প্রচ্ছদ / খেলাধুলা/বিনোদন / কুস্তি খেলতে মেয়েদের জন্য বিদেশ সফর কি জায়েজ আছে?

কুস্তি খেলতে মেয়েদের জন্য বিদেশ সফর কি জায়েজ আছে?

প্রশ্ন

আমি একজন কুস্তি খেলোয়াড়। আমার সামনে ইন্ডিয়াতে ম্যাচ আছে। বাংলাদেশ থেকে গিয়ে খেলব। আমার উদ্দেশ্য শক্তি অর্জন করা। যাতে কুফফার শক্তি আমাকে ভিতির কারন মনে করে। এখন কি এই কুস্তি খেলা আমার জন্য জায়েজ?? বক্সিন খেলা যাকে আমরা বলি। এটা সেই খেলা। আশা করি উত্তর টা দিবেন। খুব উপকার হবে।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

মেইলের সিরিয়াল অনুপাতে আপনার প্রশ্নটির জবাব কমপক্ষে ৫/৬ মাস পরে আসার কথা। কারণ এখনো আমাদের কাছে ৫৫১ টি মেইল জমা আছে।

কিন্তু প্রয়োজনের বিচারে, আপনাকে দ্বীনের উপরে রাখার জান্নাতি অভিলাসে সাড়ে পাঁচশত মেইল ডিঙ্গে আপনার প্রশ্নের উত্তরটি প্রদান করা হচ্ছে। যদি ইসলামী শরীয়তের বিধানটি আপনি মেনে চলেন, তাহলেই আমাদের এ প্রচেষ্টা স্বার্থক বলে মনে হবে।

দিলটা পরিস্কার করে উত্তরটি খেয়াল করুন

উত্তর

দ্বীনের উপকারের জন্য শক্তি সঞ্চয় করা, যুদ্ধ কৌশল শিখা শুধু জায়েজ নয়, বরং অনেক সওয়াবের কাজ। সেই হিসেবে দ্বীনে প্রয়োজনে ব্যয়িত হবার নিয়তে কুস্তি শিখা জায়েজ ও নিয়ত শুদ্ধ থাকলে সওয়াবও হবে ইনশাআল্লাহ।

وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ [٨:٦٠]

আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শুত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপর ও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না। [সূরা আনফাল-৬০]

কিন্তু প্রতিটি সওয়াবের কাজই করতে হবে শরীয়তের অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে।

পর পুরুষের সামনে যাওয়া হারাম। পর্দা লঙ্ঘণ করা নিষিদ্ধ কাজ। যা আপনার উক্ত বর্হিদেশের বক্সিং খেলায় অংশ নেবার সাথে উতপ্রোতভাবে জড়িত। সেই সাথে আপনার চেহারা ও শারিরীক অবস্থান দেখবে পৃথিবীর কোটি মানুষ। চোখের গোনাহে লিপ্ত হবে লাখো যুবক। যার পুরো দায়ভারই ন্যস্ত হবে আপনার উপর।

তা’ই শক্তি অর্জনের জন্য কুস্তি খেলা জায়েজ হলেও শরয়ী অন্যান্য নিষেধাজ্ঞার কারণে উক্ত ম্যাচে আপনার অংশগ্রহণ জায়েজ হবে না।

আল্লাহ তাআলা আপনার দ্বীন মানার এ আগ্রহকে কবুল করুন। মনকে দ্বীনের জন্য খুলে দিন। দ্বীনের প্রতিটি বিধান যথাযথভাবে মানার মত ঈমানী শক্তি প্রদান করে দিন। আমীন।

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেন, উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا (59

হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। [মাথার দিক থেকে] এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। {সূরা আহযাব-৫৯}

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَالْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ، فَإِذَا خَرَجَتْ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ.

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নারী জাতি হল আপাদমস্তক সতর। যখনি সে বের হয়, তখনি শয়তান তাকে চমৎকৃত করে তোলে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১৭৩, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২০৬৫, সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১৬৮৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৫৯৮}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

0Shares

আরও জানুন

আজানের সময় বা খানা খাওয়া ও বাথরুমে গমণ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় মাথায় কাপড় রাখার হুকুম কী?

প্রশ্ন আমার চারটি বিষয়ে জানার ছিলো : ________ ১, বাথরুমে অবস্থানকালীন সময়ে মাথায় কাপড় দেওয়ার …