প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / হায়াতুল আম্বিয়া বিষয়ে ফাতহুল বারীতে কী আছে?

হায়াতুল আম্বিয়া বিষয়ে ফাতহুল বারীতে কী আছে?

প্রশ্ন

আমার প্রশ্ন হল, ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর ফাতহুল বারীতে হায়াতুন্নবী বিষয়ে কোন কথা আছে কি? এ বিষয়ে অধ্যায় পরিচ্ছেদের রেফারেন্সসহ উল্লেখ করে দিলে কৃতজ্ঞ হতাম।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم


وَقَدْ تَمَسَّكَ بِهِ مَنْ أَنْكَرَ الْحَيَاةَ فِي الْقَبْرِ وَأُجِيبَ عَنْ أَهْلِ السُّنَّةِ الْمُثْبِتِينَ لِذَلِكَ بِأَنَّ الْمُرَادَ نَفْيُ الْمَوْتِ اللَّازِمِ مِنَ الَّذِي أَثْبَتَهُ عُمَرُ بِقَوْلِهِ وَلِيَبْعَثَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا لِيَقْطَعَ أَيْدِي الْقَائِلِينَ بِمَوْتِهِ وَلَيْسَ فِيهِ تَعَرُّضٌ لِمَا يَقَعُ فِي الْبَرْزَخِ وَأَحْسَنُ مِنْ هَذَا الْجَوَابِ أَنْ يُقَالَ إِنَّ حَيَاتَهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْقَبْر لايعقبها مَوْتٌ بَلْ يَسْتَمِرُّ حَيًّا وَالْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ (فتح الباري، كتاب فضائل الصحابة، باب لو كنت متخذا خليلا لتخذت أبا بكر خليلا-7/29، دار المعرفة بيروت

“যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে জীবিত থাকাকে অস্বীকার করে তারা হযরত আবু বকর রা.-এর এ বক্তব্য দিয়ে দলিল পেশ করতে চায়-‘আল্লাহ আপনাকে দুইবার মৃত্যু দিবেন না’। আর আহলুস সুন্নাহ- যারা নবীর কবরে জীবিত থাকায় বিশ্বাস রাখেন, এদের পক্ষ থেকে এর জবাব দেয়া হয়েছে যে,হযরত আবু বকর রা.-এর বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল উমর রা.-এর ভুল ধারণার খণ্ডন করা। উমর রা. বলেছিলেন, ‘আল্লাহ তাআলা নবীজীকে আবার দুনিয়াতে জীবিত করবেন …’। এ কথার মধ্যে বারযাখে কী হবে এ বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। অবশ্য হযরত আবু বকর রা.-এর এ কথার সর্বোত্তম ব্যাখ্যা হল, কবরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে জীবন পেয়েছেন তারপর আর কোনো মৃত্যু আসবে না। বরং তিনি বরাবরই কবরে জীবিত থাকবেন, আর নবীগণ কবরে জীবিত। …।” {ফাতহুল বারী, আবু বকরের ফযীলত অধ্যায়, প্রকাশনী-দারুল মারিফাহ, বাইরূত-৭/২৯, হাদীস নং-৩৬৬৭, কিতাবুল ফাযায়িলিস সাহাবা, বাবু কাউলিন নাবীয়্যী লাউ কুনতু মুত্তাখিজান খালীলান-৭/৪৫, দারুল গাদ্দিল জাদীদ, কাহেরা} ভিন্ন এডিশন ৭/৩৩

শাইখুল ইসলাম ইবনে হাজার এ বক্তব্যে স্পষ্টই বলেছেন, আহলুস-সুন্নাহর বিশ্বাস হল, নবীগণ কবরে জীবিত।

আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা

১. নির্ধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার মাধ্যমে সকল নবীগণের দুনিয়ার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।

২. মৃত্যুর পর তাঁরা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বিশেষ জীবন লাভ করেছেন। তাই তাঁরা কবরে জীবিত। তাঁদের কবরের জীবনের ধরণ বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর বিশ্বাস হল:

ক. আলমে বারযাখে সাধারণ মুমিনের জীবনের চেয়ে শহীদদের জীবন পূর্ণাঙ্গ। আর শহীদের জীবন থেকে নবীদের জীবন আরো পূর্ণাঙ্গ ও উন্নততর।

খ. দুনিয়ার জীবনের সাথে তাঁদের কবরের জীবনের কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে।(১) যেমন কবরে তাঁদের দেহ মোবারক সুসংরক্ষিত রয়েছে। তাঁরা কবরে নামায আদায় করেন। যারা কবরের নিকট গিয়ে ছালাত ও সালাম পেশ করে তাঁরা তা সরাসরি শুনেন এবং যারা দূর থেকে সালাম পাঠান তা ফেরেশতা তাদের কাছে (কবরে) পৌঁছে দেন এবং তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রিযিক প্রাপ্ত হন।

গ. কবরের জীবনের ধরণ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহয় পাওয়া যায় না সে বিষয়ে নিরবতা অবলম্বন করি।

৩. আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ-ও বিশ্বাস করে যে, তাদের কবর-জীবন হুবহু দুনিয়ার জীবনের মত নয়। কবর থেকে স্বাভাবিকভাবে যথা ইচ্ছা গমনাগমন করা, মৃত্যু-পূর্ববর্তী সময়ের মত আদেশ নিষেধ ও পরামর্শ দেওয়া, কারো সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ, কথোপকথন ও মুসাফাহা করা ইত্যাদি বিষয়ে শরয়ী কোনো দলিল নেই। তবে যদি স্বপ্ন, কাশফ বা কারামাতের মাধ্যমে এমন কোনো কিছু ঘটা প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটি ভিন্ন বিষয়। হায়াতুল আম্বিয়ার আকীদার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *