প্রশ্ন
ফাযায়েলে সাদাকাতে হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহঃ এর নিকট রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ চিঠি লিখেছেন। যাতে তিনি বলেছেনঃ আমি কি, কিছুই নই, এবং আমি যাহা রহিয়াছি উহাও তুমি। আমি এবং তুমি স্বয়ং শিরকের ভিতরে শিরক। [ফাযায়েলে সাদাকাত-২/২২২]
উপরোক্ত অংশ তুলে ধরে লা-মাযহাবীরা বলতে চান যে, এখানে গঙ্গুহী সাহেব নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছেন। তিনি যা’ তা’ই আল্লাহ। নাউজুবিল্লাহ।
এ বিষয়ে আসল হাকীকত কী?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
বিষয়টি ভাল করে অনুধাবন করতে প্রথমে আমরা মূল উর্দুটি দেখবো। যা শায়েখ জাকারিয়া রহঃ মাকাতীবে রশিদীয়া এর রেফারেন্সে এনেছেন।
মাকাতীবে রশিদীয়া আমরা দেখি উল্লেখিত কিতাবে উক্ত চিঠির অংশে কী লিখা হয়েছে?
میں کیا ہوں کچہ نہیں ہوں، اور وہ جو میں ہے وہ تو ہے اور میں اور تو خود شرک در شرک ہے، استغفر الله استغفر الله استغفر الله، لا وحول ولا قوة الا بالله
যথার্থ অনুবাদঃ আমি কী? কিছুই নই। আর সেটি যা হল আমিত্ব [অহংকার, বড়ত্ব]। এটিতো আছে [আমার মাঝে]। আর আমিত্ব-বড়ত্ব [এর সাথে অন্তরে] আবার তুমি থাকাতো শিরকের মাঝে শিরক। আস্তাগফিরুল্লাহ! [মনের মাঝে আল্লাহর স্মরণের সাথে নিজের বড়ত্ব পুষে রাখার মত শিরক থেকে পানাহ চাই] আস্তাগফিরুল্লাহ! [মনের মাঝে আল্লাহর স্মরণের সাথে নিজের বড়ত্ব পুষে রাখার মত শিরক থেকে পানাহ চাই] আস্তাগফিরুল্লাহ! [মনের মাঝে আল্লাহর স্মরণের সাথে নিজের বড়ত্ব পুষে রাখার মত শিরক থেকে পানাহ চাই] লা-হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ। [মাকাতীবে রশীদিয়্যাহ-মাকতূব নং-১৩]
সমস্যা হয়ে গেছে। মাকতূবাতে রশিদীয়া থেকে শায়েখ জাকারিয়া রহঃ ফাযায়েলে ফাযায়েলে আমালের ফাযায়েলে সাদাকাতে নকল করেছেন। কিন্তু ফাযায়েলে সাদাকাতের কম্পোজকারী কাতেব ২টি ভুল করেছেন। যথা-
১
উর্দু ہے শব্দের স্থলে ہوں ঢুকিয়ে দিয়েছে ভুল করে। আর ফাযায়েলে আমালের বঙ্গানুবাদকারীরাও মূল কিতাব “মাকতূবাতে রশীদিয়া” এর মূল ইবারত না দেখেই অন্ধের মত উর্দু ফাযায়েলে আমালের ভুল ছাপার ہوں অনুবাদ করেছে। মূল কিতাব থেকে ہے যা ছিল যথার্থ। সেই অনুবাদ করেননি।
একারণেই এ ভুল বুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
২
মূল কিতাব মাকাতীবে রশীদিয়্যাতে میں এবং تو এর মাঝে اور তথা বাংলায় এবং আছে। কিন্তু ফাযায়েলে আমালের উর্দু কম্পোজকারী ভুলে সেটি সেই “এবং” শব্দটি ছেড়ে দিয়েছেন। আর ফাযায়েলে সাদাকাতের বঙ্গানুবাদকারীরাও মূল কিতাব না দেখে উর্দু ফাযায়েলে সাদাকাতে যা আছে, সেটিরই অনুবাদ করে দিয়েছেন। ফলে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল,
উর্দুতে বাংলা শব্দ “তুমি” বুঝাতে যেমন تو ব্যবহার করা হয়। আবার বাংলা শব্দ “সেটিতো” এর “তো” বুঝাতেও تو শব্দ ব্যবহার হয়।
এ শব্দ বিভ্রাটও অনুবাদে গলদ সমঝের একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যা আমরা ফাযায়েলে সাদাকাতে উদ্ধৃত চিঠিটি যেখান থেকে আনা হয়েছে সেই “মাকতূবাতে রশীদিয়া” কিতাব খুলে দু’টির ইবারত মিলালেই আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।
ব্যাখ্যাঃ
তাহলে আমরা কি বুঝলাম? শায়েখ জাকারিয়া রহঃ লিখেছেন। আমিত্ব-বড়ত্ব হল আল্লাহর সিফাত। যার মনের মাঝে আমিত্ব-বড়ত্ব আছে, তার অন্তরে আল্লাহ থাকতে পারে না। যদি কেউ বলে আমার অন্তরে আল্লাহও আছেন, আবার আমার অহংকার-বড়ত্বও আছে, তাহলে সেটি আল্লাহর সাথে শিরক হয়ে যাবে।
এরকম ধারণা করা থেকে শায়েখ জাকারিয়া রহঃ পানাহ চেয়ে তিনবার বললেন আস্তাগফিরুল্লাহ।
তাহলে উপরোক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে রশীদ আহমাদ গঙ্গুহী রহঃ নিজের চূড়ান্ত লিল্লাহিয়্যাত ও খোদাভীতি এবং পরিশুদ্ধ তাওহীদের কথা বলেছেন। সেখানে সেই ইবারত দেখিয়ে হযরতের উপর শিরক ও কুফরীর ফাতওয়া আরোপ কতবড় জঘন্যতা এবং ধৃষ্টতা ভাবা যায়?
মূল কিতাব না দেখে শুধু কারো রেফারেন্স ও কথায় কোন কিছু বলতে শুরু করা সমীচিন নয়।
অন্তত আহলে হাদীস নামধারী ব্যক্তি যারা কাউকে মানতে চান না, বরং নিজেই সব কিছু যাচাই করে মানার বাগাড়ম্বরতা করে থাকেন, তারা কিভাবে তাহকীক ছাড়াই এমন মিথ্যাচারে রত হলেন, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না।
আল্লাহ তাআলা আমাদের লা-মাযহাবী নামক ভ্রান্ত ফিরক্বার মিথ্যাচার ও প্রতারণা থেকে হিফাযত করুন।
অপবাদের কবলে ফাযায়েলে আমাল [পর্ব-১০] পড়ুন!
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।
মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com