প্রচ্ছদ / তালাক/ডিভোর্স/হুরমত / স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে প্রদত্ব তালাক কি পতিত হয়?

স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে প্রদত্ব তালাক কি পতিত হয়?

প্রশ্ন

বিসমিল্লাহির রহমানীর রহীম

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারহমাতুল্লাহ

কি কি কারনে একজন নারী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারে ?

আমার  এক বোন তার প্রথম স্বামীর থেকে তালাক প্রাপ্ত হওয়ার পর ২য় বিবাহ করে। বিয়ের কয়েক মাস পর তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয় এবং এক পর্যায়ে তার দ্বিতীয় স্বামী তার ঘর থেকে বের হয়ে যায় বা বের হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।

উল্লেখ্য আমার বোন তার নিজের বাসায় পূর্বের স্বামীর বাচ্চাদের সহ থাকতেন এবং ২য় বিয়ের পর তার ২য় স্বামীও তার বাসাতেই থাকতেন। এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল তার ২য় বিয়ের সময় ২য় স্বামীর আর্থিক আবস্থা ভাল ছিল না, আমার বোনেরও অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে তেমন কোন দাবী ছিল না, সে তার আর্থিক দুরবস্থা সম্পর্কে জেনে শুনেই বিয়ে করেছিল। সে মুলত একজন দ্বীনদার লোকের সংস্পর্শে থাকতে চেয়েছিল এবং তার দ্বিতীয় স্বামীও দ্বীনি সহায়তার নিয়তেই তাকে বিয়ে করেছিল।

এদিকে বিয়ের পর এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হলে সে তার ২য় স্বামীকে প্রতি মাসে তাদের ( তাদের দুজনের ) খরচের টাকা দিতে বলে, তখন তার ২য় স্বামী তাকে বলে

“ যেহেতু শরিয়া মোতাবেক তোমার ভরণপোষণ আমার উপর ওয়াজিব তাই তুমি আমার গ্রামের বাড়ী গিয়ে থাক সেখানে তোমার ভরন পোষণের ব্যাবস্থা করা আছে,  আর যদি সেখানে যেতে না চেয়ে ১ম স্বামীর বাচ্চাদের নিয়ে থাকতে চাইলে আমি অনুমতি দিব, কিন্তু শর্ত হল নিজে শরীয়া খেলাফ কোন কাজ করতে পারবা না এবং  অন্যকারো শরীয়াখেলাফ কাজের তদারকি করতে পারবা না”। “ আর তুমি যদি ১ম স্বামীর বাচ্চাদের নিয়েই আলাদা থাক তাহলে যেদিন আমি তোমাদের জন্য পর্যাপ্ত টাকা-খরচ দিতে পারবো সেদিন তোমাদের সাথে থাকবো ( যেহেতু টাকার জন্যই দুর্ব্যবহার করে এক পর্যায়ে ঘর থেকে সরাসরি বের হয়ে যেতে বলা হয়- ২য় স্বামীর মতে) আর তার আগ পর্যন্ত আমার সাধ্য মত তোমার নিজের জন্য মাসে মাসে যথাসম্ভব খরচ পাঠানোর চেষ্টা করবো” ।

এখানে আরেক বিষয় হল বোনের ১ম স্বামী তাদের বিচ্ছেদের পর শুরু থেকেই তার বাচ্চাদের নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিল কিন্তু আমার বোন বাচ্চাদের দেয়নি এবং পাশা পাশি ১ম স্বামী বাচ্চাদের ভরন পোষণের জন্য খরচ দিয়ে আসতেছিল, তাই আমার বোন চেয়েছিল যত দিন সম্ভব তার ২য় বিয়ের খবর ১ম স্বামীর নিকট গোপন রাখবে যেন টাকা পাঠানো বন্ধ না করে, কিন্তু ১ম স্বামী আমার বোনের দ্বিতীয় বিয়ের কথা এক পর্যায়ে জানতে পেরে অনেক রাগারাগি করে এবং আমার বোনকে বলে যেহেতু তুমি ২য় বিয়ে করেছ তাইআমার বাচ্চাদের তোমার কাছে রাখার কোন অধিকার নাই তাই তোমার সামনে আমার পক্ষ থেকে এখন ২ টি পথ খোলা আছে  “হয় তুমি তোমার ২য় স্বামীকে তালাক দিয়ে শুধুমাত্র আমার বাচ্চাদের পালবা, না হয় আমার বাচ্চাদের আমার কাছে দিয়ে দিবা এবং আমি যত সম্পদ তোমাকে দিয়েছি তা আমার অথবা আমার বাচ্চাদের নামে লিখে দিবা,  অন্যথায়  আমি ওদের(বাচ্চাদের ) জন্য কোন টাকা-খরচ দিব না”।

এই পর্যায়ে এসে আমার বোন সিদ্ধান্ত নেয় ২য় স্বামীকে তালাক দিয়ে ১ম স্বামীর শর্ত মত বাচ্চাদের পালবে,  কিন্তু ২য় স্বামী তাকে বলে

“আমি তোমাকে তালাক দিব না আর তুমিও কোনভাবেই নিজের উপর নিজেকে তালাক দিয়ে আলাদা হতে পারবে না কারন আমি তোমাকে বিয়ের সময়/পরে এমন কোন ক্ষমতা দেই নায় এবং না আমি তোমার সাথে দুর্ব্যবহার-মারধোর করেছি, না আমি শারীরিক ভাবে অক্ষম এবং তোমার ভরন-পোষণের ব্যবস্থাও আমি আমার গ্রামের বাড়িতে করে রেখেছি । তুমি আমার বাড়িতে গিয়ে থাক আমি প্রতি মাসে তোমার সব ধরনের খোজ খবর নিব। কিন্তু তোমার বাসায় আপমান জনক ভাবে আমি থাকবো না। যেই দিন আমি  পর্যাপ্ত পরিমাণে টাকা আয় করতে পারব সেদিন আমি তোমার সব বাচ্চাদের সহ আমি একসাথে থাকবো  এবং তোমার কোন কাজ-জরুরত থাকলে আমাকে জানাবা আমি যথা সম্ভব চেষ্টা করবো তোমার জন্য”।

এর কিছুদিন পরে বোন তার দ্বিতীয় স্বামীকে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেয়,

কিন্তু তার ২য় স্বামী বলে

“এই ডিভোর্স লেটার সরকারের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পেলেও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় কারন আমি তাকেতালাক দেই নায় এবং শরীয়ত সম্মত এমন কোন ঘটনা ঘটেনি যে আমার স্ত্রী নিজের উপর নিজে তালাকদিবে”।

মুফতি সাহবের কাছে অনুরোধ এই ডিভোর্স হয়েছে কি না হয় নি ?

নিবেদক

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

ঢাকা

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

স্ত্রী তখনি নিজের উপর তালাক পতিত করতে পারে, যখন স্বামী স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার প্রদান করে থাকে। এছাড়া স্ত্রী ইচ্ছে করলেই নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার রাখে না।

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের আইন অনুপাতে বিয়ের সময় যে কাবিন নামা করা হয়ে থাকে, তাতে বেশ কিছু তথ্য সংযোজিত করা হয়ে থাকে। যার নিচে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ে স্বাক্ষর করতে হয়।

উক্ত সরকারি কাবিননামার ১৮ ও ১৯ একটি ধারা রয়েছে। যাতে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেবার দিয়েছে কি না? দিলে কী কী শর্তে প্রদান করেছে? এ মর্মে একটি অপশন রয়েছে।

যদি উক্ত প্যারায় স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক পতিত করার অধিকার প্রদান করে থাকে, তা জেনেশুনে স্বামী উক্ত কাবিন নামার নিচে সাইন করে থাকে, তাহলে স্বামী কর্তৃক স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকারপ্রাপ্তা হয়।  তখন উপরোক্ত ধারা অনুপাতে স্বামী লিখিত তালাকের শর্ত পাওয়া গেলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পাবে।

যদি শর্ত না পাওয়া যায়, কিংবা স্বামী স্ত্রীকে তালাকের অধিকার প্রদান না করে থাকে, তাহলে স্ত্রী নিজের উপর তালাক পতিত করার অধিকার পায় না।

উপরোক্ত শরয়ী বিধান অনুপাতে আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন, আপনার বোনের তালাক হল কি না?

رَجُلٌ اسْتَكْتَبَ مِنْ رَجُلٍ آخَرَ إلَى امْرَأَتِهِ كِتَابًا بِطَلَاقِهَا وَقَرَأَهُ عَلَى الزَّوْجِ فَأَخَذَهُ وَطَوَاهُ وَخَتَمَ وَكَتَبَ فِي عُنْوَانِهِ وَبَعَثَ بِهِ إلَى امْرَأَتِهِ فَأَتَاهَا الْكِتَابُ وَأَقَرَّ الزَّوْجُ أَنَّهُ كِتَابُهُ فَإِنَّ الطَّلَاقَ يَقَعُ عَلَيْهَا(الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى الطلاق بالكتابة-1/379، رد المحتار، كتاب الطلاق، مطلب فى الطلاق بالكتابة-4/456، المحيط البرهانى، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-4/486، تاتارخانية، كتاب الطلاق، الفصل السادس فى ايقاع الطلاق بالكتاب-3/380)

وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة .

( قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي ) تفويض ( الطلاق ) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية ( أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به ) مشافهة أو إخبارا ( وإن طال ) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها ( ما لم تقم ) لتبدل مجلسها حقيقة ( أو ) حكما بأن ( تعمل ما يقطعه ) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح ( لا ) تطلق ( بعده ) أي المجلس ( إلا إذا زاد ) في قوله طلقي نفسك وأخواته ( متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت ) فلا يتقيد بالمجلس ( ولم يصح رجوعه ) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *