প্রশ্ন:
ডঃ জাকির নায়েকের ক্ষেত্রে আপনাদের মতামত জানতে চাচ্ছি। দয়া করে তার ব্যাপারে আপনাদের অবস্থান জানালে উপকৃত হব।
জবাব:
بسم الله الرحمن الرحيم
জাকির নায়েকের ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান হল- তুলনামুলক ধর্ম বিশ্লেষণের মাধ্যমে তিনি যে দ্বীন প্রচারের কাজ করছেন এটা খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা এটাকে স্বাগত জানাই। তিনি এর মাধ্যমে অনেক বড় দ্বীনী খিদমাত করছেন। সেই সাথে সুন্নাতের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ নিয়ে তার লেকচারগুলিও বেশ উপকারী ও বড় দ্বীনী খিদমাত। তিনি যেই বিষয়ে অভিজ্ঞ সেই বিষয় অনুযায়ী তার বিশ্লেষণ চমৎকার।
কিন্তু মাসআলা মাসায়েলের ক্ষেত্রে তার ব্যাখ্যা ও সমাধান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহীহ নয়। কারণ তিনিতো আর মুফতী নন। বা ইসলামী ফিক্বহ ও তার মূলনীতি সম্পর্কে একাডেমিক বা কোন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত নন, তাই তার এই ক্ষেত্রে ব্যাখ্যাগুলি শরয়ী মূলনীতি অনুযায়ী সঠিকতার মানদন্ডে উত্তীর্ণ হতে পারছে না।
আমাদেরই মূলত ভুল। আমরা কেন তার কাছে শরয়ী মাসায়েল জানতে চাই। শরয়ী মাসআলাতো বলবে বিজ্ঞ মুফতীয়ানে কিরাম। আমরা তার কাছে জানতে চাইব যে, বাইবেলে কি কি ভুল আছে, গীতা কেন ধর্মীয় গ্রন্থ নয় ইত্যাদী। কিন্তু আমরা কেন যাই তার কাছে রুকুতে কী পড়বে, হাত কোথায় বাঁধবে ইত্যাদী জিজ্ঞেস করতে? এগুলোতো ওর বিষয় নয়! তিনিতো একজন ডাক্তার। ডাক্তারী অনুযায়ী নবীজি সাঃ এর কোন সুন্নাতটি বিজ্ঞানসম্মত? এসব তার কাছে জিজ্ঞেস করার বিষয়। ভুলতো করছি আমরা।
এক বিষয়ের অভিজ্ঞের কাছে অন্য বিষয় সম্পর্কে জানতে চাওয়াটাইতো বোকামী। ডাক্তারের কাছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া কি বোকামি নয়? তেমনি ইঞ্জিনিয়ারের কাছে আইনের ব্যাখ্যা জানতে চাওয়াটা কি বোকামী নয়? তেমনি ডাক্তার জাকির নায়েকের কাছে শরয়ী বিধান জানতে চাওয়াটা চূড়ান্ত পর্যায়ের বোকামী। আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।
বিঃদ্রঃ
ডাক্তার জাকির নায়েক বর্তমান জমানার ভয়াবহ ফিতনা গায়রে মুকাল্লিদ তথা কথিত আহলে হাদীসদের প্রচারক।
খেয়াল করুন-বনী ইসরাঈলের মাঝে ছিল ৭২ ফিরক্বা। এর মাঝে ১টি ফিরক্বা ছিল জান্নাতী। আর ৭১ টি ফিরক্বা ছিল জাহান্নামী।
আর এই উম্মতের মাঝে হবে ৭৩টি ফিরক্বা। এর মাঝে ১টি ফিরক্বা হবে জান্নাতী আর ৭২টি ফিরক্বা হল জাহান্নামী।
নবী কারীম সাঃ ইরশাদ করেছেন-পূর্বের উম্মত যাই করেছে এই উম্মতও তাই করবে নাফরমানীর দিক থেকে। তথা ওরা যত পদ্ধতিতে নাফরমানী করেছে এই উম্মতও সেই পদ্ধতীতে নাফরমানী করবে। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করার ৭১টি পদ্ধতিওয়ালা বাতিল ফিরক্বা পূর্ব উম্মত থেকে গ্রহণ করবে এই উম্মত। তথা ৭১টি বাতিল ফিরক্বার মত ও পথ পূর্ব উম্মতের মত এই উম্মতেও থাকবে।
আর জান্নাতী ছিল পূর্ব উম্মতের ৭২ ফিরক্বার মাঝে একটি ফিরক্বা। সেটিও এই উম্মতে পূর্ব পদ্ধতি অনুযায়ী থাকবে। শুধু বাড়বে একটি বাতিল ফিরক্বা এই উম্মতে। যেই বাতিল ফিরক্বার কোন নজীর পূর্ব উম্মতের মাঝে ছিল না। সেই বর্ধিত বাতিল ফিরক্বাটি কারা? আল্লামা কুরতুবী রহঃ তার প্রণীত তাফসীরে কুরতুবীতে লিখেন-
. وقد قال بعض العلماء العارفين : هذه الفرقة التي زادت في فرق أمة محمد صلى الله عليه وسلم هم قوم يعادون العلماء ويبغضون الفقهاء ، ولم يكن ذلك قط في الأمم السالفة.( الجامع لأحكام القرآن
المؤلف : أبو عبد الله محمد بن أحمد بن أبي بكر بن فرح الأنصاري الخزرجي شمس الدين القرطبي (المتوفى : 671
যেই ফিরক্বাটি উম্মতে মুহাম্মদীদে বাড়বে তারা হল-ওলামাদের সাথে শত্রুতা করবে, আর ফুক্বাহাদের প্রতি রাখবে বিদ্বেষ। এই গ্রপটি পূর্ব উম্মতের মাঝে ছিল না। {তাফসীরে কুরতুবী, তাফসীর সূরাতুল আনআম}
এই উম্মতের মাঝে বর্ধিত বাতিল ফিরক্বাটি হল ফিক্বহ ও ফুক্বাহাদের দুশমন, তথা ইজতিহাদ ও মুজতাহিদদের দুশমন দল। কারণ পূর্ব উম্মতের মাঝে কেবল নবীর আনীত দ্বীনের উপর আমল করতে হত, নতুন করে নীতিমালার আলোকে কোন উদ্ভাবন করার কোন সুযোগ ছিল না। যেহেতু ইজতিহাদই ছিল না, তাই ইজতিহাদ ও মুজতাহিদ তথা ফিক্বহ ও ফক্বীহ অস্বিকারকারী কোন বাতিল ফিরক্বাও ছিল না। আর এই উম্মতে যেহেতু ফিক্বহ ও ফক্বীহ আছে, তথা ইজতিহাদ ও মুজতাহিদ আছে, তাই এর দুশমন ও আছে। এই উম্মতের বর্ধিত সেই বাতিল ফিরক্বাটি হল ফিক্বহ ও ফক্বীহদের সমালোচনাকারী, ইজতিহাদ ও মুজতাহিদীনদের দুশমন দল। ফিক্বহে হানাফী, ফিক্বহে শাফেয়ী, ফিক্বহে মালেকী, ফিক্বহে হাম্বলী অস্বিকারকারী দল হল এই উম্মতের বর্ধিত বাতিল ফিরক্বা।
মুরজিয়া, কাদরিয়া, জাবরিয়া, শিয়া, কাদিয়ানী, বেদআতি ইত্যাদী বাতিল ফিরক্বা এই উম্মতের বর্ধিত বাতিল ফিরক্বা নয়। পূর্ব থেকেই এই সব দলের নজীর আছে। কিন্তু ফক্বীহদের দুশমন বাতিল ফিরক্বার নজীর পূর্ব থেকে নেই। যেহেতু পূর্বে ফিক্বহ ও ফক্বীহই ছিল না।
আর ফিক্বহ ও ফুক্বাহাদের দুশমন, ওলামায়ে হক্কানীদের মুশরিক বলা দুশমন বর্তমান জমানায় হল এ কথিত আহলে হাদীস দল। তাই এ ভ্রান্ত দলের প্রচারক ডাঃ জাকির নায়েক থেকে সকলের সাবধান থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।