প্রচ্ছদ / ঈমান ও আমল / আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং দ্বীনের প্রতি মুহাব্বত

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং দ্বীনের প্রতি মুহাব্বত

আল্লামা মনজূর নূমানী রহঃ

প্রিয় ভাই! যেমনিভাবে ইসলাম আমাদেরকে নামায-রোযার তালিম দেয়, সদাচার ও ন্যায় বিচারের শিক্ষা দেয়, তেমনি এ শিক্ষাও দেয় যে, দুনিয়ার সবকিছু থেকে এমনকি নিজের জান-মাল, ইজ্জত-সম্মান, পিতা-মাতা, বিবি-বাচ্চা সবকিছু থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং দ্বীনকে আমরা বেশি মুহাব্বত করবো। অর্থাৎ যদি এমন কঠিন মুহূর্ত আসে যে, দ্বীনের উপর চলতে গেলে নিজের জান-মাল-ইজ্জত-আব্রু শংকার মধ্যে পড়ে যায়, তবে সেই কঠিন সময়েও আল্লাহ ও রাসুলের তরীকার উপর অবিচল থাকবো। যারা নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করে অথচ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে এই পরিমাণ মুহাব্বত ও ভালোবাসা পোষণ করে না, তারা আসলে খাঁটি মুসলমান নয়, বরং তারা আল্লাহ পাকের ক্রোধে নিপতিত ও শাস্তির উপযুক্ত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,

قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
হে রাসূল! আপনি স্পষ্ট বলে দিন, যদি তোমাদের পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি, ভাইবেরাদর, স্ত্রীপরিজন, আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের কষ্টার্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য, যাতে মন্দাভাব দেখা দেয়ার ব্যাপারে তোমরা শংকিত থাক এবং তোমাদের পছন্দের ঘরবাড়িসমুহ ইত্যাদি যদি তোমাদের নিকট আল্লাহ ও তাঁর রাসুল এবং তাঁর দ্বীন কায়েমের পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করার চেও অধিক প্রিয় হয়ে থাকে, তবে তোমরা আল্লাহ তাআলার পরবর্তী নির্দেশের অপেক্ষায় থাকো। মনে রেখো, আল্লাহ তাআলা নাফরমানকে সুমতি দান করেন না। সূরা তওবা ৯/২৪

এই আয়াত দ্বারা বোঝাগেলো, যার কাছে দ্বীনের চেও তার আওলাদ-ফরজন্দ ও মালদৌলত অধিক গুরুত্বপূর্ণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টি এবং দ্বীনের খেদমত ও তরক্কির মোকাবেলায় এসবের উন্নতিই যার কাছে অগ্রগণ্য, তার মতো নাফরমান ও নাশোকর আর নেই। একটি প্রসিদ্ধ হাদীসে নবীজী ইরশাদ করেন,

ثَلاَثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاَوَةَ الإِيمَانِ: مَنْ كَانَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَمَنْ أَحَبَّ عَبْدًا لاَ يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَمَنْ يَكْرَهُ أَنْ يَعُودَ فِي الكُفْرِ، بَعْدَ إِذْ أَنْقَذَهُ اللَّهُ، مِنْهُ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُلْقَى فِي النَّارِ
যার ভিতর তিনটি গুণ থাকে, সে দ্বীনের মজা এবং ঈমানের স্বাদ লাভ করতে থাকে: এক. যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সবকিছু থেকে বেশি মুহাব্বত করে। দুই. যাকেই সে ভালোবাসে শুধু আল্লাহর জন্য ভালোবাসে। তিন. ঈমান আনার পর দ্বীন ছেড়ে কুফরে ফিরে যাওয়াকে সে এ পরিমাণ ভয়ংকর ও বীভৎস মনে করে, যে পরিমাণ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে মনে করে। সহীহ বোখারী, হাদীস নং ২১

বোঝাগেলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিকট খাঁটি মুসলমান সে, যার কাছে দ্বীনের মুহাব্বত দুনিয়ার সকল কিছুর চে বেশি। এমন কি ধর্মের প্রতি তার টান এত বেশি যে, বিধর্মী হয়ে যাওয়া তার নিকট আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার চেও অসম্ভব কঠিন, বর্বর ও ভীতিকর। এক হাদীসে নবীজী এরশাদ করেন,

لاَ يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ، حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমার ভালোবাসা তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তানসন্ততি এবং দুনিয়ার সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক হবে। সহীহ বোখারী, হাদীস নং ১৫

প্রিয় ভায়েরা! এরই নাম ঈমান। একজন ঈমানদার তো পুরোপুরিভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের জন্য নিবেদিত-প্রাণ হয়ে যাবে, সাহাবায়ে কেরামের মতো নিজেদের সকল চাওয়া-পাওয়াকে দ্বীনের পথে কোরবান করে দিবে। সংখ্যায় কম হলেও এমন মানুষ পৃথিবীতে আজও আছে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এমন মানুষ বানিয়ে দিন, এমন মানুষের সঙ্গী হওয়ার তাওফীক দিন, আমীন।

0Shares

আরও জানুন

মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেয়া কি জায়েজ?

প্রশ্ন মুসলমানদের জন্য হিন্দুদের মন্দির পাহারা দেয়া, পূজামণ্ডপ পাহারা দেয়া, তাদের মূর্তি বানাতে সহযোগিতা করা …