প্রশ্ন
হযরত আমি হিলা বিবাহ সম্পর্কে কুরান সুন্নাহের আলোকে জানতে চাই। দয়া করে জানালে উপকৃত হব। আল্লাহ হযরত কে দীর্ঘজীবী করুন। আমিন।
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
আমাদের সমাজে প্রচলিত যে হিলা বিয়ে সেটি হল এই যে, কোন স্ত্রীলোকের তিন তালাক হয়ে গেলে, সেতো আর তার স্বামীর জন্য জায়েজ থাকে না। এক্ষেত্রে বিধান হল, যতক্ষণ না উক্ত মহিলাটির আরেক স্থানে বিবাহ হয়, তারপর উক্ত স্বামী তাকে তালাক দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত মহিলাটি জায়েজ হয় না। তাই একজন ব্যক্তির কাছে তালাক দেয়ার শর্তে মহিলাটিকে বিবাহ দেয়া হয়, তারপর উক্ত পুরুষ এক রাত উক্ত স্ত্রীর সাথে থেকে পরদিন তালাক দিয়ে দেয়। তারপর প্রথম স্বামী উক্ত মহিলাকে আবার বিয়ে করে থাকে। এই হল আমাদের সমাজে প্রচলিত হিল্লা বিয়ে।
এখানে মাসআলা দু’টি। যথা-
১
উপরোক্ত পদ্ধতিটি জায়েজ কি না?
২
উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রীলোকটির বিবাহ জায়েজ হয় কি না?
১ম বিষয়টির জবাব
উক্ত পদ্ধতির হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম। যারা হিল্লে বিয়ে করে, এবং যার জন্য করে উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ : لَعَنِ اللَّهُ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ وَالْمُحَلَّلَةَ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب النكاح، في الرجل يُطَلِّقُ امْرَأَتَهُ فَيَتَزَوَّجُهَا رَجُلٌ لِيُحِلَّهَا لَهُ، رقم الحديث-17364)
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হালালকারী, যার জন্য হালাল করা হল এবং যাকে করা হল, সবার উপর আল্লাহর অভিশাপ। {ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৩৬৪}
সুতরাং বুঝা গেল উপরোক্ত কর্মটি জায়েজ নয়। হারাম।
২য় প্রশ্নের জবাব
আরেকটি মাসআলা হল, হিল্লে করার দ্বারা প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রীলোকটি হালাল হয় কি না? একটি বিষয় হারাম হওয়া মানে উক্ত হারাম কাজের মাধ্যমে সংঘটিত কাজটি সঠিক হয়নি বিষয়টি এমন নয়। যেমন জিনা করা হারাম, তাই বলে কি জিনা করলে জিনা হয়নি? কাউকে হত্যা করা হারাম, তাই বলে কি হত্যা করলে সেটিকে হত্যা বলা হবে না?
তেমনি এভাবে হিল্লে করা হারাম, কিন্তু এভাবে হিল্লে করলেও উক্ত স্ত্রীলোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।
যা হাদীসটির শব্দ থেকেই পরিস্কার। হাদীসে লক্ষ্য করুন, শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে “হালালকারী”। যা পরিস্কার বলছে এর দ্বারা স্ত্রী লোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়। যদি হালালই না হয়, তাহলে হিল্লেকারী লোকটি হালালকারী হয় কিভাবে? আর স্ত্রীলোকটিকে হাদীসে বলা হচ্ছে হালালকৃত। যদি মহিলাটি উক্ত হিল্লের মাধ্যমে প্রথম স্বামীর জন্য হালালই না হয়, তাহলে সে হালালকৃত হয় কিভাবে?
একইভাবে প্রথম স্বামীর জন্য হাদীসে শব্দ ব্যবহৃত হল, “যার জন্য হালাল করা হয়”। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এটি হারাম পদ্ধতি হলেও এর দ্বারা স্ত্রীটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়। যদি হালালই না হতো, তাহলে হাদীসে যার জন্য হালাল করা হয় বলার কি অর্থ থাকে।
সুতরাং হাদীস দ্বারাই পরিস্কার বুঝা যায় যে, কাজটি হারাম হলেও এর দ্বারা উক্ত স্ত্রী লোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়। যদিও কাজটি অভিশাপযোগ্য এবং নিন্দনীয় ও বর্জনীয় কাজ।
পবিত্র কালামুল্লায়ে উক্ত বিষয়টি পরিস্কার এসেছে। দেখুন-
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। {সূরা বাকারা-২৩০}
সুতরাং বুঝা গেল হিল্লা করা হারাম কাজ। এটি যারা করে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ নিপতিত হয়। তবে এর দ্বারা স্ত্রী লোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
হারামে পন্থায় কখনোই মুক্তি, সুখ-শান্তি,সফলতা-বরকত নেই, দুই দিনের এই দুনিয়াতে ইচ্ছাকৃত ভাবে হিল্লার মত ঘৃণিত অভিশপ্ত ও খারপ কাজ করে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে সুখ-শান্তি, বরকত ও নাজাতের আশা করা বোকামী, আল্লাহ্ আমাদের এই রকম অভিশপ্ত ও জঘন্য ঘৃণিত কাজ থেকে হেফাজত করুন , আমীন !
আমাদের সমাজের প্রচলিত পদ্ধতি হারাম তাই? কিন্তু যদি স্বাভাবিকভাবে কোন ব্যক্তির স্ত্রীর সাথে তালাক হল,সেই স্ত্রী অন্য ব্যক্তিকে বিবাহ করে পুরোপুরি স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় সম্পর্ক স্থাপন করল(শারীরিক)। এরপরে আবার সেই লোকের সাথেও তালাক হল।অর্থাৎ এক রাতের জন্য সাজানো হল না। এরপরে আবার ঐ পূর্বের ব্যক্তিকে বিবাহ করল,তাহলে কি হালাল হবার পরেও অভিশপ্ত হবে?
না, তাহলে হারাম হবে না। আপনার বলা সুরতটিকেই পবিত্র কুরআনে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। জাযাকাল্লাহ।
জাযাকাল্লাহ