প্রশ্ন:
Gulshanur Rahman
আস সালামু আলাইকুম হযরত,
আমরা শুনেছি,হানাফী মাজহাবের অনেক সিদ্ধান্তই ইমাম আবু হানীফা (রাহ.) এর
মত থেকে ভিন্ন। এর কিছু উদাহরণ জানাতে পারবেন কি?
জাযাকাল্লাহু খাইরান,
মোঃ গুলশানুর রহমান
জবাব:
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার জানা কথাটি সঠিক। ফিক্বহে হানাফীর অনেক মাসআলায় ইমাম আবু হানীফার সাগরীদ ইমাম আবু ইউসুফ রহ., ইমাম মুহাম্মদ রহ. এবং ইমাম যুফার বা অন্যান্যদের মতের উপরও ফাতওয়ার অনেক নজীর রয়েছে। নিম্নে কয়েকটি উপমা উপস্থাপন করা হল।
ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতের উপর ফতোয়ার উপমা
১. ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং মুহাম্মদ রহ. এর মতে এক বিচারক যখন ফায়সার জন্য অন্য বিচারকের কাছে পত্র লিখে। তখন উক্ত পত্রে কি লিখা আছে তা পত্রবাহককে পড়ে শুনিয়ে তারপর তার সামনে সিলমহর মেরে হস্তান্তর করতে হবে। নতুবা এই পত্রটি বিচার কার্য সমাধার জন্য কার্যকরী হবেনা। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতে কেবল পত্র লিখে তা বাহককে না জানিয়েও তা অন্য বিচারকের কাছে প্রেরণ করলে এ দ্বারা বিচার কার্য পরিচালনা করা যাবে। এই মতের উপরই ফতোয়া। সুতরাং এখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. ও মুহাম্মদ রহ. এর মত আমলযোগ্য নয়। (হেদায়া-৩/১২৩-১২৪)
২. যখন কোন বোকা টাইপের স্বাক্ষ্য কাযীর মজলিসে স্বাক্ষ্য দিতে হাজির হয় তখন স্বাক্ষিকে বিচারক স্বাক্ষ্যের পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারবেনা। এটা জায়েজ নয় ইমাম আবু হানীফা রহ. ও মুহাম্মদ রহ. এর মতে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতে অবুঝ ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেয়া কেবল জায়েজই নয় উত্তমও। এই মতের উপরই ফতোয়া। (ফাতওয়ায়ে শামী-৮/৫৩)
ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর মতের উপর ফাতওয়ার উপমা
১. মিরাস তথা ত্যাজ্য সম্পত্তি বন্টনের প্রায় সকল মাসআলায় ইমাম মুহাম্মদ রহ এর বক্তব্যের উপর ফতোয়া।
২. ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে ওযুর পানি নাপাক। তাই এটি গায়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। আর ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন-অযুর পানি পাক। তবে এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যাবেনা। ফাতওয়া এই মতের উপর।
ইমাম যুফার রহ. এর মতের উপর ফাতওয়ার উপমা
১. যে অসুস্থ্য ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে পারেনা সে ব্যক্তি যেভাবে ইচ্ছে বসে নামায পড়তে পারবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ রহ. এর মতে। কিন্তু ইমাম যুফার রহ. এর মতে তাশাহুদের সুরতে বসে নামায পড়তে হবে। ফাতওয়া এই মতের উপর। (ফাতওয়ায়ে শামী-২/৫৬৫)
২. তিন ইমামের মতে বাড়ির আঙ্গিনা দেখার দ্বারা ক্রয় করার সময়ের দেখার হক সাকিত হয়ে যায়। কিন্তু ইমাম যুফার রহ. এর মতে বাড়ির আঙ্গিনা দেখার দ্বারা ভিতরাংশ দেখার হক সাকিত হয়না। এই মতে উপরই ফিক্বহে হানাফীর ফাতওয়া। (ফাতওয়ায়ে শামী-৭/১৫৮)
এরকম অসংখ উদাহরণ রয়েছে যেখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর বক্তব্যের উপর ফাতওয়া নয়।
ফিক্বহে হানাফী শুধু ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর বক্তব্য নির্ভর ফিক্বহ নয়। বরং একটি গবেষক দলের গবেষণার নাম। যাদের মূল শায়েখ হলেন ইমাম আজম আবু হানীফা রহঃ।
এক বিষয়ে সহীহ ও গায়রে সহীহ হাদীস থাকলে যেমন সহীহ হাদীস রেখে গায়রে সহীহ হাদীসের উপর আমল করা জায়েজ নয়।
তেমনি ফিক্বহের মাঝে মুফতাবিহী ও গায়রে মুফতাবিহী দু’টি বক্তব্য থাকলে গায়রে মুফতাবিহী মাসায়েলের উপর ফাতওয়া দেয়া জায়েজ নয়।
বিস্তারিত জানতে দেখুন-মুফতী সালমান মানসুরপুরী দাঃ বাঃ এর লিখা “ফাতওয়া নাওয়িসী কি রাহনুমা উসূল”।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।