প্রচ্ছদ / ইসলাহী/আত্মশুদ্ধি / তাসাওউফের বাইয়াত কি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়?

তাসাওউফের বাইয়াত কি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়?

প্রশ্ন

From: Siam khan
বিষয়ঃ তাসাউফ

প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম।  প্রশ্ন টা হল বাইয়াত নিয়ে। এক আলেম ববলেছেন আমাদের নবিজি  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলাম কবুল এর বাইয়াত নিতেন, রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে বাইয়াত নিতেন, নবি হিসেবে বাইয়াত নিতেন। তার ইন্তেকাল এর পর খুলাফায়ে রাশেদিন খলিফা হিসেবে বাইয়াত নিতেন। এছারা তারা কখন কাওকে বাইয়াত করেন নি। সুন্নাহ এ বলা আছে আলেম উলামা দের সহবত নিতে। তাসাওফ এর বাইয়াত কোনো সাহাবি করছে এমন দলিল নাই। তাই আমরা আলেম দের সহবত নিব, তাদের দিয়ে তাযকিয়া করাব। এগুলা সুন্নাহ সম্মত।  কিন্তু প্রচলিত বাইয়াত তা হুবুহু সুন্নাত না।  তার এই কথা গুলা কি ভুল??? বিস্তারিত দলিল দিয়ে উত্তর আশা করি হুযুর এর কাছে। এমন কি কোনো দলিল আছে যে সাহাবারা এমন বাইয়াত করাতেন??? আমি কিন্তু তাসাউফ এর বিরুদ্ধতা করছি না, তাযকিয়া র বিরুদ্ধতা করছি না। শুধু প্রচলিত বাইয়াত নিয়ে কটকা আছে।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

তাসাওউফের বাইয়াত বলতে বুঝানো হয় যে, বর্তমান হক্কানী পীর মাশায়েখগণ কালিমায়ে শাহাদত পড়িয়ে তারপর বিভিন্ন গোনাহ না করার এবং সওয়াবের কাজ করার একটি অঙ্গীকার করান। এটাকেই মূলত তাসাওউফের বাইয়াত বলা হয়ে থাকে।

আর ইসলাম গ্রহণের বাইয়াত, জিহাদের বাইয়াত, রাষ্ট্রপ্রধানের বাইয়াত ইত্যাদি ছাড়াও আত্মশুদ্ধির জন্যও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণ থেকে বাইয়াত গ্রহণ করেছেন। যা নিরেট আত্মশুদ্ধির বাইয়াত। হাদীসের মাঝে এমনটি পরিস্কারই পাওয়া যায়।

সুতরাং তাসাওউফের বাইয়াতকে সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়, এমনটি বলার কোন সুযোগ নেই। বরং এ আয়াত অবশ্যই সুন্নাহ সম্মত।

حَدَّثَنِي الْحَبِيبُ الْأَمِينُ، أَمَّا هُوَ فَحَبِيبٌ إِلَيَّ، وَأَمَّا هُوَ عِنْدِي، فَأَمِينٌ عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ الْأَشْجَعِيُّ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» وَكُنَّا حَدِيثَ عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ؟» قَالَفَبَسَطْنَا أَيْدِيَنَا وَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَعَلَامَ نُبَايِعُكَ؟ قَالَ: «عَلَى أَنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَالصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ، وَتُطِيعُوا – وَأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيَّةً – وَلَا تَسْأَلُوا النَّاسَ شَيْئًا» فَلَقَدْ رَأَيْتُ بَعْضَ أُولَئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوْطُ أَحَدِهِمْ، فَمَا يَسْأَلُ أَحَدًا يُنَاوِلُهُ إِيَّاهُ

আউফ বিন মালিক আশজাঈ রাঃ বলেন, আমাদের সাত বা আট নয়জন লোকের উপস্থিতিতে রাসূল সাঃ বললেন, তোমরা কেন রাসূল সাঃ এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? অথচ আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত গ্রহণের সময় তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। তিনি আবার বললেন, তোমরা কেন রাসূল সাঃ এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ইতোপূর্বে বাইয়াত হয়েছি। তিনি পুনরায় বললেন, তোমরা কেন রাসূল সাঃ এর কাছে বাইয়াত হচ্ছো না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমরা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরাতো ইতোপূর্বে আপনার কাছে বাইয়াত গ্রহণ করেছি। এখন আবার আপনার কাছে কিসের বাইয়াত নিবো? তিনি বললেন, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় কর এবং আল্লাহর আনুগত্ব কর। তিনি আর একটি কথা বললেন চুপে চুপে। তা হল-লোকের কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমি দেখেছি, সেই বাইয়াত গ্রহণকারী দলের কারো কারো উটের পিঠে থাকা অবস্থায় হাত থেকে চাবুক পরে গেছে কিন্তু সে কাউকে তা তুলে দিতে অনুরোধ করেনি, বরং সে নিজেই নিচে নেমে তুলে নিয়েছে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১০৪৩}

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক ও প্রধান মুফতী – মা’হাদুত তালীম ওয়াল  বুহুসিল ইসলামী ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ফারূকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।

আরও জানুন

আট ভরি স্বর্নের উপর কতটুকু যাকাত আবশ্যক?

প্রশ্ন আচ্ছালামুয়ালাইকুম। মুহতারাম আমার একটা প্রশ্ন স্বর্ণের কত ভরি হলে যাকাত দিতে হবে। আর আমার …

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস