প্রশ্ন
আসসালামুয়ালাইকুম।
এস্তেখারা নামাজ এর নিয়ম জানতে চাচ্ছি।
আমি যে পদ্ধতি জানি তা হল এরকম…২রাকাত নফল নামাজের মত করেই পড়তেহয়, তবে, ১ম রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ারসময় – “ইহ দিনাছছিরাতাল মুস্তাকিম”আয়াতটিই বারংবার পড়তে হয় আর এই আয়াতটি পড়ার সময় যে বিষয় নিয়েএস্তেখারা করা হচ্ছে তা মনে মনে চিন্তা করতে হয়। এটা করতে অনেক সময় লেগে যায় (কারণ, পুরোপুরি ধ্যান আসতে সময়লাগে) আর নামাজরত অবস্থাতেই ফলাফল জানা যায়।
কীভাবে ফলাফল জানা যায়? —
উক্ত আয়াতটি পড়ার সময় যদি শরীরের উপরের অংশ ডান দিকে ঘুরে যায়, অথবা এমন মনে হয় যে ডান দিকে ঘুরে গেছে, তারঅর্থ হল, যে ব্যাপারে এস্তেখারা করা হচ্ছে সে কাজটা করা যাবে। আর যদি ঐ আয়াত পড়ার সময় শরীরের উপরের অংশ বাম দিকে ঘুরে যায়, অথবা এমন মনে হয় যেবাম দিকে ঘুরে গেছে, তার অর্থ হল, যে ব্যাপারে এস্তেখারা করা হচ্ছে সে কাজটা করা যাবে না। তারপর, স্বাভাবিক নিয়মে পরেরআয়াত গুলো পড়ে সুরা ফাতিহা শেষ করেঅন্য সুরা মিলিয়ে পড়তে হয়, আর বাকিনামাজ স্বাভাবিক নিয়মেই শেষ করতে হয়।
এই হল আমার জানা নিয়ম। আপনি কি একটু বলতে পারবেন এটাই এস্তেখারা নামাজের সহিহ নিয়ম কীনা? ব্যাস্ততার মধ্যে থেকেও আপনি বিভিন্ন জিজ্ঞাসার উত্তর দিয়ে থাকেন তার জন্য সাধুবাদ জানাই।আশা করি এ বিষয়ে আপনি আমায় দিকনির্দেশনা দিবেন।বর্তমানে খুবই depression এ আছি। দোয়াকরবেন যেন আল্লাহ পাক আমাদের সকলেরসহায় হোন। আমীন।
আসসালামুয়ালাইকুম।
নিবেদক-
মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ইস্তেখারা করার বিভিন্ন পদ্ধতি উলামায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত। যা তাদের অভিজ্ঞতালব্ধ পদ্ধতি।
বাকি সিহাহ সিত্তার হাদীস গ্রন্থে ইস্তেখারা করার যে পদ্ধতি এসেছে তা হল, প্রথমে দুই রাকাত নামায পড়বে ইস্তিখারার নিয়তে। তারপর এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، وْ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، ، وْ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ،
এ দুআর যেখানে “হাজাল আমর” শব্দটি আসবে, সেখানে মনে মনে যে কাজটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছে সেটি উচ্চারণ করবে আরবীতে বা মনে মনে সে বিষয়টি ভেবে নিবে।
এ হল হাদীসে বর্ণিত ইস্তেখারা।
এখন প্রশ্ন হল ইস্তেখারাকৃত বিষয়টির ফায়সালা কিভাবে বুঝতে পারবে? কোন পদ্ধতিতে তা জানা যাবে? এ নিয়ে উলামায়ে কেরাম থেকে একাধিক পদ্ধতি জানা যায়।
উক্ত শেষ করে কারো সাথে কথা না বলে কিবলামুখী হয়ে ঘুমিয়ে পড়বে। ঘুম থেকে জাগার পর মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। [তুহফাতুল আলমায়ী-২/৩৩৮, বেহেশতী জেওর]
বাকি এছাড়া যত পদ্ধতিকে রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত পদ্ধতি বলা যাবে না। বাকি একদম বাতিল পদ্ধতিও বলা ঠিক নয়। কারণ এটি জানার পদ্ধতি যেহেতু কোন দ্বীনী বিষয় নয়। বরং দুনিয়াবী বিষয়ের ফায়সালা জানতে এমনটি করা হয়ে থাকে, তাই এটির ক্ষেত্রে মানুষের অভিজ্ঞতার একটি দখল রয়েছে।
যেমন ডাক্তারী বিষয়ে অভিজ্ঞতার আলোকে অনেক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে, তখন অসুখ হলে নির্ধারিত পদ্ধতির চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। যেমন গলা বসে গেলে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা ইত্যাদি। এসব হল অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়।
তেমনি কারো অভিজ্ঞতায় যদি এমন আমল করার দ্বারা ইস্তেখারাকৃত বিষয়ের ফলাফল স্পষ্ট হয়, আর সেটিকে তারা সুন্নত না মনে করে, সওয়াবের কারণ মনে না করে, তাহলে এটিকে বিদআত বলা যাবে না।
এর উপর আমল করা যেতে পারে।
কিন্তু যদি এ পদ্ধতিকে সুন্নত মনে করে তাহলেই কেবল বিদআত হবে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الاِسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ لِيَقُلْ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعِيشَتِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي، أَوْ قَالَ: فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي بِهِ، قَالَ: وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ. (سننر الترمذى، رقم الحديث-480
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
শুকরিয়া