প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আমাদের এক দ্বীনী বোন যার নাম নাজনীন আক্তার হ্যাপী। তিনি এক সময় সিনেমা জগতে কাজ করতেন। কয়েকটি আইটেম গানসহ বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছেন। সেই সাথে দু’একটি সিনেমায়ও কাজ করেছেন। যেসবে তিনি আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয় করেছেন।
কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তওবা করেছেন। একটি মহিলা মাদরাসায় পড়াশোনা করছেন। পর্দা মেনে চলছেন। পুরাপুরি দ্বীন মানার চেষ্টা করছেন। পূর্বের গোনাহের কারণে তিনি আল্লাহর কাছে খাস দিলে তওবাও করেছেন। আগের পাপের জন্য তিনি অনেক অনুতপ্ত।
কিন্তু তার অভিনয় করা সিনেমা ইদানিং মুক্তি পাচ্ছে। তিনি চেষ্টা করেও এ সিনেমা বন্ধ করতে পারছেন না।
যা আমরা তার ফেইসবুক পেইজের পোষ্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
এখন আমার প্রশ্ন হল, এমন কোন গোনাহ যদি হয়, যা ব্যক্তি প্রথমে চালু করেছে। এখন তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। চলতেই থাকবে। মানুষ অবিরত এসবের মাধ্যমে গোনাহ করতেই থাকবে। এখন উক্ত ব্যক্তি তা থেকে তওবা করলেই কি পাপমুক্ত হয়ে যাবে?
আমি শুনেছি যে, কোন ব্যক্তি কোন গোনাহের পথ দেখালে, যত মানুষ পরবর্তীতে গোনাহ করবে, এর একটি ভাগ প্রথম ব্যক্তি পেতে থাকবে। যদি তা’ই হয়, তাহলে ভুক্তভোগী, অনুতপ্ত ব্যক্তি এখন কী করতে পারে? তার কি ক্ষমা পাবার কোন পথ নেই?
প্রশ্নকর্তা-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ، وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً، فَعُمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، كُتِبَ عَلَيْهِ مِثْلُ وِزْرِ مَنْ عَمِلَ بِهَا، وَلَا يَنْقُصُ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْءٌ
যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভাল রীতির প্রচলন করবে এবং পরবর্তীকালে সে অনুযায়ী আমল করা হয় তাহলে আমলকারীর সাওয়াবের সমপরিমাণ সাওয়াব তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হবে। এতে তাদের সাওয়াবের কোন রূপ ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন কুরীতির (মন্দ কাজের) প্রচলন করবে এবং তারপরে সে অনুযায়ী আমল করা হয় তাহলে ঐ আমলকারীর মন্দ ফলের সমপরিমাণ গুনাহ তার জন্য লিপিবদ্ধ করা হবে। এতে তাদের গুনাহ কিছুমাত্র হ্রাস হবে না।[সহীহ মুসলি, হাদীস নং-৬৭৪১, ইফা, হাদীস নং-৬৫৫৬]
উক্ত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, মন্দ কাজের প্রচলন করা খুবই ভয়ানক বিষয়। তা’ই এমন ভয়াবহ কাজ থেকে সকলের বিরত থাকা আবশ্যক।
বাকি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এমন মহান ও দয়ালু যে, কোন ব্যক্তি ভয়ংকর পাপ করার পরও যদি খাস দিলে তওবা করেন, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার পূর্বের সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেন। আর উক্ত ব্যক্তি এমন নিষ্পাপ হয়ে যায় যে, যেন সে উক্ত গোনাহ করেইনি।
তবে সাধ্যানুপাতে চেষ্টা করতে হবে যেন, উক্ত পাপ কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। তাই উক্ত দ্বীনী বোনের উচিত যথাসাধ্য উক্ত পাপ কর্মগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করা। এরপরও যদি বন্ধ করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তার কোন গোনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ [٦٤:١٦]
অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। [সূরা তাগাবুন-১৬]
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ [٢:٢٨٦]
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না। [সূরা বাকারা-২৮৬]
وَإِنِّي لَغَفَّارٌ لِّمَن تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهْتَدَىٰ [٢٠:٨٢]
আর যে তওবা করে,ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎপথে অটল থাকে,আমি তার প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল। [সূরা ত্বহা-৮২]
وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
মুমিনগণ,তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। [সূরা নূর-৩১]
হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ
গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন, যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস একথাই প্রমাণ করে যে, খালেস দিলে তওবা করলে এবং এ গোনাহ না করার প্রতি সতর্ক করার পরও পূর্বের কৃত কর্ম দ্বারা উদ্ধুদ্ধ হয়ে কেউ পাপ করলেও ব্যক্তি পাপী হবে না।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
ইমেইল- [email protected]