প্রশ্ন
আচ্ছালামু আলাইকুম, আমি আরও একটি মাসআলা জানতে চাই।
সর্বনিন্ম মোহর ১০ দিরহাম কি স্বর্ণ মুদ্রা নাকি বর্তমানে প্রচলিত মুদ্রা অনুযায়ী দিতে হবে?
আর আপনি লিখেছেন সর্বনিম্ন মোহর হচ্ছে ৩০০ গ্রাম ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা বা এর সমতুল্য সম্পদ। কিন্তু শাইখ আমি আসলে বুঝতে পারছিনা এটা তোলা বা ভরির হিসেবে কত হবে?
যদিওবা আমি ছাত্র তবু আমি চাই বিয়ের দিনই মোহর আদায় করতে। দয়া করে আমার জন্য কত নির্ধারণ করলে উত্তম হবে জানাবেন। আর মোহরে ফাতেমী আদায়ের খুব ইচ্ছা থাকলেও প্রথমদিনই পারবোনা হয়তোবা, অথবা সম্পূর্ণ মোহর আদায়ের পূর্বে আমি আমার স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবোনা। এক্ষেত্রে আমাদের করনীয় কি?
আর দয়া করে বাংলাদেশী টাকায় সর্বনিম্ন মোহরের সম্ভাব্য একটি অংক প্রকাশ করবেন ইনশাআল্লাহ্ এতে আমাদের জন্য উপকার হয়।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
দিরহাম বলার উদ্দেশ্য হল, রৌপ্যমুদ্রা।
সর্বনিম্ন মোহর হচ্ছে বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে ৩০০ গ্রাম ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা নয়, বরং ৩০ [ত্রিশ] গ্রাম ৬১৮ মিলিগ্রাম।
টাইপিং মিশটেকের কারণে ৩০০ হয়ে গিয়েছিল।
আর তোলা হিসেবে ৩ তোলা, ৬১৮ মিলিগ্রাম রূপা। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৩/৬৫১]
এখানে শুধু পরিমাণ উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারমূল্য হিসেবে কত? তা লিখা হয়নি। কারণ বাজারমূল্য কিছুদিন পরপরই পরিবর্তন হয়। তাই আমরা একটি মূল্য লিখে দিলে পরবর্তীতে এ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে।
যেমন বর্তমানে ২০১৭সাল অনুপাতে আমরা একটি হিসেবে লিখে দিলাম।
কিন্তু এ লেখাটিতো সাইটে থেকে যাবে, পরবর্তী বছরে যদি এর মূল্য কমে বা বেড়ে যায়, তখন এ নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হতে পারে। এ কারণে আমরা সাধারণত টাকার পরিমাণ উল্লেখ করি না।
আর মোহরে ফাতেমী ১৩১তোলা ৩মাশা রূপা বা তার সমমূল্য।
গ্রাম হিসেবে দেড় কিলো, ৩০গ্রাম, ৯৯০মিলিগ্রাম রূপা। [ফাতাওয়া কাসিমীয়া-১৩/৬৫৩]
বর্তমান বাজারমূল্য জুয়েলারী দোকান থেকে নির্ণয় করে নিন।
পূর্ণ মোহর প্রদান করা ছাড়া স্ত্রীকে স্পর্শ করা যাবে না, এ ধারণা ঠিক নয়। স্ত্রী রাজি থাকলে অবশ্যই স্পর্শ করা যাবে।
আপনি আপনার সাধ্যানুপাতেই মোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করুন। এক্ষেত্রে শরীয়তের কোন বিধিনিষেধ নেই বা বাধ্যবাধকতাও নেই।
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪]
فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]
অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪]
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥]
তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫]
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٦٠:١٠]
তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল– [email protected]