From: Md. Mofazzal hossain
Subject শহীদ প্রসঙ্গে
Country : Dhanmondi, Dhaka.
Mobile :
Message Body:
প্রশ্ন 1) জামাত ইসলামী সঠিক আকিদার ইসলামী দল কিনা?
2) জামাতের নাযেবে আমির দেলওয়ার হোসেন সাইদি হক্কানী আলেম কিনা?
3) ইসলামে শহিদ কাকে বলে ?
4) সাইদির মুক্তির জন্য আন্দোলন করে যারা মারা গেছে তারা শহিদ কিনা?
মো: মোফাজ্জল হোসেন
ধানমন্ডি,ঢাকা
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
১ নং এর জবাব
হক্কানী আলেমদের সর্বসম্মত মতানুসারে জামাত শিবির একটি বাতিলপন্থী দল। এতে কোন সন্দেহ নেই। এ বিষয়ে একটি সমৃদ্ধ লেখা আমাদের সাইটে ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। দয়া করে সেটা দেখে নিন।
লিংক- মাওলানা মওদুদী হকপন্থী না বাতিলপন্থী?
২ নং প্রশ্নের জবাব
যে দলটি বাতিলপন্থী। সে দলের অনুসারী যে বাতিলপন্থী হবেন এতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকার কথা নয়। তাই হক্কানী আলেমদের মতে যারাই জামাত-শিবির তথা মওদুদীবাদের আদর্শের অনুসারী হবেন জেনে বুঝে তারা পথভ্রষ্ট, বাতিলপন্থী।
৩ নং প্রশ্নের জবাব
শহীদ ইসলামীক দৃষ্টিতে খুবই মর্যাদাবান ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ। এটি ইসলামের নিজস্ব পরিভাষা। শহীদ মৃত্যুবরণ করার সাথে সাথেই জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকে।
শহীদ কোন সামাজিক বা রাজনৈতিক পরিভাষা নয়। তাই এটার যত্রতত্র ব্যবহার কিছুতেই কাম্য নয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, নাস্তিক-মুরতাদ সকলের জন্যই এ শব্দ ব্যবহার করা একটি ধৃষ্টতা বৈ কিছু নয়।
শহীদ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই? ইসলাম নির্ধারিত একটি ইবাদত সম্পর্কিত শব্দকে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহারতো ইসলাম অবমাননার শামিল।
বিশেষ করে যারা নাস্তিক, ধর্মদ্রোহী কিংবা রাজনৈতিক হীন লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে মারা গেছে তাদের শহীদ বলাটা ইসলামের এ মর্যাদাপূর্ণ শব্দকে নিয়ে তামাশা করা ছাড়া আর কিছু নয়।
শহীদ কাকে বলে?
تعريف الشهيد شرعا : هو من قتله أهل الحرب مباشرة أو تسببا بأي سبب كان أو من قتله أهل البغي أو قطاع الطرق أو اللصوص في منزله أو وجد في المعركة مع الكفار وبه أثر جرح أو كسر أو حرق أو خروج دم من أذن أو عين لا من الفم والأنف ( لأن الدم يخرج من هذه المخارج من غير ضرب ) أو قتله مسلم ظلما عمدا لا خطأ بمحدد ( 1 ) لا بمثقل ( 2 ) وسمي شهيدا لأنه مشهود له بالجنة(فقه العباداة، كتاب الصلاة، الباب العاشر ( الجنائز )-1/123
শহীদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে, যাকে কাফেররা হত্যা করে যেকোন কারণেই হোক। অথবা ইসলামী খিলাফতের বিরুদ্ধাচরণকারী, অথবা ডাকাত, অথবা স্বীয় বাড়িতে চোর হত্যা করে, অথবা যাকে কাফেরদের সাথে অনুষ্ঠিত জিহাদের ময়দানে পাওয়া যায়, সাথে সাথে তার গায়ে থাকে কাটার দাগ, বা ক্ষত কিংবা পোড়ার চিহ্ন, কিংবা চোখ বা কান থেকে রক্তক্ষরণ অবস্থায়, মুখ বা কান থেকে নয়। {কেননা কান বা মুখ থেকে আঘাত ছাড়াও রক্ত বের হতে পারে} অথবা যাকে হত্যা করেছে কোন মুসলমান ইচ্ছেকৃত জুলুম করে, ভুল করে নয়। হত্যা করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভার দিয়ে নয়।
উক্ত ব্যক্তির নাম শহীদ। তাকে শহীদ এজন্য বলা হয় যে, সে জান্নাতে উপস্থিত হয়ে যায়। {ফিক্বহুল ইবাদাত, কিতাবুস সালাত, ১০ম অধ্যায়, জানাযা-১/১২৩}
কুরআনের ভাষায়-
وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَٰكِنْ لَا تَشْعُرُونَ [٢:١٥٤
আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়,তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত,কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। {সূরা বাকারা-১৫৩}
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ ۚ وَمَنْ يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا [٤:٧٤
কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব। {সূরা নিসা-৭৪}
এ দুটি আয়াতে লক্ষ্য করুন আল্লার রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। যাকে শহীদ বলা হয়।
হাদীসের ভাষায় শহীদ
وعن أبي موسى قال : جاء رجل إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقال : الرجل يقاتل للمغنم والرجل يقاتل للذكر والرجل يقاتل ليرى مكانه فمن في سبيل الله ؟ قال : ” من قاتل لتكون كلمة الله هي العليا فهو في سبيل الله “
হযরত আবু মুসা রাঃ থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল-এক ব্যক্তি গনীমতের মাল অর্জনের জন্য জিহাদ করল, একজন নিজের বীরত্বের সুনামের জন্য জিহাদ করল, একজন তার বীরত্ব দেখানোর জন্য জিহাদ করল, এদের মাঝে কে আল্লাহর পথে প্রকৃত জিহাদ করল? রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করল, সে প্রকৃত মুজাহিদ। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-২৬৫৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫০২৯}
عن سعيد بن زيد عن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال : « من قتل دون ماله فهو شهيد ومن قتل دون أهله أو دون دمه أو دون دينه فهو شهيد
হযরত সাঈদ বিন যায়েদ থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-“যে ব্যক্তি নিজ সম্পত্তি রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ পরিবার রক্ষায় নিহত হয় সেও শহীদ। অথবা প্রাণ রক্ষায় কিংবা দ্বীন রক্ষায় নিহত হয় সেও শহীদ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৪৭৭৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৬৫২)
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদরত অবস্থায় যারা শহীদ হন তাদের বলা হয় শহীদ। এটা হল সত্যিকার শহীদ। রাসূল সাঃ কতিপয় ব্যক্তিকে হুকুমের দিক থেকে শহীদ বলেছেন। প্রকৃত শহীদ নয় বরং শহীদের কাছাকাছি মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। যেমন হাদীসে রয়েছে-
أن جابر بن عتيك أخبره :أن رسول الله صلى الله عليه و سلم قال الشهداء سبعة سوى القتل في سبيل الله المطعون شهيد والغرق شهيد وصاحب ذات الجنب شهيد والمبطون شهيد والحرق شهيد والذي يموت تحت الهدم شهيد والمرأة تموت بجمع شهيد
হযরত জাবের বিন আতীক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর পথে মৃত্যুবরণ করা ছাড়াও সাত প্রকার শহীদ রয়েছে। ১-মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ২-পানিতে নিমজ্জিত শহীদ। ৩-শয্যাশায়ী অবস্থায় মৃত শহীদ। ৪-পেটের রোগ মৃত্যুবরণকারী শহীদ। ৫-আগ্নিদগ্ধ ব্যক্তি শহীদ। ৬-যে ব্যক্তি ধ্বংসাবশেষের নিচে পড়ে মারা যায় সেও শহীদ। ৭-সন্তান প্রসব করতে মারা যাওয়া নারীও শহীদ। {মুয়াত্তা মালিক, হাদিস নং-৫৫৪, ৮০২, আল মু’জামুল কাবীর, হাদিস নং-১৭৮০, সহীহ কুনুজু সুন্নাতিন নাবাবিয়্যাহ, হাদিস নং-২৩}
৪নং প্রশ্নের জবাব
দেলোয়ার হুসাইন সাঈদী সাহেব যেহেতু বাতিল আক্বিদাপন্থী মওদুদী সাহেব প্রতিষ্ঠিত একটি অনৈসলামিক (যদিও ইসলামের নাম ব্যবহার করে) ক্ষমতাপাগল রাজনৈতিক দলের নেতা।
সেই রাজনৈতিক নেতাকে মুক্তির জন্য জামাত-শিবির দেশে সহিংস রাজনৈতিক আন্দোলন করছে। এটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দলোন নয়। এ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জামাত-শিবিরের একনিষ্ট রাজনৈতিক কর্মী বলা যায়, আল্লাহর কালিমা বুলন্দকারী মুজাহিদ বলা যায় না।
তাই এ আন্দোলনে মৃত্যুবরণকারী কাউকে মৌলিকত্বের বিচারে শহীদ বলা যাবে না।
তবে যদি কোন মুসলমান রাষ্ট্রীয় সংবিধান মেনে আইনসম্মত প্রতিবাদ জানায়, আর তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়,তাহলে মজলুম হয়ে মৃত্যুবরণ করার কারণে উক্ত ব্যক্তিকে শহীদ বলা যাবে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক–তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।