প্রশ্ন
From: Absar Ali
বিষয়ঃ কবরে আযান দেয়া।
প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম।
আমার প্রশ্নটা হল, কবরে আযান দেয়ার ব্যাপারে। বর্তমানে এটা নিয়ে খুব বিবাদ দেখা দিয়েছে। যদি উত্তরটা শরীয়ত সম্মত হয়, তাহলে তাড়াতাড়ি উত্তর দিবেন। প্লিজ।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
কবরে আজান দেয়ার কোন নির্দেশনা কুরআন বা হাদীসে আসেনি। তাই এটি একটি বিদআতী কর্ম। আর প্রতিটি বিদআত গোমরাহী। আর গোমরাহী জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
এ কারণে কবরে আযান দেবার বিদআত থেকে মুক্ত থাকা প্রতিটি মুমিনের জন্য আবশ্যক।
এখানে একটি যুক্তি পেশ করা হয় যে, কবরে মুনকার নকীরের প্রশ্নোত্তর করার সময় শয়তান এসে কবরবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে, তাই আজান দিয়ে সেই শয়তানকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
এটা আসলে কেবলি উর্বর মস্তিস্কের ফসল একটি খোড়া যুক্তি মাত্র। শয়তান বিভ্রান্ত চেষ্টা করলে এর সমাধান সবসময় আজান নয়। যদি হতো, তাহলে হাদীসের মাঝে এ বিষয়ে নির্দেশনা থাকতো। সাহাবাগণ ইন্তেকাল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা কবরে আজান দেবার নির্দেশ দিতেন।
যেহেতু এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা হাদীসে আসেনি। তাই এটি একটি বিদআতী কর্ম ছাড়া আর কিছু নয়।
শয়তান বিভ্রান্ত করে টয়লেটে প্রবেশ করলেও। শয়তান বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে স্ত্রী সহবাসের সময়ও।
তাই বলে টয়লেটে প্রবেশ করে বা স্ত্রী সহবাসের সময় আজান দেবার প্রচলন করতে হবে?
সুতরাং বুঝা গেল এটি একটি বিদআতী কাজ। যার স্বপক্ষে কুরআন ও হাদীসে কোন দলীল বিদ্যমান নেই। যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য কাজ।
তবে কবরবাসীর সওয়াল ও জওয়াব যেন সহজ হয়, এজন্য কুরআন পড়া, এবং দুআ করা যাবে।
لا يسن الأذان عند إدخال الميت فى قبره كما هو المعتاد الآن، وقد صرح ابن حجر فى فتاوى بأنه بدعة (رد المحتار، كتاب الصلاة، صلاة الجنازة، مطلب فى دفن الميت-3/141)
عن عائشة قالت: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من احدث فى امرنا ما ليس منه فهو رد (صحيح مسلم-2/77، رقم-1718)
عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ الْعَلَاءِ بْنِ اللَّجْلَاجِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ لِي أَبِي: ” يَا بُنَيَّ إِذَا أَنَا مُتُّ فَأَلْحِدْنِي، فَإِذَا وَضَعْتَنِي فِي لَحْدِي فَقُلْ: بِسْمِ اللهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللهِ، ثُمَّ سِنَّ عَلَيَّ الثَّرَى سِنًّا، ثُمَّ اقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِي بِفَاتِحَةِ الْبَقَرَةِ وَخَاتِمَتِهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ ذَلِكَ
হযরত আব্দুর রহমান বিন আলা বিন লাজলাজ, তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা আমাকে বলেছেন, হে বৎস! আমি যখন মারা যাবো, তখন আমার জন্য “লাহাদ” কবর খুড়বে। তারপর আমাকে যখন কবরে রাখবে তখন পড়বে “বিসমিল্লাহি ওয়াআলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ” তারপর আমার উপর মাটি ঢালবে। তারপর আমার মাথার পাশে সূরা বাকারার শুরু এবং শেষাংশ পড়বে। কেননা, আমি রাসূল সাঃ থেকে এমনটি বলতে শুনেছি। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-৪৫১, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৭০৬৮]
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ فَلَا تَحْبِسُوهُ، وَأَسْرِعُوا بِهِ إِلَى قَبْرِهِ، وَلْيُقْرَأْ عِنْدَ رَأْسِهِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، وَعِنْدَ رِجْلَيْهِ بِخَاتِمَةِ الْبَقَرَةِ فِي قَبْرِهِ
হযরত ইবনে উমর রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন ব্যক্তি মারা যায়, তখন তাকে আটকে রেখো না, বরং দ্রুত তাকে কবরস্ত কর। আর তার কবরের মাথার পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ফাতিহা এবং পায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা বাকারার শেষ অংশ তিলাওয়াত কর। [আলমুজামুল কাবীর লিততাবরানী, হাদীস নং-১৩৬১৩, শুয়াবুল ঈমান লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৮৮৫৪]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com