প্রশ্ন
হযরত
আসসালামু আলাইকুম
তারাবি ২০ না ৮ এ নিয়ে তর্ক বিতর্কে, একজন জানতে চেয়েছে ২০ রাকাত অন্যান্য হাদিসে আছে বেশ তবে বুখারি শরীফ থেকে সে দেখতে চায়।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তাকে প্রশ্ন করুন যে, বুখারীতে না থাকলে কী তিনি সেই মাসআলা মানবেন না?
বুখারীতে মাত্র নয় হাজার বিরাশিটি বর্ণনা এসেছে। এর মানে কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূর্ণ তেইশ বছরের নবুওয়াতের জীবনে বলা ও করা শরয়ী বিধানাবলী বুখারীতেই সীমাবদ্ধ?
এমন ধারণা করাতো হাদীস অস্বিকারেরই নামান্তর।
যদি বুখারীতেই সব হাদীস থাকে, তাহলে অন্যান্য হাদীসের কিতাব লেখারই বা কী দরকার ছিল?
বুখারী থাকার পরও ইমাম বুখারীর ছাত্র ইমাম মুসলিম আবার সহীহ মুসলিম লিখতে গেলেন কেন?
অন্যান্য হাদীসের কিতাব কেন লেখা হল?
হাদীসের বিশাল ভান্ডার সম্পর্কে অজ্ঞ উক্ত ভাইকে প্রশ্ন করুন যে, যদি বুখারীতেই সব মাসআলার সমাধান থেকে থাকে, তাহলে নামায সংক্রান্ত মাত্র দশটি মাসআলার সমাধান একটু বুখারী থেকে দেখাতে বলুনঃ
১
বুখারী থেকে দুই রাকাত নামাযের পূর্ণাঙ্গ তরীকা দেখান।
২
নামাযের সব ক’টি সুন্নাত বুখারী থেকে দেখান।
৩
নামাযের সব ক’টি ওয়াজিব বুখারী থেকে দেখান।
৪
নামাযের সব ক’টি মুস্তাহাব বুখারী থেকে দেখান।
৫
তাশাহুদের শব্দাবলী কী? তাশাহুদের শব্দাবলী বুখারী থেকে দেখান।
৬
ঈদের নামাযের পূর্ণাঙ্গ তরীকা বুখারী থেকে দেখান।
৭
জানাযা নামাযের পূর্ণাঙ্গ তরীকা বুখারী থেকে দেখান।
৮
কী শব্দে আজান দিবে? শব্দাবলী বুখারী থেকে দেখান।
৯
কী শব্দে ইকামত দিবে? শব্দাবলী বুখারী থেকে দেখান।
১০
ঈদের তাকবীর কয়টি হবে?বুখারী থেকে দেখান।
নামায সংক্রান্ত মাত্র দশটি প্রশ্ন করলাম। ঐ ভাইকে বলুন বুখারীতেই সব থাকলে উপরোক্ত দশটি মাসআলার সমাধান বুখারী থেকে দেখান। অন্য কোন কিতাব থেকে দেখানো যাবে না।
আসলে এমন সব উক্তি ও মন্তব্য হাদীস অস্বিকারকারীদের একই নতুন চালাকী।
বুখারী মুসলিম ছাড়াও সহীহ হাদীসের উপর অনেক হাদীস গ্রন্থ রচিত হয়েছে। বুখারী ও মুসলিমের মূলনীতি অনুপাতে যেসব হাদীস সহীহ। এমন হাদীস যা ইমাম বুখারী ও মুসলিম আনেননি। কিন্তু তা বুখারী ও মুসলিমে আনা হাদীসের মতই সহীহ। এমন হাদীস একত্র করে “মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন” নামে আলাদা কিতাবও রচিত হয়েছে। যা এক সুবিশাল কিতাব। যে কিতাবে আট হাজার আটশত তিনটি হাদীস রয়েছে। যার কোনটিই বুখারী মুসলিমে বর্ণিত হয়নি।
এসব হাদীসকে সহীহ হওয়া থেকে বের করে দেয়া পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কী’ হতে পারে?
ইমাম বুখারী রহঃ নিজেই বলেছেনঃ
فَقَدْ رُوِّينَا عَنِ الْبُخَارِيِّ أَنَّهُ قَالَ: ” مَا أَدْخَلْتُ فِي كِتَابِي (الْجَامِعِ) إِلَّا مَا صَحَّ، وَتَرَكْتُ مِنَ الصِّحَاحِ لِحَالِ الطُّولِ
ইমাম বুখারী রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ আমি আমার কিতাবে [সহীহ বুখারীতে] সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস আনিনি। কিন্তু আমি অনেক সহীহ হাদীস আমার কিতাবের কলেবর বড় হবার শংকায় বাদ দিয়েছি। [মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/১৯]
ইমাম মুসলিম বলেছেনঃ
وَرُوِّينَا عَنْ مُسْلِمٍ أَنَّهُ قَالَ: ” لَيْسَ كُلُّ شَيْءٍ عِنْدِي صَحِيحٌ وَضَعْتُهُ هَاهُنَا – يَعْنِي فِي كِتَابِهِ الصَّحِيحِ –
ইমাম মুসলিম থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেছেনঃ আমার কাছে “সহীহ” হিসেবে গণ্য সব হাদীসই আমার কিতাবে আনিনি। [মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/২০]
এ বিষয়ে ইবনুস সালাহ রহঃ এর বক্তব্যটি প্রণিধানযোগ্যঃ
وَقَدْ قَالَ الْبُخَارِيُّ: ” أَحْفَظُ مِائَةَ أَلْفِ حَدِيثٍ صَحِيحٍ، وَمِائَتَيْ أَلْفِ حَدِيثٍ غَيْرِ صَحِيحٍ “، وَجُمْلَةُ مَا فِي كِتَابِهِ الصَّحِيحِ سَبْعَةُ آلَافٍ وَمِائَتَانِ وَخَمْسَةٌ وَسَبْعُونَ حَدِيثًا بِالْأَحَادِيثِ الْمُتَكَرِّرَةِ. وَقَدْ قِيلَ: إِنَّهَا بِإِسْقَاطِ الْمُكَرَّرَةِ أَرْبَعَةُ آلَافِ حَدِيثٍ،
ইমাম বুখারী বলেছেনঃ আমার এক লাখ সহীহ হাদীস মুখস্ত। আর দুই লাখ গায়রে সহীহ হাদীস মুখস্ত।
অথচ সহীহ বুখারীতে তাকরার [এক বর্ণনা একাধিকবার উল্লেখকরণ]সহ মোট হাদীস সংখ্যা হল,সাত হাজার, দুইশত পঁচাত্তরটা। আর কেউ বলেছেনঃ তাকরার ছাড়া হাদীস সংখ্যা হল চার হাজার। [মুকাদ্দিমায়ে ইবনুস সালাহ-১/২০]
আর তালীক ও তাকরারসহ হাদীস সংখ্যা হল নয় হাজার বিরাশিটি।
এখন প্রশ্ন হল, ইমাম বুখারী রহঃ বলেছেন, তার সহীহ হাদীসই মুখস্ত ছিল এক লাখ। বুখারীতে উল্লেখ আছে মাত্র নয় হাজার। তাও তাকরারসহ। বাকি একান্নবই হাজার সহীহ হাদীস গেল কোথায়?
সুতরাং বুঝা গেল, যারা শুধু বুখারীর হাদীস হলেই মানার দাবী করেন, তারা মূলত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের সুবিশাল ভান্ডার অস্বিকারকারী। আল্লাহ তাআলা উক্ত ভাইকে হাদীস অস্বিকারের ভয়ানক মানসিকতা থেকে তওবা করার তৌফিক দান করুন।
তারাবীহ নামায বিশ রাকাত সংক্রান্ত দালিলীক লেখা ও ভিডিও দেখতে ক্লিক করুন
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা-জামিয়া ফারুকিয়া দক্ষিণ বনশ্রী ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]