প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / শুধু ঈমান আনলেই ব্যক্তি আল্লাহর ওলী হয়ে যায়? ওলী হবার জন্য আলাদা মেহনতের প্রয়োজন নেই?

শুধু ঈমান আনলেই ব্যক্তি আল্লাহর ওলী হয়ে যায়? ওলী হবার জন্য আলাদা মেহনতের প্রয়োজন নেই?

প্রশ্ন

আসসালামুয়ালাইকুম।আমি ওয়াছি সিলেট থেকে লিখছি।

অহাবি বা লা মাযহাবিরা রা আল্লার অলিদের যথাযথ সম্মান দিতে চায় না,আমি লক্ষ করেছি মতিউর রাহমান মাদানি সহ গায়রে মুকাল্লিদ রা সাধারন মুসলমান(মুমিন,মুত্তাকি) আর আল্লাহর অলিদের মধ্যে পার্থক্য বিবেচনা করতে চায় না।তারা ইবাদাত নিয়মিত করলে আর আল্লাহর আদেশ মত চললেই  তাকে অলি বলে আখ্যা দেয়।

আমার জানার ইচ্ছা ছিল, কুরআন এবং হাদিস(হাদিসে কুদসি সহ) মিলিয়ে আল্লাহ কিভাবে তার অলি এবং সাধারন বান্দাদের পৃথক করেছেন।আর আল্লাহর অলিদের মর্যাদা আল্লাহ কি পরিমান দিয়ে রেখেছেন?

মুফতি সাহেব,এই প্রশ্নের জবাবে আপনার জন্য অনেক দুয়া রইবে আল্লাহর দরবারে।

জাযাকাল্লাহ খাইর।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

শায়েখ মতিউর রহমান মাদানী সাহেবের কথা সত্য কিন্তু মতলব খারাপ। তার বক্তব্য হল, ওলী যে ব্যক্তি ঈমান আনে, তাকেই পবিত্র কুরআনে আল্লাহর ওলী বলা হয়েছে। তার দলীল হল,

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٢:٢٥٧]

যারা ঈমান এনেছে,আল্লাহ তাদের ওলী তথা অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী,চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে। [সূরা বাকারা ২৫৭]

এসব আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, যিনি ঈমান এনেছেন তিনিই ওলী।

একথা সত্য। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তিনিই খাঁটি ওলী। বরং যিনি ঈমান আনে, তিনি ওলী হবার প্রথম ধাপে পা দিল। এবার তার উপরে উঠার পালা। সুন্নাতের অনুসরণ, আল্লাহভীতি ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে ব্যক্তি সত্যিকার ওলীতে পরিণত হয়।

কিন্তু আল্লাহর ওলী হবার প্রথম সিড়ি হল ঈমান আনয়ন করা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, ওলীর দরজা এতটুকুই। আর কোন স্তর নেই।

যারা এসব কথা বলেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন।

উদাহরণতঃ একজন ব্যক্তি একশত বিল্ডিংয়ের নিকট আসল। উক্ত বিল্ডিংয়ের নাম হল ওলী ভবন। এখন এক ব্যক্তি উক্ত ভবনের গেইটে প্রবেশ করল। আর ব্যক্তি চেষ্টা মেহনত করে একশ তলা পেড়িয়ে উক্ত ভবনের মূল রূমে পৌঁছে গেল।

এখন আপনিই বলুন, গেইটে প্রবেশকারী ব্যক্তি কিন্তু ওলী ভবনে প্রবেশ করেছে, আবার যিনি একশ তলার উপরে আছেন তিনিও ওলী ভবনে প্রবেশ করেছেন।

এখন কোন আহমক কি একথা বলবে যে, গেইটে থাকা ব্যক্তি আর সর্বোচ্চ স্থানে পৌছে যাওয়া ব্যক্তি একই? এমন যে বলবে, তাকে নির্বোধ ছাড়া আমরা আর কী’বা বলতে পারি?

তেমনি ওলীদের স্তর আছে। ঈমান আনার দ্বারা ব্যক্তি ওলীর স্তরের গেইটে পা রাখে মাত্র। আর যিনি ইবাদত, রোনাজারী, ইত্তেবায়ে সুন্নাহ, তাক্বওয়া-পরহেযগারী, মুজাহাদা মেহনত, জিকির ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। উক্ত ব্যক্তি সর্বোচ্চ তবক্বার ওলী। সত্যিকার ওলী বা আল্লাহওয়ালা। তিনিও সত্যিকার বুযুর্গ। আর প্রথম সিড়িতে পা দেয়া ব্যক্তি নামের ওলী।

আশা করি বিষয়টি পরিস্কার।

উচু স্তরের সত্যিকার ওলীদের ক্ষেত্রেই পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [١٠:٦٢

মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে। [সূরা ইউনুস-৬২]

সত্যিকার ওলী ও বুযুর্গদের ক্ষেত্রে হাদীসে কি ইরশাদ হয়েছে দেখুনঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ اللَّهَ قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ: كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا، وَإِنْ سَأَلَنِي لَأُعْطِيَنَّهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لَأُعِيذَنَّهُ، وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ المُؤْمِنِ، يَكْرَهُ المَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ “

 

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করি। বান্দা আমার নৈকট্য অর্জনের জন্যে ফরয আদায়ের চাইতে প্রিয় কোন কাজ করেনি। আর বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, এক পর্যায়ে আমি তাকে ভালবেসে ফেলি। আর আমি যখন তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার চোখ, কান, হাত ও পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে দেখে, শোনে, ধরে ও চলে।

[যেহেতু তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে সকল কাজ-কর্ম আল্লাহ তাআলারই সন্তুষ্টি মোতাবেক প্রকাশ পায় এজন্যে একথা বলা হয়েছে যে, আমিই যেন তার চোখ, কান, হাতও পা হয়ে যাই। কেননা, যখন আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির বিপরীত সে ব্যক্তি কান দ্বারা কিছু শুনে না, চোখ দ্বারা কোন কিছু দেখে না, তার বিধানের খেলাফ হাত পা চালায় না, বরং যা কিছু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি এবং তার হুকুমের আওতায় থেকে করে: তখন আর তার চোখ, কান হাত ও পা নিজের রইল কোথায়? কার্যত আল্লাহ তাআলারই হয়ে গেছে]

যদি সে আমার কাছে চায় তাহলে তাকে তা দিয়ে দেই, যদি আমার আশ্রয় কামনা করে, তাহলে আশ্রয় দান করি। আমি কোন কাজ করতে কোন দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেচে থাকাকে অপছন্দ করি। [বুখারী, হাদীস নং-৬৫০২]

এ হাদীসে কুদসীতে খেয়াল করুন। আল্লাহ তাআলা কী বলছেন? আল্লাহর ওলী কে? যে এত বেশি নফল ইবাদত করে যে, যাকে এক সময় আল্লাহ তাআলা ভালবাসতে থাকেন, তার সব কিছুতে আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার বিষয় সামনে থাকে। তার হাত, পা, কথা সবই আল্লাহর বলে ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহর ওলী আল্লাহর কাছে যা চান, আল্লাহ তাআলা তা দিয়ে দেন।

এমন মর্যাদায় কোন ব্যক্তি ঈমান আনলেই কি হয়ে যায়? এখানেতো আল্লাহ পরিস্কার ভাষায় বলে দিলেন, কেবলি নফল ইবাদতের দ্বারা সেই মর্যাদায় ব্যক্তি ওলীর দরজায় পৌছে যায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দার কাতারে শামিল হয়।

আর মতিউর রহমান মাদানী বলছে শুধু ঈমান এনে ফরজ আমল করলেই ব্যক্তি ওলী হয়ে যায়।

এখন আপনিই বিচার করুন, আল্লাহর কথা মানবেন? নাকি মতিউর রহমান মাদানীর কথা মানবেন?

আল্লাহ তাআলা আল্লাহর ওলীদের শানে গুস্তাখীকারী মতিউর রহমান মাদানীদের হিদায়াত দান করুন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

মুহাদ্দিস-জামিয়া উবাদা ইবনুল জাররাহ, ভাটারা ঢাকা।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *