে বারণ করা হয়েছে।

সেই সাথে আজানের শেষে বা ‘হাইয়াআলাস সালাহ’ এর স্থলে মহামারী বা কোন বিপদের কারণে ‘ছল্লু ফী ফী রিহালিকুম’ তথা ‘তোমাদের ঘরে নামায পড়’ বলে আহবান করার প্রমাণ হাদীসে পাওয়া যায়।

সুতরাং যদি কোন এলাকায় করোনার মত মরণঘাতী রোগ মহামারী আকার ধারণ করে, তাহলে উক্ত এলাকার মসজিদে আজান শেষে ‘ছল্লু ফী বুয়ুতিকুম’ তথা ‘ঘরে নামায পড়ুন’ বলে মুআজ্জিন ঘোষণা দিতে পারবে।

আর অসুস্থ্য বা অসুস্থ্য হবার আশংকায় মসজিদে গমণ না করে বাড়িতে নামায পড়বে। মসজিদে গমণ করবে না।

তবে সুস্থ্য ও সবল ব্যক্তিদের জন্য মসজিদ ত্যাগ করা উচিত হবে না। তবে অবশ্যই সতর্কতা কাম্য।

সতর্কতা বলতে উদ্দেশ্য, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। বারবার সাবান দিয়ে হাত ধৌত করা। অন্যের স্পর্শ এড়িয়ে  চলা। নাকে মুখে হাত না দেয়া। মাস্ক ব্যবহার করা ইত্যাদি।

অসুস্থ্য উটকে সুস্থ্য উটের কাছে নিতে নিষেধ করা হয়েছেঃ-

أَبَا سَلَمَةَ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، يُحَدِّثُ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ»

আবূ সালামা ইবনু আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অসুস্থ উটপালের মালিক (অসুস্থ উটগুলিকে) সুস্থ উটপালের মালিকের (উটের) কাছে আনবে না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২২২১, ৫৫৯৭]

মহামারি ছড়িয়ে পড়া এলাকায় প্রবেশ করতে বা উক্ত এলাকা থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছেঃ-

سَعْدًا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا كَانَ الطَّاعُونُ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ لَيْسَ بِهَا، فَلَا تَدْخُلُوهَا، وَإِذَا كَانَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا، فَلَا تَخْرُجُوا مِنْهَا “

হযরত সা’দ বি আবী ওয়াক্কাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন প্লেগ রোগ কোন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, আর তুমি উক্ত এলাকায় না থাকো, তাহলে সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। আর যে এলাকায় তা ছড়ায় তুমি যদি উক্ত এলাকায় থাকো, তাহলে সেখান থেকে বের হয়ো না। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৮২৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১১৯৬, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৭০৪০]

সংক্রামক রোগীকে জনসমাগমে না আসতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সতর্কতাঃ-

عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ»

আমর ইবনু শারীদ (রহঃ) সুত্রে তার পিতা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাকীফ গোত্রীয় প্রতিনিধি দলের মাঝে একজন কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে (সংবাদ) পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বায়আত করে নিয়েছি। তুমি ফিরে যাও। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২২৩১, ৫৬২৮]

বিপদের সময় আজানের শব্দে ঘরে নামায পড়ার আহবানঃ-

نَافِعٌ، قَالَ: أَذَّنَ ابْنُ عُمَرَ فِي لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ بِضَجْنَانَ، ثُمَّ قَالَ: صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ، فَأَخْبَرَنَا أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْمُرُ مُؤَذِّنًا يُؤَذِّنُ، ثُمَّ يَقُولُ عَلَى إِثْرِهِ: «أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ» فِي اللَّيْلَةِ البَارِدَةِ، أَوِ المَطِيرَةِ فِي السَّفَرِ

নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রচন্ড এক শীতের রাতে ইবনু ‘উমার (রাযি.) যাজনান নামক স্থানে আযান দিলেন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করলেনঃ তোমরা আবাস স্থলেই সালাত আদায় করে নাও। পরে তিনি আমাদের জানালেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরের অবস্থায় বৃষ্টি অথবা তীব্র শীতের রাতে মুয়ায্যিনকে আযান দিতে বললেন এবং সাথে সাথে এ কথাও ঘোষণা করতে বললেন যে, তোমরা নিজ বাসস্থলে সালাত আদায় কর। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৩২, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৬৯৭]

فصل يسقط حضور الجماعة.

ظاهره يعم جماعة الجمعة والعيدين فيصلي الجمعة ظهرا وتسقط صلاة العيد ويحرر قوله: “منها مطر” في شرح المشكاة صح كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم زمن الحديبية فأصابنا مطر لم يبل أسفل نعالنا فنادى منادي رسول الله صلى الله عليه وسلم صلوا في رحالكم قوله: “وبرد شديد” (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-297

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী –তা’লীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *