প্রচ্ছদ / আকিদা-বিশ্বাস / রাশি রত্ন ও পাথর ব্যবহার করার শরয়ী বিধান কী?

রাশি রত্ন ও পাথর ব্যবহার করার শরয়ী বিধান কী?

প্রশ্ন

হুজুর,

ফেইসবুক এ ইদানীং একটি এড দেখছি
—————–
আমরা “Rashi Ratno রাশি রত্ন” কখনই বলিনা পাথর ব্যবহার করলে ভাগ্য বদলে যাবে, ব্যবসায় উন্নতি হবে, পরিবারে শান্তি ফেরত আসবে। মানুষের ভাগ্য, ব্যবসায় এবং পারিবারিক শান্তি নির্ভর করে মহান আল্লাহ্‌র ইচ্ছার উপর আর মানুষের নিজের চেষ্টার উপর। রাশিরত্ন পাথর শুধু মাত্র উছিলা। আল্লাহতালা পবিত্র কোরআন শরীফে পাথরকে তার নেয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছে। আল্লাহ্‌ ষষ্ঠ আসমান সৃষ্টি করেছে মূল্যবান পাথর দিয়ে। তাই ইসলাম ধর্মে এই মূল্যবান রাশিরত্ন পাথরের সম্মান ও মূল্য অপরিসীম। আল্লাহ্‌ চাইলে তার রহমতের নানা রকম পাথর মানুষের উপকারের উছিলাও হতে পারে। সেই বিশ্বাস থেকেই আমাদের এই প্রচেষ্টা, যাতে করে আপনারা প্রাকৃতিক আসল মূল্যবান পাথর ব্যবহার করতে পারেন। ভাগ্য বদলানোর কথা বলে বা বিপদ কেটে যাবে এই কথা বলে আমরা রাশিরত্ন পাথর বিক্রি করিনা। পাথর মানুষের ভাগ্য বদলাবে এই কথা বিশ্বাস করাও গুনাহ। সকল ক্ষমতা আল্লাহ্‌র।
————-
এ ব্যাপারে আপনার অভিমত জানতে চাচ্ছি

জাজাকাল্লাহ

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

উপরোক্ত বক্তব্যে কতগুলো ভুল তথ্য ও গলদ কথা বলা হয়েছে। যেমন-

ছষ্ঠ আসমান পাথর দ্বারা সৃষ্টি।

ইসলাম ধর্মে এই মূল্যবান রাশিরত্ন পাথরের সম্মান ও মূল্য অপরিসীম।

উপরোক্ত দু’টি কথাই মারাত্মক ভুল। এর কোন প্রমাণ নেই। আল্লাহ তাআলা কোন আসমান কি দিয়ে তৈরী করেছেন? এ সম্পর্কীয় কোন বিশুদ্ধ বর্ণনা পাওয়া যায় না। আলমু’জামুল আওসাত গ্রন্থে একটি ইসরাঈলী বর্ণনা এসেছে। যা মুহাদ্দিসীনে কেরাম প্রত্যাক্ষাত করে দিয়েছেন। তাই পাথর দ্বারা আসমান তৈরী বলা দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।

প্রসিদ্ধ মুফাসসির আবু হাইয়্যান আন্দুলুসী রাহ. বলেছেন-

ما ذكر من مواد هذه السموات … يحتاج إلى نقل صحيح.

অর্থাৎ আসমানসমূহের যে উপাদানের কথা উল্লেখ করা হয় তা প্রমাণিত হওয়ার জন্য সহীহ বর্ণনা থাকা আবশ্যক। -আলবাহরুল মুহীত ১০/২২১

দ্বিতীয় বলা হয়েছে ইসলাম ধর্মে নাকি রাশিরত্ন পাথরের সম্মান ও মূল্য অপরিসীম। নাউজুবিল্লাহ। এটি জলজ্যান্ত অসত্য কথা। এরও কোন প্রমাণ নেই। কোন জরপদার্থের আলাদা কোন মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব আল্লাহ তাআলার কাছে নেই। এসব বিশ্বাস ইসলামের মৌল আকিদার খেলাফ। হ্যাঁ, যদি এমন কোন বিশেষ বস্তু হয়, যা কুরআন বা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, যেমন হাজরে আসওয়াদ। এটিও একটি পাথর। কিন্তু এটিও সম্মানিত হয়েছে কেবলি রাসূল সাঃ এর হাদীসে সেটিকে সম্মানিত বলার কারণে।

এছাড়া আর কোন পাথরের আলাদা কোন মর্যাদা ও সম্মান আছে বলে কোন প্রমাণ নেই।

তাই এসব কথা মানুষকে প্রতারণায় ফেলার ফাঁদ ছাড়া আর কিছু নয়।

সুতরাং এসব রাশি চক্র আর পাথর দ্বারা উদ্দেশ্য সাধনের আকিদা রাখা জায়েজ নয়। এসব শিরকের পর্যায়ভূক্ত হবে।

তবে হ্যাঁ, যদি কোন পাথর এমন প্রমাণিত হয় যে, এটির কোন বিকিরণ ক্ষমতা থাকে, যা মানুষের শরীরে রাখলে বিশেষ কোন শারিরীক উপকার আসে, যা বৈজ্ঞানিকভাবে তথা বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রমাণিত হয়, তাহলে উসীলা হিসেবে ব্যবহার করাতে কোন সমস্যা নেই।

কিন্তু প্রমাণিত কোন পাথর ছাড়া এমনিতে রাশিচক্র ইত্যাদির উপর বিশ্বাস করে বৈজ্ঞানিকভাবে অপরিক্ষিত পাথরকে প্রতিক্রিয়াশীল মনে করা ও ব্যবহার করা বৈধ হবে না।

أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي بَعْدِي خَمْسًا: تَكْذِيبٌ بِالْقَدَرِ، وَتَصْدِيقٌ بِالنُّجُومِ

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার পরে আমার উম্মতের ব্যাপারে আমি ৫টি বিষয়ের আশংকা করছি, এর মাঝে রয়েছে তাকদীরে অবিশ্বাস এবং গ্রহ-নক্ষত্রের বিশ্বাস। [মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-৪১৩৫]

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *