প্রশ্ন
১
মুকীম ব্যক্তির জন্য ভাগে কুরবানী দেয়া জায়েজ কি না?
২
উটে দশ ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে কি না?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
মুকীম ব্যক্তির জন্য ভাগে কুরবানী দেয়া এবং উটে ৭ ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে। দশ ভাগে কুরবানী দেয়া যাবে না। দশ ভাগে কুরবানী দিলে কুরবানী শুদ্ধ হবে না।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُهِلِّينَ بِالْحَجِّ: «فَأَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ نَشْتَرِكَ فِي الْإِبِلِ وَالْبَقَرِ، كُلُّ سَبْعَةٍ مِنَّا فِي بَدَنَةٍ»
হযরত জাবের বিন সামরা রাঃ থে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে হজ্ব থেকে হালাল হতে গেলাম। তখন তিনি আমাদের আদেশ করলেন একটি উট ও একটি গরুতে সাতজন করে শরীক হতে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩১৮}
এছাড়া ইমাম তিরমিজী রহঃ এর তাহকীক থেকেও একথা পরিস্কার যে, সাহাবায়ে কেরাম ও ফুক্বাহায়ে কেরামের বিশাল জামাতও এ মতই পোষণ করতেন। এর উল্টো মতাবলম্বী বিরল।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: نَحَرْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ الحُدَيْبِيَةِ البَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ.
وَفِي البَابِ عَنِ ابْنِ عُمَرَ، وَأَبِي هُرَيْرَةَ، وَعَائِشَةَ، وَابْنِ عَبَّاسٍ.
حَدِيثُ جَابِرٍ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ. وَالعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ العِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَغَيْرِهِمْ: يَرَوْنَ الجَزُورَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، وَالشَّافِعِيِّ، وَأَحْمَدَ, وَرُوِي عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ البَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ، وَالجَزُورَ عَنْ عَشَرَةٍ, وَهُوَ قَوْلُ إِسْحَاقَ، وَاحْتَجَّ بِهَذَا الحَدِيثِ، وَحَدِيثُ ابْنِ عَبَّاسٍ إِنَّمَا نَعْرِفُهُ مِنْ وَجْهٍ وَاحِدٍ.
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে আমরা হুদাইবিয়ার বছর এক গরুতে সাতজন এবং এক উটে সাতজন করে শরীক কুরবানী করি।
আর এ বিষয়ে হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর, হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ, হযরত আয়শা রাঃ এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এরও হাদীস রয়েছে।
জাবের রাঃ এর বর্ণিত উক্ত হাদীসটি হাসান সহীহ।
আর এ উপরই রাসূল সাঃ এর সাহাবীদের মাঝে যারা আহলে ইলম তাদের ও অন্যান্যদের আমল চালু হয়েছে। আর সেটি হল, উট সাতজনের পক্ষ থেকে এবং গরু সাতজনের পক্ষ থেকে।
এটাই ইমাম সুফিয়ান সাওরী, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ রহঃ এর মত।
এছাড়া আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় গরু সাতজনের পক্ষ থেকে এবং উট দশজনের পক্ষ থেকে। এটা ইমাম ইসহাক রহঃ এর বক্তব্য। আর তিনি উপরোক্ত হাদীসটি দিয়ে দলীল দিয়ে থাকেন। ইবনে আব্বাস রাঃ এর উক্ত হাদীসটি আমরা একটি সনদে পাই। {তিরমিজী, হাদীস নং-৯০৪}
ইমাম তিরমিজী রহঃ এর তাহকিক খেয়াল করলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। উট ও গরুতে সাতজন করে শরীক হওয়া যাবে। চাই সে মুকীম হোক বা মুসাফির। মুকীম ও মুসাফিরের কোন পার্থক্য হাদীসে বর্ণিত হয়নি।
মুকীম ও মুসাফিরের হুকুমের ভিন্নতা লা-মাযহাবী আসাদুল্লাহ গালিব সাহেবের মনগড়া বক্তব্য। এর স্বপক্ষে কোন দলীল নেই।
আর দশজনের পক্ষ থেকে উট কুরবানীর যে বিষয়টি এসেছে তার জবাব হল-
১-সাতজনের পক্ষ থেকে কুরবানী সংক্রান্ত হাদীসটি অনেক সাহাবী থেকে বর্ণিত। সেই সাথে তা প্রায় সকল মুহাদ্দিস ও ফক্বীহদের মত। আর দশজনের মতটি একজন সাহাবী থেকে ও একজন ফক্বীহ থেকে বর্ণিত। তাই দশজনের মতটি গ্রহণ করা হয়নি।
২
দশজনের কুরবানী সংক্রান্ত হাদীসটি সহীহ হলেও সরীহ তথা আপন বিষয়ে পরিচ্ছন্ন নয়।দশজনের শরীক সংক্রান্ত হাদীসটি যা ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তাতে একটি সম্ভাবনা এই রয়েছে যে, যেহেতু সফর অবস্থায় কুরবানী ওয়াজিব নয়। তাই সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন গোস্ত ঈদের খুশিতে পশু জবাই করেছেন দশজনে মিলে। কুরবানী হিসেবে করেননি। কারণ তাদের উপর তখন কুরবানী আবশ্যক ছিল না।
তাই সফর অবস্থার উক্ত হাদীসটিকে কুরবানীর জন্য ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।
তাছাড়া এমনো হতে পারে যে,মূলত কুরবানী করার পর গোস্ত বন্টন সংক্রান্ত বিষয় বলা হয়েছে উক্ত হাদীসে। মানে হল, কুরবানী করার পর গরু ছোট হওয়ায় তা সাতজনকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে, আর উট বড় হওয়ায় দশজনকে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এখানে কুরবানী কত ভাগে করা যাবে এ বিষয়টি উদ্দেশ্য নয়।
যাইহোক এমন আরো অনেক সম্ভাবনাই রয়েছে উক্ত হাদীসে। যা সাত শরীকের হাদীসে নেই। যেমনটি আমরা মুসলিম শরীফ ও তিরমিজী শরীফের হাদীসে দেখতে পেলাম।
তাই গরু ও উটে সাত শরীক জায়েজ এটাই গ্রহণযোগ্য ও হাদীসসম্মত।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।