প্রচ্ছদ / কুরআন ও হাদীসের ব্যাখ্যা / বিল্ডিং নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসের ব্যাখ্যা কি?

বিল্ডিং নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত হাদীসের ব্যাখ্যা কি?

প্রশ্ন

আমার নামঃ মোহাম্মদ রাইসুল হাসান ।

বাসাঃ ১৪ নং রোড, পতেঙ্গা, এয়ারপোর্ট , চট্টগ্রাম ।

পেশাঃ বিদেশী জাহাজী ওয়ালা ।

হুযুর, আসসালামুআলাইকুম । আল্লাহ পাক আপনাকে কেমন রাখছেন? আমি আপনার একজন ফ্যান । আমি আল্লাহর মেহেরবানীতে তাবলীগের সাথে কাজ করছি । ইদানিং কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় খুব ঘুরপাক খাচ্ছে । তার মধ্যে ১টা প্রশ্ন হলোঃ

বিল্ডিং বানানো জায়েজ আছে কি না ? বিভিন্ন হাদীস দ্বারা তো বিল্ডিং না বানানোর কথা বলা হয়েছে । তাহলে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বাংলাদেশের জনসংখ্যা যেভাবে বাড়তেছে তাতে বিল্ডিং না বানিয়ে তো কোন উপায় দেখছি না । এখন কী করা যায় ?

প্রাসাদ না বানানোর হাদীসঃ

রাসূল সাঃ একবার গোলাকার ছাদ বিশিষ্ট একটি প্রাসাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, এটা কে নির্মাণ করেছে? লোকেরা বলল, অমুক ব্যক্তি। তখন তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন মসজিদ ব্যতীত বাকী সব প্রাসাদগুলো তার মালিকের জন্য বিপদ এর কারণ হবে । {শুআবুল ঈমানঃ ১০৩০৩, আনাস ইবনে মালেক রাযিঃ}

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحمن

প্রয়োজনে বিল্ডিং বানানো জায়েজ। অযথা বিল্ডিং বানানো উচিত নয়। হাদীসে অপ্রয়োজনীয় বিল্ডিং বানাতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সাথে অহংকার ও লৌকিকতাবশতঃ বানানো বিল্ডিংয়ের সমালোচনা করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় বিল্ডিং বানাতে নিষেধ করা হয়নি। তাই যেখানে জনসংখ্যা বেশি, স্থান সংকুলান হয় না, সেসব স্থানে বিল্ডিং বানাতে কোন সমস্যা নেই।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، خَرَجَ فَرَأَى قُبَّةً مُشْرِفَةً فَقَالَ: «مَا هَذِهِ؟» قَالَ لَهُ أَصْحَابُهُ: هَذِهِ لِفُلَانٍ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ، قَالَ: فَسَكَتَ وَحَمَلَهَا فِي نَفْسِهِ حَتَّى إِذَا جَاءَ صَاحِبُهَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسَلِّمُ عَلَيْهِ فِي النَّاسِ أَعْرَضَ عَنْهُ، صَنَعَ ذَلِكَ مِرَارًا، حَتَّى عَرَفَ الرَّجُلُ الْغَضَبَ فِيهِ وَالْإِعْرَاضَ عَنْهُ، فَشَكَا ذَلِكَ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: وَاللَّهِ إِنِّي لَأُنْكِرُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالُوا: خَرَجَ فَرَأَى قُبَّتَكَ، قَالَ: فَرَجَعَ الرَّجُلُ إِلَى قُبَّتِهِ فَهَدَمَهَا حَتَّى سَوَّاهَا بِالْأَرْضِ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ فَلَمْ يَرَهَا، قَالَ: «مَا فَعَلَتِ الْقُبَّةُ؟» قَالُوا: شَكَا إِلَيْنَا صَاحِبُهَا إِعْرَاضَكَ عَنْهُ، فَأَخْبَرْنَاهُ، فَهَدَمَهَا، فَقَالَ: «أَمَا إِنَّ كُلَّ بِنَاءٍ وَبَالٌ عَلَى صَاحِبِهِ إِلَّا مَا لَا، إِلَّا مَا لَا» يَعْنِي مَا لَا بُدَّ مِنْهُ

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাঃ বের হলেন। পথিমধ্যে একটি উঁচু গম্বুজ দেখলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কার? সাহাবীগণ বললেন, আনসারী ওমুক ব্যক্তির। রাসূল সাঃ একথা শুনে চুপ রইলেন এবং বিষয়টি মনে রাখলেন। তারপর যখন ঐ ব্যক্তি [গম্বুজ নির্মাতা] রাসূল সাঃ এর কাছে এলেন তখন রাসূল সাঃ তাকে উপেক্ষা করলেন। এ ঘটনা কয়েকবার হল। অবশেষে সাহাবী বুঝে গেলেন নবীজী সাঃ তার উপর রাগাম্বিত এবং তাকে উপেক্ষা করছেন। সাহাবীটি অন্য সাহাবীদের কাছে রাসূল সাঃ এর বিরাগ হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, একদা রাসূল সাঃ তোমার ঘরের গম্বুজ দেখেছেন।  [সেই কারণেই তিনি রাগাম্বিত] তারপর সাহাবীটি স্বীয় গম্বুজের কাছে এলেন এবং তা ধ্বংস করে দিলেন। একদম মাটির সাথে ঘরটি মিশিয়ে দিলেন। তারপর একদা রাসূল সাঃ ঘর থেকে বের হয়ে উক্ত গম্বুজটি না দেখতে পেয়ে বললেন, এ গম্বুজের হল কি? সাহাবাগণ রাঃ বললেন, আপনার বিরাগতার বিষয়ে এ ঘরের মালিক জিজ্ঞাসা করলে আমরা কারণ জানিয়ে দেই। তারপর তিনি এ ঘর ধ্বংস করে দেন। একথা শুনে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, “প্রয়োজনে নির্মিত বিল্ডিং ছাড়া প্রতিটি বিল্ডিংই বিপদজনক। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৫২৩৭, শরহু মাশকিুল আসার, হাদীস নং-৯৫৬, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-১০২২১}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

মহিলাদের এনআইডি কার্ড করার জন্য পর পুরুষের সামনে ছবি তুলতে মুখ খোলার হুকুম কী?

প্রশ্ন আসসালামুআলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ৷ আহলে হক্ব মিডিয়া কর্তৃৃৃপক্ষ কে আসন্ন রমজানের শুভাচ্ছে রইল ৷ আমার প্রশ্নটা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *