প্রশ্ন
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ।
আমি তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টারের মুফতি সাহের এর কাছে একটি বিষয় জানতে চাই।
হয়রত আমি ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) বই পড়তে খুবই পছন্দ করি। সম্প্রতি আমি
“ইমাম গাজ্জালি (রহঃ)” একটি বই নিয়ে একটু দ্বিধাদন্দের মধ্যে পড়েছি।
আমাদের এলাকার মসজিদের খতিব সাহের একজন ভাল হকপন্থি আলেম। তিনি আমাকে বলল যে, ইমাম গাজ্জালি (রহঃ) এর “এহইয়াউ উলুমিদ্দীন” বইটার মধ্যে কয়েকটা জায়গাতে জাল হাদীস চলে এসেছে। আমি যেহেতু (তালেবে ইলেম বা আলেম না) সেহেতু আমার পক্ষে জাল হাদীস চেনা সম্ভব না। এমন অবস্থা আমি কি “ইমাম গাজ্জালি (রহঃ)” এর “এহইয়াউ উলুমিদ্দীন” এই বইটা কি পড়া বাদ দিয়ে দিবো???
(দয়া করে এ বিষয়ে আমাকে একটা পরামশ দিলে আমি খুব উপকৃত হবে)
মাসুদ খান
নারায়নগঞ্জ-১৪০০
উত্তর:
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইমাম গাযালী রহ. একটি নাম, একটি ইতিহাস। তাঁর সম্পর্কে রয়েছে বরেণ্য ইমামদের প্রাজ্ঞচিত মন্তব্য। এখানে শুধু ইমাম যাহাবী রহ. এরম মন্তব্য উল্লেখ করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছি। তিনি ইমাম গাযালী রহ. সম্পর্কে বলেন-
فرحم الله الامام أبا حامد، فأين مثله في علومه وفضائله، ولكن لا ندعي عصمته من الغلط والخطأ،
আল্লাহ তাআলা আবু হামেদ তথা ইমাম গাযালীর প্রতি রহম করুন। তাঁর ইলম ও জ্ঞান সাগরতা এবং বৈশিষ্ট ও গুণাবলীর সমকক্ষ আর কে আছে ? তবে আমরা তাঁর ভুল ত্রুটির উর্ধ্বে হওয়ার দাবী করি না। (সিয়ারু আলামিন নুবালা ১৯/৩৪৬)
এবার আলোচনা করা যাক তাঁর রচিত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থটি নিয়ে। এটি অত্যন্ত উঁচু মরতবা ও উঁচু মাপের কিতাব। ইসলামের ইতিহাসে যে সকল গ্রন্থ মুসলমানদের দিল ও মননশীলতায় এবং তাদের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে এবং যদ্বারা মুসলিম সমাজ শতাব্দীর পর শতাব্দী, সুদীর্ঘ সময় ধরে প্রভাবিত হয়েছে তন্মধ্যে এহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থের রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট। ইমাম গাযালীর সমসাময়িক এবং ইমামুল হারামাইনের শাগরেদ আব্দুল গফুর ফারেসীর ভাষ্যমতে- এহইয়াউ উলুমিদ্দীন এর মত কোন গ্রন্থ এর পূর্বে রচিত হয়নি।
এটি ইসলামের সর্বপ্রথম বিস্তৃত ও দলীল সমৃদ্ধ গ্রন্থ যাতে জীবনের আদ্যপান্ত সব বিষয় এবং আখলাকী রোগ-ব্যাধির কারণ ও প্রতিকার বর্ণনা করা হয়েছে। (দেখুন-তারীখে দাওয়াত ও আযীমত ১/১৪৬, ১৪৭।)
এ গ্রন্থের অনেক বৈশিষ্ট থাকা সত্বেও হাদীসের ক্ষেত্রে এ গ্রন্থে অনেক মওজু ও জাল বর্ণনা চলে এসেছে। আল্লাহ্ তাআলা একেক ফন ও শাস্ত্রের জন্য একেক জনকে কবুল ও নির্বাচন করেন। কাউকে একাধিক শাস্ত্রের জন্যও কবুল করেন। ইমাম গাযালী রহ. অনেক শাস্ত্রের ইমাম ও প-িত হওয়া সত্বেও হাদীস শাস্ত্রে তাঁর ইলমের স্বল্পতা ও অপ্রতুলতার কথা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন।
অবশ্য তিনি এহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থে যে সকল রেওয়ায়েত ও হাদীস নিয়ে এসেছেন তার তাখরীয (সূত্র- নির্দেশ) ও মান নির্ণয়ে হাফেজ ইরাকী রহ. (৭২৫ হি.-৮০৬ হি.) ‘আল মুগনী আন হামলিল আসফারি ফিল আসফার ফী তাখরীজি মা ফিল ইহইয়া মিনাল আখবার’ নামে গ্রন্থ লিখেছেন। যা এহইয়াউ উলুমিদ্দীন এর সাথে একীভূতভাবে মুদ্রিত হয়েছে। ইমাম সুবকী রহ. ৭৭১ হি. তাঁর ‘আত তবাকাতুশ শাফেইয়্যাতুল কুবরা’ (৬/২৮৭-৩৮৮) গ্রন্থে এহইয়াউ উলুমিদ্দীন এর যে সকল হাদীসের তিনি সনদ পাননি তা একত্র করেছেন। তিনি এর শিরোনাম দিয়েছেন এভাবে- وهذا فصل جمعت فيه جميع ما في كتاب الإحياء من الأحاديث التي لم أجد لها إسنادا
এহইয়াউ উলুমিদ্দীন গ্রন্থটির গুরুত্ব বিবেচনা করে হাফেজ ইবনুল জাওযী রহ. ‘মিনহাজুল কাসেদীন’ নামে এর একটি ইখতেছারও (সার সংক্ষেপ) লিখেছেন। মোট কথা উলামায়ে কেরাম এ গ্রন্থে উল্লেখিত মওজু ও সনদহীন বর্ণনাকে চিহিৃত করে দিয়েছেন।
যাই হোক এ গ্রন্থটির সূচীপত্রের দিকে একবার নজর বুলালে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন এ গ্রন্থের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা কি? অতএব এ গ্রন্থে মাওযু ও জাল হাদীস থাকায় তা পড়া বাদ দিবেন কেন ? বরং কোন যোগ্য ও আস্থাভাজন আলেমের তত্ত্বাবধানে থেকে এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করতে থাকুন। ইনশা আল্লাহ বহুত ফায়দাজনক হবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান
সহকারী গবেষক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
নিরীক্ষক
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
এবং
“মাওলানা মুহসিনুদ্দীন খান” ও “লুৎফুর রহমান ফরায়েজী” অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার এই প্রশ্নের, আপনাদের এই উত্তরটা আমার অনেক উপকারে এসেছে।
আমি খাস দিলে দোয়া করি,আল্লহ্ আপনাদের সকল কে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান করুন। এবং আল্লহ্’র রাজি খুশি মোতাবেক আপনাদের বাকি হায়াত কাটানো তৌফিক দান করুক।
(আল্লহুমা আমীন)