মাওলানা রিজওয়ান রফীক জমিরাবাদী
উমহাদেশের শীর্ষ মুরব্বি মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশসহ অগণিত দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা, পরিচালক এবং অভিভাবক, ফকীহুল মিল্লাত, শায়খুল হাদীস ফিল আরবি ওয়াল আজম হযরত মুফতী আব্দুররহমান সাহেব (রহ.) ১৯২২ ইং মোতাবেক ১৩৪০হি: সনে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার অন্তর্গত ইমামনগর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম মরহুম চাঁদ মিয়া
(রহ.)। প্রখর মেধা ও ধীশক্তিবলে অত্যন্ত ছোটবেলায় তিনি নাজিরহাট বড় মাদরাসা ও জামিআ আহলিয়া মঈনুল ইসলাম হাটহাজারীতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের লেখাপড়া সমাপ্ত করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দারুল উলূম দেওবন্দে গমন করেন এবং ১৯৫০ সালে সমাপনী বর্ষ তথা দাওরায়ে হাদীস কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। দারুল উলূম দেওবন্দে ১৯৫১ সালে সর্বপ্রথম উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণা বিভাগ তথা উফতা বিভাগের সূচনা করা হয়। দাওরায়ে হাদীস পাস করার পর তিনি উচ্চতর ইসলামী আইন গবেষণার জন্য উক্ত বিভাগে ভর্তি হয়ে কোর্স সমাপ্ত করে দারুল উলূম দেওবন্দের সর্বপ্রথম মুফতী সনদ গ্রহণ করেন। তৎকালে দারুল উলূম দেওবন্দের প্রধান মুফতী ছিলেন মুফতী মাহদী হাসান শাহজাহানপুরী (রহ.)।
সহকারী মুফতী ছিলেন মুফতী আহমদ আলী সাঈদ (রহ.)। এক সময় সহকারী মুফতী সাহেব (রহ.) দীর্ঘ ছুটিতে গেলে দারুল উলূম কর্তৃপক্ষ হযরত ফকীহুল মিল্লাত (রহ.)কে খ-কালীন সহকারী মুফতীর দায়িত্ব প্রদান করেন। এই দায়িত্বের জন্য তিনি সম্মানী ভাতাও পেতেন। একই প্রতিষ্ঠানে ফুনুনাতে আলিয়ার কোর্সওসমাপ্ত করেন তিনি। দারুল উলূম দেওবন্দে থাকাকালীন তিনি সাহারানপুর মাদরাসায় হযরত শায়খুল হাদীস আল্লামা যাকারিয়া (রহ.)-এর সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর সাহচর্য লাভে ধন্য হতেন। এক সময় হযরত শায়খুল হাদীস (রহ.) নিজ সন্তান হযরত মাওলানা তালহা সাহেব দা.বা. ও হযরত মুফতী আব্দুর রহমান সাহেব দুজনকে একসাথে স্বতন্ত্রভাবে জিকিরের হলকায় বসাতেন। তা থেকে তাঁর সাথে হযরত শায়খুল হাদী স সাহেব (রহ.)-এর সাথে প্রগাঢ় সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা এক প্রকার পারিবারিক সম্পর্কের মতো জীবনের শেষ ক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। আধ্যাত্মিক শিক্ষার প্রারম্ভ হযরত শায়খুল হাদীস (রহ.)-এর হাতে হলেও তিনি পরবর্তীতে হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থান ভী ( র হ . ) – এর সর্বশেষ খলীফা মুহিউসসুন্নাহ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক্ব সাহেব হারদূয়ী (রহ.)-এর হাতে বায়আত গ্রহণকরত
আধ্যাত্মিক শিক্ষায় পূর্ণতা লাভ করে খেলাফতপ্রাপ্ত হন। খেলাফত লাভেরপর থেকে তিনি সলূক ও আত্মশুদ্ধির পথে দেশব্যাপী অবদান রেখে গেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন খানেকায়ে এমদাদিয়া আশরাফিয়া আবরারিয়া। যেখান থেকে আধ্যাত্মিক পথে উপকৃত হতে চলেছেন দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম থেকে শুরু করে ছাত্র ও সাধারণ মুসলমানগণ। দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতী আযীযুল হক্ব (রহ.)-এর আহ্বানে তিনি জামিয়া পটিয়ায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এতে তিনি হাদীস, তাফসীর ও অন্যান্য ফুনুনের বিভিন্ন জটিল কিতাবাদীর পাঠ
দান করেন।
একসময় দেশের বিশালায়তন উত্তরাঞ্চল তথা উত্তরবঙ্গে দ্বীনি শিক্ষার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না। তেমনি এক সন্ধিক্ষণে উত্তরবঙ্গের কিছু দ্বীনদরদী লোক জামিয়া পটিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হযরত মুফতী আযীযুল হক সাহেব (রহ.)-এর কাছে
এসে একজন সুযোগ্য কর্মঠ আলেম উত্তরবঙ্গে পাঠানোর জন্য আবেদন করেন। তদপ্রেক্ষিতে তিনি হযরত মুফতী আবদুর রহমান সাহেবকে (রহ.) উত্তরবঙ্গে প্রেরণ করেন। ১৯৬০ ইং সালে তিনি উত্তরবঙ্গ গমন করে ওয়াজ-নসীহত, শিক্ষা-দীক্ষা এবং উন্নত
আদর্শ ও আপন যোগ্যতাবলে পুরো উত্তরবঙ্গে দ্বীনি আদর্শের ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটাতে সক্ষম হন। সেখানে তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ, মাদরাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তরবঙ্গের মানুষকে দ্বীনি জযবা চেতনায় উজ্জীবিত করেন। (উল্লেখ্য, তিনি সে সময় উত্তরবঙ্গে গেলেও জামিয়া পটিয়ায় তাঁর নামে কিতাবাদী অব্য াহত ছিল এবং মাঝেমধ্যে পটিয়া এলে তিনি নিয়মিত দরস প্রদান করতেন)।
সে সময় তিনি উত্তর বঙ্গে অবস্থিত বর্তমানে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কওমী মাদরাসা জামিয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলূম (জামীল মাদরাসা) বগুড়ার দায়িত্ব পালন করেন। মূলত তাঁর হাতেই বগুড়া জামীল মাদরাসার গড়ে উঠা এবং বেড়ে উঠা। উত্তরবঙ্গে দীর্ঘ ৮ বছরের সফল মিশন শেষে তিনি আল-জামিয়া পটিয়ায় চলে আসেন। তথায় ১৯৯০ ইং সাল পর্যন্ত পুরোদমে হাদীস, তাফসীর ও ফিকহের শিক্ষাদানের পাশাপাশি জামিয়ার শিক্ষা বিভাগীয় পরিচালক, সহকারী মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
এ বছরগুলোতে তিনি অত্র জামিয়ায় বুখারী শরীফ প্রথ খ-েরও পাঠদান করেন। বর্তমানে আল-জামিয়া পটিয়া বিশ্বের অন ্যতম শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেওয়ার পেছনে হযরত হাজী ইউনুস সাহেব (রহ)-এর পাশাপাশি তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম ও
মেহনত অনস্বীকার্য। তিনি ১৯৯০ ইং সালে আল-জামিয়া পটিয়া থেকে চলে গিয়ে দেশ-বিদেশের বরেণ্য আলেম-উলামা ও মুরব্বিদের
পরামর্শে ১৯৯১ ইং সালে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ নামে স্বতন্ত্র একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন, যা কয়েক বছরের মধ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়ে উপমহাদেশের একটি নামকরা ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্রের
রূপ নেয়। ২০০৪ ইং সালে ঢাকার কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউতে জামিআতুল আবরার নামে আরেকটি দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গোড়াপত্তন করেন, যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত একটি পূর্ণাঙ্গ দাওরায়ে হাদীস মাদরাসায় রূপ নেয়। তিনি আল-জামিআ পটিয়া থাকা অবস্থায় থেকে ইসলামী ব্যাংকিংব্যস্থা নিয়ে গবেষণা করেন। তখন থেকে ইসলামী ব্যাংকিং ও ইসলামী ফাইন্যান্সের ওপর তাঁর লিখিত বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধ দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়। সেই থেকে তাঁর একটি প্রচেষ্টা ছিল যে দুনিয়াব্যাপী সুদভিত্তিক অর্থনীতির স্থলে কিভাবে সুদবিহীন ইসলামী অর্থনীতি প্রবর্তন করা যায়। এ ক্ষেত্রে তিনি দেখলেন যে বাংলাদেশে আশাব্যাঞ্জক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু থাকলেও ইসলামী অর্থনীতির ওপর নিয়মিত লেখাপড়া ও গবেষণা না থাকায় সমাজে ইসলামী অর্থনীতি প্রবর্তন একটি দুরূহ বিষয়। আর এ ক্ষেত্রে আলেম-উলামার ব্যাপক জ্ঞান চর্চিত না হলে ইসলামী ব্যাংকিংব্যবস্থাও নামে মাত্র থাকবে। সে কারণে তিনি শুধু কওমী মাদরাসার ফারেগীনের জন্য ২০০২ ইং সালে ইসলামী অর্থনীতির ওপর একটি স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করে নিজ প্রতিষ্ঠিত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী বাংলাদেশ বসুন্ধরাতে। ২০০৯ সালে তিনি ইসলামিক ফাইন্যান্সের ওপর একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যার নাম রাখা হয় “সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ”। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী অর্থনীতির উচ্চ গবেষণার ক্ষেত্রে সারা দেশে একক ও অনন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবদান রেখে যাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি ঢাকায় মদীনাতুল উলূম মাদরাসা বসুন্ধরা এবং আশরাফিয়া মাদরাসা গাজীপুর নামে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। সব মিলিয়ে ঢাকাতেই তাঁর সরাসরি পরিচালনাধীন মাদরাসা ৫টি। তিনি চট্টগ্রাম শহরের ঐতিহ্যবাহী শুলকবহর মাদরাসা এবং উত্তরবঙ্গের বগুড়া জামীল মাদরাসারও সরাসরি পরিচালক ছিলেন। এ ছাড়া দেশের শত শত মাদরাসার উপদেষ্টা ও মুরব্বি হিসেবেও তিনি কল্পনাতীত খেদমাত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের মুরব্বিগণের মধ্যে মসজিদে ন ববীতে বসে আরব
ছাত্রদেরকে হাদীসের দরস দেওয়ার ঘটনা বিরল। তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যিনি প্রতিবছর রমাজান মাসে মসজিদে নববীতে আরব ছাত্রদেরকে হাদীসের কিতাবাদীর দরস দিতেন। সে কারণে কেউ কেউ তাঁর নাম দিয়েছেন শায়খুল হাদীস ফিল আরব ওয়াল আজম। দীর্ঘকাল থেকে তিনি বার্ষিক তিনবার মক্কা-মদীনা যিয়ারত করতেন। তিনি অন্তিম শয্যায়ও যে আকাক্সক্ষাটি দেখাতেন তাহলো মক্কা-মদীনার যিয়ারত। দীর্ঘ ৬ মাস শয্যাশায়ী অবস্থায় সামান্য শক্তি পেলেই বলতেন আমার জন্য তাড়াতাড়ি ভিসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করো। আমি মক্কা-মদীনা ঘুরে আসি। এমনকি যখন তিনি আইসিউতে ছিলেন তখনও তাঁর ছেলেদের এ ব্যাপারে খুব পীড়াপীড়ি করতেন। তাঁর সুযোগ্য সন্তানরাও ব্যবস্থাগুলো করে রেখেছিলেন। যাতে সামান্য শক্তি ফিরে পেলেই হুজুরকে যেন মক্কায় নিয়ে যাওয়া যায়। তাঁর কাছে হাদীসের দরস নেওয়া আরব ছাত্রদের মাঝে উস্তাদের প্রতি কী পরিমাণ মুহাব্বত ও শ্রদ্ধা ছিল তা অনুমান করা যায় যখন তাদের কেউ কেউ তাঁর দীর্ঘ অসুস্থতার সময় তাঁকে দেখতে আসে।
তিনি দেশের বেশ কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকের শরীয়াহ সুপারভাইজারী কমিটির সভাপতি এবং ইসলামী ব্যাংকসমূহের সর্বোচ্চ শরীয়াহ কাউন্সিল “সেন্ট্রাল শরীয়াহ বোর্ড”-এরও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন, করেছেন।
বাংলাদেশের কওমী মাদরাসাসমূহ বেশ কয়েকটি বোর্ডের অধীনে নিয়ন্ত্রিত। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বোর্ড হলো পাঁচটি।
ঢাকাতে বেফাকুল মাদারিস বাংলাদেশ, চট্টগ্রামে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশ, সিলেটে আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালীম বাংলাদেশ, উত্তরবঙ্গে তানযীমুল মাদারিস বাংলাদেশ এবং দক্ষিণবঙ্গে গৌহারডাঙ্গা মাদরাসাভিত্তিক বেফাকুল মাদারিস। এর মধ্যে পরের চারটি বোর্ড নিয়ে গঠিত কওমী মাদরাসাসমূহের সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান সম্মিলিত কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডেরও তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উত্তরবঙ্গ তানযীমের তিনি সরাসরি চেয়ারম্যান ছিলেন।
হযরত ফকীহুল মিল্লাত (রহ.) সমাজের প্রতিটি স্তরে সুন্নাতে রাসূল অনুযায়ী জীবনযাপনে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতেন। বিশেষ করে মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবন যেন সুন্নাতে নববীর আলোতে সুসজ্জিত হয় সেই চেষ্টায় ও সেই চিন্তায় সব সময়
তিনি বিভোর থাকতেন।
নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাহফিল, সভা, বৈঠক করে মুসলমানদেরকে এবং আলেমউলামাকে সুন্নাতের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। সুন্নাতী বিয়ে, সুন্নাতী লেবাস, সুন্নাতী আহার-বিহার, সুন্নাতী লেনদেন, আযান, ইকামত, নামাযÑসব কিছুই যেন রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত অনুযায়ী হয়, ইত্যাদির বাস্তবায়ন তাঁর একটি দৈনন্দিন মিশন হিসেবেই পরিগণিত। এ মিশন বাস্তবায়নে তিনি শয্যাশায়ী হওয়ার আগ পর্যন্ত দূর-দূরান্তে সফর করতে কোনো প্রকার কুণ্ঠাবোধ করেননি। সারা দেশে
ইসলামী সম্মেলন করার যে জযবা ও বাস্তবতা পরিলক্ষিত হয় বলতে গেলে এর সফল সূচনা হয় তাঁর হাতেই। এহয়ায়ে সুন্নাতের কাজ সারা দেশে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ’ নামে একটি সংস্থা গঠন করেন তিনি। এর অধীনে দেশের
অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে কোরআন ও সুন্নাহর সঠিক বাণী আপামর জনসাধারণের সামনে পৌছে দেওয়ার ব্যাপক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেন। একই সাথে এই সম্মেলনের মাধ্যমে আকাবিরে দেওবন্দের ভাবমূর্তী ও আদর্শ বিকশিত ও বিস্তৃত হয়েছে সারা দেশে।
ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে তাঁর একটি সেবামূলক সংস্থা রয়েছে। অত্র সংস্থার মাধ্যমে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য মসজিদ, মাদরাসা, মক্তব, হেফযখানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ছাড়া তিনি উক্ত সংস্থার মাধ্যমে দেশের গরিব, মিসকীন, এতিম ছাত্রদের আহার-বিহার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেন অভাবী আলেম-উলামাদের প্রতিও তাঁর দানহস্ত সমভাবে প্রসারিত ছিল। মুসলমানদের বিভিন্ন আপদ-বিপদ ও দুর্যোগে তাদের পাশে থাকতে চেষ্টা করতেন। তাঁর সধ্যানুাসারে যখন যা থাকে, তা নিয়েই বিপদে জর্জরিত জনসাধারণের কাছে দৌড়ে যেতেন । দেশের প্রায় দুর্যোগকবলিত এলাকা এর বাস্তব সাক্ষী। পূর্ব থেকে চলে আসা তাঁর এসব সেবামূলক কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ফকীহুল মিল্লাত ফাউন্ডেশন নামে ওই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁর সেবামূলক কার্যক্রম আরো সুবিন্যস্ত ও ব্যাপক হয়।
ইসলামের সঠিক আক্বিদা, আহকাম ও বাণী প্রচার এবং ইসলামের নামে বিভিন্ন বাতিল সম্প্রদায় সম্পর্কে মুসলিম উম্মাহকে ব্যাপকভাবে সচেতন করার লক্ষ্যে ২০১২ ইং সালে একটি সাময়িকী প্রকাশ করেন। যার নামকরণ করা হয় তাঁর শায়খ হযরত শাহ আবরারুল হক হারদূয়ী (রহ.)-এর নামে ‘মাসিক আল-আবরার’। খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে এই সাময়িকীটি অকল্পনীয় সাড়া পায়। সমাদৃত হয় পুরো দুনিয়ার বাংলা ভাষাভাষীদের কাছে।
দীর্ঘদিন রোগভোগের পর গত ১০/১১/২০১৫ ইং মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এই মহান ব্যক্তিত্ব বসুন্ধরা
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে জান্নাতবাসী হয়ে যান। পরের দিন ১১/১১/২০১৫ বুধবার সকাল ১০টায় বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পে তাঁর ঐতিহাসিক নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর জানাযার নামাযে ছিল লাখো মুসলমানের উপস্থিতি।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল (হিজরী সন হিসেবে) ৯৬ বছর। তিনি দুই ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য ছাত্র, মুরিদান, খলীফা ও ভক্ত রেখে যান।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউসে উচ্চ স্থান নসীব করুন। আমীন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার -পরিজন ও ভক্ত-অনুরক্তদের সবরে জমীল ধারণের তাওফীক দান করুন এবং তাঁর যাবতীয় কার্যক্রম পর্যন্ত জারি রাখুন। আমীন।