প্রশ্ন
আসসালামুয়ালাইকুম কেমন আছেন? আমার নাম আমিনা।
হুজুর আমার স্বামী বিয়ের পর থেকে আমাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন করতো একই সাথে ভালো ও বেসেছে। কিছু দিন যাবত আমাকে একটু বেশি মানসিক নির্যাতন করছে তাই আমিও আমার গার্ডিয়ান মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিভোর্স দিবো কিন্তু আমার স্বামী খুব কান্নাকাটি করছে পা ধরছে বলছে আমি ভালো হয়ে যাবো। কয়দিন হলো ভালোও হয়ে গেছে। তবে এর আগে ও সে বলেছে আমি ভালো হবো কিন্তু পরে আবার খারাপ হয়ে গেছে। আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স ও দিতে রাজি হচ্ছে না, আর আমাদের বিবাহর সময় কোনো শর্ত ও ছিল না যে আমি আমার স্বামী কে ডিভোর্স দিতে পারবো। সেক্ষেত্রে এখন আমার ডিভোর্স দিয়া কি জায়েয হবে ইসলামী মতে।
হুজুর মাসালায় কিতাব এর নাম পৃষ্ঠা উল্লেখ করলে উপকৃত হবো।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ডিভোর্স নেয়া কোন সমাধান নয়। ইসলাম কখনোই সংসার ভাঙ্গার পক্ষে নয়। স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটাতে পারলে শয়তান সবচে’ বেশি খুশি হয়।
তাই সামান্য রাগারাগিতে ডিভোর্সের মত কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া কখনোই সমীচিন নয়।পারিবারিকভাবে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করুন।
সব মানুষ সমান হয় না। দোষে গুণেই মানুষ। ডিভোর্স নিয়ে আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করলে আপনার দ্বিতীয় স্বামীও যে ভাল হবে, এরই বা কী গ্যারান্টি আছে?
তাই সংসার ভাঙ্গা কোন সমাধান নয়। মানুষটাকে বুঝিয়ে সমঝিয়ে, ভালবাসা দিয়ে ভাল করার চেষ্টা করুন। খারাপ মানুষকে ভাল মানুষ করে তোলার মাঝেই কৃতিত্ব।
হাদীসে স্ত্রী কর্তৃক অপ্রয়োজনীয় তালাক চাইতে কঠিনভাবে নিষেধাজ্ঞা আসছে।
عن ثوبان رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أيما امرأة سألت زوجها طلاقا فى غير مابأس فحرام عليها رائحة الجنة
হযরত সাউবান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মহিলা অহেতুক স্বামীর কাছে তালাক চায় তার জন্য জান্নাতের সুঘ্রাণ হারাম হয়ে যায়। [সুনানে আবু দাউদ-১/৩০৩, হাদীস নং-২২২৬, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৮৭, মুসনাদে আহমাদ-৫/২৭৭, মুসতাদরাকে হাকেম-২/২১৮, হাদীস নং-২৮০৯, সুনানে কুবরা বায়হাকী-৭/৩১৬, হাদীস নং-১৪৮৬০]
হ্যাঁ, যদি স্বামী ভাল হবার কোন সম্ভাবনাই না থাকে। স্ত্রীর উপর মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। তাহলে পারিবারিক বা সামাজিকভাবে চাপ সৃষ্টি করে তার কাছ থেকে তালাক নিয়ে নিন। অথবা টাকার বিনিময়ে তথা খোলা করে তালাক সম্পন্ন করে নিন।
أما سببه فالحاجة إلى الخلاص عند تباين الأخلاق وعروض البغضاء الموجبة عدم اقامة حدود الله (فتح القدير-3/443)
وَإِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا ۚ وَالصُّلْحُ خَيْرٌ ۗ وَأُحْضِرَتِ الْأَنفُسُ الشُّحَّ ۚ وَإِن تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا [٤:١٢٨]
যদি কোন নারী স্বীয় স্বামীর পক্ষ থেকে অসদাচরণ কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে পরস্পর কোন মীমাংসা করে নিলে তাদের উভয়ের কোন গোনাহ নাই। মীমাংসা উত্তম। মনের সামনে লোভ বিদ্যমান আছে। যদি তোমরা উত্তম কাজ কর এবং খোদাভীরু হও, তবে, আল্লাহ তোমাদের সব কাজের খবর রাখেন। [সূরা নিসা-১২৮]
إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٢:٢٢٩]
কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভয় হয় যে, তারা উভয়েই আল্লাহর নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই জালেম। [সূরা বাকারা-২২৯]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]