প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / মাযহাব ও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে লা-মাযহাবীদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য

মাযহাব ও ইমাম আবূ হানীফা রহঃ এর ব্যাপারে লা-মাযহাবীদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য

মুফতী রফীকুল ইসলাম মাদানী

মুসলমানদের বিরুদ্ধে লা-মাযহাবীদের আক্রমণের স্বরূপ

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন, ”তোমার পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করো, হৃদয়গ্রাহী হিকমাতের সহিত বুঝিয়ে এবং শুভেচ্ছামূলক আকর্ষণীয় উপদেশ শুনিয়ে এবং তোমরা (প্রয়োজনে) বিতর্ক করো উত্তম পন্থায়।” আন-নাহল,১২৫   ادع الی سبیل ربک بالحکمۃ والموعظۃ الحسنۃ وجادلھم بالتی ھی احسن)  )

আরো এক আয়াতে আছে, “তোমরা আহলে কিতাবের সঙ্গে মতবিরোধে উত্তম পন্থা পরিহার করো না।” আনকাবুত-৪৬ (لا تجادلوا اھل الکتاب الا بالتی ھی احسن)

এভাবে আল্লাহ তা’য়ালা মূসা (আ.) ও হারুন (আ.) কে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন- “ ফিরাউনের মতো অবাধ্য কাফেরের সাথেও নম্র আচরণ করা উচিত।” ত্বোয়া-হা,৪৪ (فقولا لہ قولا لینا )

বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) অশ্লীলতাকে কোন ক্ষেত্রেই পছন্দ করতেন না। আহমাদ,২/১৯৩ হা.৬৮২৯ (لم یکن رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم فاحشا ولا متفحشا)  এক হাদীসে তিনি বলেন, “ঈমানদারকে গালি দেয়া ফাসেক্বী এবং হত্যা করা কাফেরের কাজ।” আহমাদ – ১/৪৩৯ হা. ৪১৭৭ (سباب المؤمن فسق وقتالہ کفر)

রাসূলুল্লাহ(সা.) আরও ইরশাদ করেন, ” তোমরা পরস্পর ক্রোধ-ক্ষোভ, হিংসা-নিন্দা, গীবত ও সমালোচনা পরিহার করত, ভাই ভাই হয়ে যাও। এভাবে তিনি সাহাবায়ে কিরাম (রা.) কে গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। আবু দাউদ-৫/২১হা. ৪৯১০ (لاتباغضوا ولا تحاسدوا ولا تدابروا وکونوا عباد اللہ اخوانا)

আল্লাহ পাক ইরশাদ  করেন, “ মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর সাহাবীগণ কাফিরদের মোক্ববিলায় ছিলেন অত্যন্ত কঠোর আর পারস্পরিক হৃদ্যতায় ছিলেন পুষ্পকোমল।” সূরা ফাতহ-২৯ (محمد رسول اللہ والذین معہ اشداء علی الکفار رحماء بینھم)

বলা বাহুল্য যে, এ ধরনের আরও অগণিত আয়াত ও হাদীসের দ্ব্যর্থহীন দাবি হচ্ছে দ্বীন-ধর্মের ক্ষেত্রে তর্ক-বিতর্ক অথবা মতবিরোধের প্রয়োজন হলে তা করতে হবে উত্তম পন্থায়-শালীনতার আলোকে। মতবিরোধ ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই চলে আসছে। সাহাবায়ে কিরামের (রা.) মধ্যেও ছিল । কিন্তু তা হতে হবে কুরআন সুন্নাহর সীমারেখা অনুসারে। ক্রোধ-ক্ষোভ, হিংসা-নিন্দা, গীবত-সমালোচনা, গালমন্দ-অশ্লীলতা ইত্যাদি হারাম কাজ পরিহার করত’ সুন্দর ও শুভেচ্ছামূলক উপস্থাপনা, উত্তমপন্থা এবং শালীনতার সাথে তর্ক-বিতর্ক বা মতবিরোধ করা কুরআন-সুন্নাহের নির্দেশ এবং রাসূল (সা.) ও সাহাবা(রা.) গণের আদর্শ। বিস্তারিত উদাহরণ সহ জানার জন্য দ্রষ্টব্য লেখকের বই ”মাযহাব মানি কেন? মতবিরোধ অধ্যায় ।

কিন্তু দুঃখজনক বাস্তব সত্য যে, সাম্প্রতিক কালে কিছু এমন মতাদর্শীর আবির্ভাব ঘটেছে শুধু হিংসা-গীবত, অকথ্য গালমন্দ, অশালীন আচরণ, কুৎসা রটানো, আর অপবাদ দেয়াই এদের নিকট প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অন্যতম হাতিয়ার। বিশেষ করে “ আহলে হাদীস” নামক এ সম্মানজনক উপাধির দাবিদাররা আজ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সকল শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ, মাযহাব অবলম্বী সাধারণ মুসলমান বিশেষতঃ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও হানাফী মাযহাব এবং পাক ভারতের প্রথিতযশা আলিম উলামাগণকে বিদ্বেষী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। সালফে সালেহীন সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা দেয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করা এদের মজ্জাগত অভ্যাসে রূপ নিয়েছে।  ইমাম আবু হানীফা (রহ.) এর নাম শুনলে তারা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। বে-আদব এবং অভদ্র-অশালীন হওয়া তাদের নিকট বীর হওয়ার সমতুল্য। প্রবাদ বাক্যে প্রসিদ্ধ আছে যে, কারো কুফরী কথা বা অশালীন বচন বর্ণনা করা কুফরী বা অশালীন নয়। তাই, আমি তাদের কিছু অশালীন আচরণ ও বিদ্বেষী উক্তি মুসলমানদেরকে অবগত করার ইচ্ছা করেছি। যাতে করে মুসলমানগণ তাদের ধ্যান-ধারণা, অশুভ চক্রান্ত ও দুরভিসন্ধি উপলব্ধি করতঃ এদের ষড়যন্ত্রের জাল থেকে অনুসন্ধিৎসু মুসলমানগণ আত্মরক্ষা ও পরিত্রাণের সুযোগ পায়। আর আগত প্রজন্ম সতর্ক হতে পারে তাদের বিষাক্ত মতবাদ ও হীন চক্রান্ত থেকে।

মাযহাব ও মাযহাব-অবলম্বীদের প্রতি লা-মাযহাবীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া

মাযহাব মানা বা তাক্বলীদ করা এবং মাযহাব-অবলম্বীদের প্রতি বিরাগ-বিদ্বেষ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়েই কথিত “আহলে হাদীস” মতবাদের আত্মপ্রকাশ। তাই, মাযহাব ও মাযহাবপন্থীদের প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অসঙ্গতিপূর্ণ, জঘন্যতম ও ন্যক্কারজনক কটুক্তিপূর্ণ বই-পুস্তক তারা বিনামূল্যে ও স্বল্পমূল্যে বিতরণ করে যাচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ তাদের পুস্তকগুলো থেকে কয়েকটি উক্তি নিম্নে উল্লেখ করা হল।

(ক)

লা-মাযহাবীদের বহুল আলোচিত বই “কাটহুজ্জাতীর জাওয়াব” বইয়ের লিখক মাও. আবু তাহের বর্দ্ধমানী লিখেছে- “তাক্বলীদ হচ্ছে ঈমানদারদের জন্য শয়তানের সৃষ্ট বিভ্রান্তি।” কাটহুজ্জাতীর জওয়াব, পৃ.৮৩

(খ)

অত্যন্ত বিতর্কিত বই “তাওহীদী এটম বোম” বইয়ের প্রণেতা মাওলানা আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া) লিখেন- ”মুক্বাল্লিদগণকে মুসলমান মনে করা উচিত নয়।” তাওহীদী এটম বোম, পৃ.১৫

(গ)

রংপুর শাইলবাড়ী নিবাসী মুহা. আব্দুল কাদের লিখেন- “মাযহাবীগণ ইসলাম থেকে বহিষ্কৃত, তাদের মধ্যে ইসলামের কোন অংশ নেই।” তাম্বিহুল গাফেলীন, আব্দুল কাদির রচিত পৃ.৭

(ঘ)

“ই’তেছামুস সুন্নাহ” গ্রন্থের রচয়িতা মাও. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদী লিখে-”চার ইমামের মুক্বাল্লেদ এবং চার তরিকার অনুসারীগণ মুশরিক ও কাফির।” ইতেছামুস সুন্নাহ পৃ.৭-৮

এভাবে “জফরুল মুবিন” প্রণেতা মৌ. মুহিউদ্দীন, তরজমানে ওহহাবিয়্যাহ প্রণেতা নবাব ছিদ্দীক হাসান খান এবং লা-মাযহাবীদের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাতওয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে নাজিরিয়ার সংকলক মৌ. নাজিমুদ্দীন প্রমুখ মাযহাব-অবলম্বীদেরকে কাফির, মুশরিক, বি’দআতী ও জাহান্নামী বলে ফতোয়া দিয়েছে। দ্রঃ জফরুল মুবিন, পৃ.১৮৯-২৩০-২২৩ তরজমানে ওহহাবিয়্যাহ  পৃ. ৩৫-৩৬ ফতোয়ায়ে নাযীরিয়া।১/৬৯-৯৭

পর্যালোচনা

এ ধরনের অগণিত ন্যক্কারজনক অশালীন বাক্যে তাদের বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা ভরপুর। কিন্তু কথিত আছে, যে কাপড় খুলে রাস্তার পার্শ্বে মলত্যাগ করে তারতো কোন লজ্জানুভূতি নেই। কিন্তু যে প্রত্যক্ষ করছে সে লজ্জায় কাতর। ঠিক অনুরূপভাবে যারা এ সমস্ত মাতলামী প্রলাপ ব্যক্ত করেছে তাদের কোন লজ্জানুভূতি না হলেও মূলতঃ এগুলোর আলোচনা-পর্যালোচনা করতে আমাদের লজ্জাবোধ হচ্ছে। আমি অবাক যে, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিজীব মানুষ হয়ে তারা এ ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপে কীভাবে লিপ্ত হয়? আবার তারাও দাবি করে যে, মুসলমান(!) এর কয়েক ধাপ এগিয়ে তাদের দাবি তারা আহলে হাদীসও বটে(!) এই কী হাদীসের শিক্ষা? উদার চরিত্র ও খুলুকে কারীমের প্রবর্তক মহানবী (সা.)এর উম্মতের এই কী আদর্শ?

সম্মানিত পাঠক! শি’য়া সম্প্রদায় ও লা-মাযহাবীদের গুটিকয়েক ব্যতীত মুসলিম উম্মাহর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শরীয়ত বিশেষজ্ঞগণ, সমস্ত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, হাদিস সংকলক, ব্যাখ্যাকারক প্রায়  সবাই কোনো না কোনো মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। ইমাম বুখারী, মুসলিম, আবু-দাউদ, তাহাবী, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনে-মঈন, ইবনে তাইমিয়্যাহ, মোল্লা আলী ক্বারী, হাফেয যাহাবী , ইবনে হাজার আসক্বালানী প্রমুখ সকলেই তো এ পথের পথিক। বিস্তারিত জানার জন্য,দ্র. আমরা কেন মাযহাব মানি। “বিশ্বের যাঁরা মাযহাব মানে আর যারা মানে না” অধ্যায়।

তারা সবাই যদি কাফির-মুশরিকই হয়ে থাকে তাহলে, তাদের সংকলিত হাদীস ও মতামত তারা গ্রহণ করে কোন হাদীসের ভিত্তিতে? অনুরূপভাবে হাদীসের বর্ণনাকারীগণও তো কোন না কোন মাযহাবের মুকাল্লিদ ছিলেন। বিস্তারিত জানার জন্য,দ্র. আমরা কেন মাযহাব মানি। “বিশ্বের যাঁরা মাযহাব মানে আর যারা মানে না” অধ্যায়।

এদের বর্ণনার উপর লা-মাযহাবীদের আস্থা ও বিশ্বাস হয় কোন দলীলের মাধ্যমে?

দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে বিদআ’তী, কাফির, মুশরিক ও জাহান্নামী আখ্যায়িত করে শুধু তারা গুটি কয়েকজন বেহেশতে বসবাস করতে চায়। আল্লাহর বেহেশত কি তাদের সংকীর্ণ হৃদয়ের মত এতোই ছোট? তারা দুনিয়ার সবাইকে বিদআ’তী, কাফির, মুশরিক, আর জাহান্নামী আখ্যায় আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা এ যাবৎ মুসলমান করেছেন কতোজনকে? বেহেশতী বানিয়েছেন কতোজনকে? তারা কি মানুষকে কাফির-মুশরিক বানানোর দায়িত্ব পেয়েছে না মুসলমান বানানোর?

তাদের এ অবস্থার প্রতি বিব্রতবোধ করে মুজাদ্দেদে আলফে সানী (রহ.) কতইনা সুন্দর কথা বলেছেন-

“মাযহাব অমান্যকারীরা যদি এমন বিশ্বাস নিয়ে বসে থাকে, তাহলে তাদের এ ভ্রান্ত ধারণা অনুযায়ী মুসলমানদের সামান্য কয়জন বাদ দিয়ে, বৃহত্তর অংশই তো বিদআ’তী, মুশরিক , কাফির বা পথভ্রষ্ট হিসেবে বিবেচিত হতে বাধ্য। তাই এমন ধারণা তো শুধু  এই মূর্খ বা আহমকই করতে পারে, যে স্বয়ং তার মূর্খতারই খবর রাখে না। অথবা সেই যিন্দীক্ব বা নাস্তিকের জন্যই এমন ধারণা-পোষণ শোভা পায়, যার উদ্দেশ্য বা আকাক্সক্ষা হচ্ছে মুসলমানদের বৃহত্তর অংশের মধ্যে নিরাশা সৃষ্টি করত, খোদ দ্বীন ইসলামকেই আংশিক বা পুরোপুরি অচল করে দেয়া। উক্ত ধারণা পোষণকারী শ্রেণীর লোকজন গুটিকয়েক হাদীস মুখস্ত করত শরীয়তের সমস্ত বিধি-বিধান শুধু এই কয়েকটি হাদীসের মধ্যেই সীমিত হবার বদ্ধমূল ধারণা নিয়ে বসে আছে। নিজের অজানা সবকিছুকে তারা অস্বীকার করে চলেছে।” মাকতুবাতে ইমাম রাব্বানী , ২/১০৭-১০৮ মাকতুব নং-৫৫(ফার্সী)

ইমাম আবু হানীফা (রহ.)ও হানাফী মাযহাবের প্রতি লা-মাযহাবীদের বিদ্বেষ

তথাকথিত আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবীদের হিংসাত্মক কার্যক্রম ও বিদ্রোহী প্রোপাগা-ার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করলে স্বাভাবিকভাবেই বলতে বাধ্য যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ও হানাফী মাযহাবের প্রতি বিদ্বেষ আর যুদ্ধ-বিগ্রহের উপরই তাদের ভিত্তি, এ জন্য-ই এদের উৎপত্তি। অনাগ্রহ সত্বেও প্রয়োজনের তাগিদে এদের কয়েকটি জঘন্যতম ঘৃন্য ও বলগাহীন প্রলাপ মাত্র উদাহরণ স্বরূপ প্রদত্ত হল-

(ক)

লা-মাযহাবীদের অন্যতম পুরোধা মাও. নূর মুহাম্মদ তার স্বীয় গ্রন্থ “ইছবাতে আমীন বিল জাহর” এ লিখেন- “হানাফী ও ইয়াহুদীদের মধ্যে ১০টি বিষয়ে সামঞ্জস্য রয়েছে।“ ইছবাতে আমীন বিল জাহর, পৃ. ২০

(খ)

আদদেওবন্দীয়া নামক বিতর্কিত কিতাবের ভাষ্য নিম্নরূপ-

قال الشیخ سیف الرحمن: (ان یھود اھل السنۃ ھم المقلدون الجامدون وخاصۃ بعض الاحناف)

শেখ সাইফুর রহমান বলেন- “ আহলে সুন্নাতের ইয়াহুদী হল রক্ষণশীল মাযহাবপন্থীরা, বিশেষতঃ কিছু হানাফী। আদদেওবন্দিয়া , পৃ.৪৫০

(গ)

লা-মাযহাবী আলিম মাও.আব্দুল মান্নান সিরাজনগরী (বগুড়া) লিখেন- “হানাফী মাযহাবের মাসআলা কাফির হিন্দুদের পঞ্চভ্রাতাদের মাসআলার চাইতেও জঘন্য-ঘৃণ্য।” তাওহীদী এটম বোম,পৃ. ৬৬ অনুরূপ” আমি কেন মুসলিম হইলাম” সুজাউল হক, ৫-১৭

(ঘ)

মাযহাবীদের যুক্তির সন্ধান, বইয়ের লিখক মাও. আব্দুর রহমান লিখে- “ হানাফী মাযহাব ৭২টি জাহান্নামী দলের একটি দল।” মাযহাবীদের যুক্তির সন্ধানে ভূমিকা

(ঙ)

রংপুর জেলার শাইলবাড়ি নিবাসী মৌ. আব্দুল কাদের এবং কথিত নব মুসলিম সুজাউল হক লিখেছে-” আবু হানীফা মানুষের মন জয় এবং আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে হানীফা নামক সুন্দরী যুবতী মেয়েটির নাম অনুসারে মাযহাবের নামকরণ করেছে।” “তাম্বিহুল গাফেলীন” আঃ কাদির রচিত, পৃ. ১৯, সুজাউল হক নব মুসলিম রচিত “আমি কেন মুসলিম হইলাম” পৃ. ১৯

(চ)

“আমি কেন মুসলিম হইলাম” বইয়ের লিখক সুজাউল হক নব মুসলিম, হানাফী ছিলেন। পেট্টো-ডলারের গরমে লা-মাযহাবী মতবাদ অবলম্বন করতঃ উক্ত বিতর্কিত বই রচনা করে। এ বইয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কেবল ইমাম আবু হানীফা ও হানাফী মাযহাবের প্রতি অপবাদ, অপপ্রচার ও কুৎসা রটানোর চুক্তিতেই লাগামহীনভাবে হীনস্বার্থ চরিতার্থ করেছে। এ বইয়ের ৩,৪,৯ ও ১৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে, হানাফীরা মুরতাদ, ৪ ও ৮ পৃষ্ঠায় লিখেছে- হানাফীরা নাস্তিক। ৫ও১৮নং পৃষ্ঠায় লিখেছে, হানাফীরা ধর্মের দালাল ও প্রতারক, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) সম্বন্ধে উক্ত বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় লিখেছে- “ ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, ইসলামদ্রোহী শত্রুদলসমূহের মধ্যে অন্যতম ইমাম আবু হানীফার নগ্ন ভূমিকার কুৎসিত ইতিহাস।” উক্ত বইয়ের ২১, ২২ , ২৫  ও ২৭ পৃষ্ঠায় ইমাম আবু হানীফার বংশ ও মা-বাবাকেও বিবস্ত্র করে ছেড়েছে সেই “কথিত নব মুসলিম”। বইয়ের নাম “ আমি কেন মুসলিম হইলাম” লিখক , সুজাউল হক, নব মুসলিম, ৪০পৃষ্ঠায় ছাপা।

(ছ)

ফরিদপুরের (গোপালগঞ্জ) ঐতিহ্যবাহী হানাফী শিক্ষাকেন্দ্র গওহরডাঙ্গা মাদরাসার সুদীর্ঘকালের মুহতামিম মাও. আব্দুল আযীয (রহ.) এর পিতৃ অভিশপ্ত ও ত্যাজ্য পুত্র কথিত মাও. আব্দুর রাউফ, আমীর আহলে হাদীস তাবলীগে ইসলাম বাংলাদেশ, তার রচিত বিভিন্ন বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকায় ইমাম আবু হানীফা(রহ.) ও হানাফী মাযহাবের বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড়-তুফান চালিয়েছে। বিশেষতঃ ইমাম আবু হানীফা বনাম ‘আবু হানীফা’ বইয়ের পাতায় পাতায় কুৎসা ও অপবাদ অপপ্রচারের জগতের সবাইকে সে হার মানিয়েছে। কাল্পনিক ও আজগুবি বই-পুস্তকের উদ্ধৃতি ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উক্ত বইয়ের ২য় পৃষ্ঠায় লিখে-

“ইমাম আবু হানীফা ও ফিক্বহের প্রতিষ্ঠাতা আবু হানীফা এক নয় কারণ ফিক্বহের উদ্দেশ্য সৎ ছিল না, ফিক্বহের উদ্দেশ্য হলো মানুষের শয়তানী ইচ্ছাকে পূর্ণ করা এবং সরকারী ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের রায়কে বাস্তবায়িত করা।”

উক্ত বইয়ের ৭ম পৃষ্ঠায় লিখেছে- “ আবু হানীফা বে-ঈমান হয়ে মারা গেছে” , ৮ম পৃষ্ঠায় লিখেছে-” ইমাম আবু হানীফা কাফির হয়ে মারা গেছে”, ১০ম পৃষ্ঠায় লিখেছে- “মুসলিম জাতির মধ্যে আবু হানীফার চাইতে বড় সর্বনাশা সন্তান আর কোনটি জন্মায়নি।” একই পৃষ্ঠায় আরো লিখে-” ইসলামের প্রতি আবু হানীফার কোন শ্রদ্ধাই ছিল না।”

মোটকথা ৩৮ পৃষ্ঠা বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠায় চরম অশ্লীল ও অকথ্য ভাষায় ইমাম আবু হানীফা ও হানাফী মাযাহবের প্রতি তার সীমাহীন ক্ষোভ আর যুদ্ধাংদেহী মনোভাবের বিকাশ ঘটিয়েছে।” বইয়ের নাম , ইমাম আবু হানীফা বনাম আবু হানীফা লেখক মাও. আ. রউফ আমীর আহলে হাদীস তাবলীগ ইসলাম, বাংলাদেশ, এম৪৮, হাউজিং খালিশপুর, খুলনা, প্রকাশকাল, ১৯৯৫ ইং সৌজন্যে আলহাজ্জ মুহা. আব্দুস সবুর, নিউ গ্লোব ট্রেডার্স, ২১৫ বংশাল রোড, ঢাকা, নিচে লেখা আছে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য।

পর্যালোচনা

আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া পটিয়া চট্টগ্রাম-এর বিজ্ঞ মুহাদ্দিস মীর সাহেব (রহ.)-এর গল্প শুনেছিলাম। তিনি বলতেন, জনৈক ব্যক্তি হজ্ব করার জন্য মক্কা শরীফে পৌঁছে ভাবতে লাগল, এতো টাকা-পয়সা খরচ করে এলাম কিন্তু এ যাবৎ কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। তাই সে পরিচিতি লাভের জন্য তাৎক্ষণিক ফন্দি এঁটে যমযম কূপের পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করতে শুরু করে। অদ্ভুত পাগলের কা- সবাই অবাক হয়ে দেখতে থাকে আর জিজ্ঞেস করতে থাকে এই পাগল কে? বাড়ী কোথায়? ইত্যাদি ইত্যাদি। হাজী সাহেব এবার সন্তুষ্টচিত্তে বলতে থাকে, আমার এটাই আকাক্সক্ষা ছিল (!) ইমাম আবু হানীফা ও হানাফী মাযহাব বিশাল কূপ ও মহাসমুদ্রতুল্য, তাই কতিপয় পরিচিতি প্রবণ লোক এতে ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ করতঃ আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে। এতে করে ইমাম আবু হানীফা বা হানাফী মাযহাবের কোন ক্ষতি হয় না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থ তারাই হবে যারা আপন মাথা পাথরের পাহাড়ে টোকা দিচ্ছে।

হানাফী মাযহাবের সুখ্যাতি আজ জগৎজুড়ে, পরিধি বিশ্বজুড়ে। হানাফী মাযহাব ও ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব-বৈশিষ্ট্য এবং অন্যান্য তথ্যপূর্ণ ও তাত্ত্বিক গুণাবলীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে চলমান বিশ্বের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশী মুসলমান এ মাযহাবের সুধাপানে তৃপ্তি লাভ করছেন। এ মাযহাবের বিপুল গ্রহণযোগ্যতা লক্ষ্য করেই একটি কুচক্রী মহল গভীর ষড়যন্ত্র ও হিংসাত্মক আক্রমণে মেতে উঠেছে। তারা কি জানে না যে, এ মাযহাবে রয়েছে কুরআনে কারীমের অগ্রাধিকার, হাদীস শরীফের যথাযথ মূল্যায়ন, শ্রেষ্ঠ ও নির্ভুল দলীল প্রমাণের প্রাধান্য, কুরআন সুন্নাহ ও সমকালীন মাসাইলের লিপিবদ্ধ ও সুবিন্যস্ত  সম্ভার, সীমাহীন সতর্কতায় অটল, অপূর্ব তাত্ত্বিক গবেষণার শ্রেষ্ঠ সমাহার, যুগশ্রেষ্ঠ ও যুগোপযোগী সমাধানের অনন্য উপকরণ। আর ইমাম আবু হানীফার শ্রেষ্ঠত্ব ও বুৎপত্তি তো আছেই। এ সমস্ত বিষয় আমি “ মাযহাব মানি কেন” বইয়ে কুরআন সুন্নাহর আলোকে বিস্তারিত তত্ত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল আলোচনা করেছি। সবাইকে অধ্যয়নের আমন্ত্রন জানিয়ে চলমান পরিসরে অতি সংক্ষেপে কতিপয় তথ্য পেশ করার প্রয়াস পাবো।

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) একটি নাম, একটি ইতিহাস, হাজার-হাজার বই পুস্তকের শিরোনাম। কোটি-কোটি মানুষের স্মরণীয় বরণীয় ও অনুসরণীয়-অনুকরণীয় মহান ব্যক্তি। শ্রদ্ধেয় ও প্রাণপ্রিয় মুখপাত্র, অসাধারণ পথিকৃত ও অপ্রতিদ্বন্ধী পথ প্রদর্শক এবং বিশ্ব মুসলিম জাতির এক ক্ষণজন্মা প্রতিভা। কুরআন-সুন্নাহর দিক নির্দেশনায় তাঁর অসামান্য অবদানের কথা মুসলিম বিশ্ব স্মরণ করবে যুগ যুগ ধরে। তাঁর আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা এবং কুরআন সুন্নাহর গবেষণায় সুনিপূণ কৃতিত্ব আদর্শ হয়ে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত আগত উত্তরসূরীদের পাথেয় হিসেবে। তাঁর মহৎ ব্যক্তিত্ব ও অসাধারণ কৃতিত্ব এবং অনন্য শ্রেষ্ঠত্ব ও বৈশিষ্ট্য শীর্ষক বই-প্স্তুক আজকের বিশ্বে অসংখ্য-অগণিত। আমার জানামতে রাসূলুল্লাহ (সা.)ব্যতীত ইমাম আবু হানীফার সমতূল্য আর কারও জীবনী শীর্ষক এতো সংখ্যক বই-পুস্তক লিখা হয়নি। হানাফী মাযহাবের আলিমগণতো লিখেছেনই, অন্যান্য মাযহাবের যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের সংখ্যাও বেশুমার। প্রিয় পাঠকগণকে এ গুলো অধ্যয়নের আমন্ত্রণ জানিয়ে, এ সমস্ত পুস্তক হতে নির্বাচিত কয়েকটি উক্তি নিম্নে পেশ করছি-

খতীবে বাগদাদী (রহ.)  ইমাম হাম্মাদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি আসাদ বিন আমরকে বলতে শুনেছেন যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)  সাধারণতঃ প্রতি রাতেই পরিপূর্ণ কুরআন শরীফ খতম করতেন। তাঁর কান্নার করুণ শব্দ শুনে প্রতিবেশীদেরও দয়া জাগতো। বিশুদ্ধ সূত্রে সংরক্ষিত আছে যে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) যে স্থানে ইন্তিকাল করেছেন সেখানেই তিনি ৭ হাজার বার কুরআন খতম করেছেন। তারীখে বাগদাদ, ১৩/৩৫৪

অপর সূত্রে লিখেন যে, তিনি (নিষিদ্ধ দিনগুলো ব্যতীত) ধারাবাহিক ৩০ বছর রোযা রেখেছেন। তারীখে বাগদাদ, ১৩/৩৫৬

ইমাম আবু জাফর শীযমারী (রহ.) বর্ণনা করেন, ইমাম শাক্বীক বালখী থেকে, তিনি বলেন-

کان الامام ابو حنفیۃ من اورع الناس، واعلم الناس، اعبد الناس واکرم الناس، واکثر ھم احتیاطا فی الدین۔

ইমাম আবু হানীফা (রহ.) ছিলেন সর্বাপেক্ষা খোদাভীরু, সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ আলিম, সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী, সর্বাপেক্ষা সম্মানী এবং দ্বীন-ধর্মের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা সতর্কতা অবলম্বনকারী।” আল-মিযানুল কুবরা, ১/৮৬

ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.) বলেন- “ আমি কুফায় প্রবেশ করতঃ সেখানকার তদানীন্তন বিজ্ঞ উলামাগণকে জিজ্ঞেস করি, তোমাদের এ শহরে সর্বাপেক্ষা বড় আলিম কে? সবাই ঐক্যমতে উত্তর দেয়, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)।

অতঃপর জিজ্ঞেস করি , সর্বাপেক্ষা খোদাভীরু কে?

সবাই বলে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)

আমি বলি , আধ্যাত্মিকতায় কে সর্বশ্রেষ্ঠ?

সবাই বলে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)

আমি জিজ্ঞেস করি, কে সর্বাপেক্ষা পরহেজগার?

সবাই বলে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)

আমি জিজ্ঞেস করি, কে সর্বাপেক্ষা ইবাদতকারী ও ধর্মীয় ইলম নিয়ে ব্যস্ত?

সবাই বলে, ইমাম আবু হানীফা (রহ.)।

মোটকথা, এমন কোন ভাল গুণ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করি নি , যে ব্যাপারে সবাই বলেনি যে, আমরা ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর থেকে শ্রেষ্ঠ কাউকে জানি না। আল-মিযানুল কুবরা, ১/৮৭ তারীখে বাগদাদ , ১৩/৩৫৮

হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন-

لوکان الدین عند الثریا لذھب بہ رجل من فارس

“দ্বীন ও ধর্মের জ্ঞান আহরণ করা মানুষের পক্ষে যদি এতো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে যে, আকাশের দুর্গম প্রান্ত বা সুরাইয়্যা তারকায় যেয়ে বিলুপ্ত হয়, তবুও পারস্যের এক ব্যক্তি সেখান থেকে দ্বীন আহরণ করতে সক্ষম হবে।” বুখারী, পৃ.৬/৩৭০ হাদীন নং ৪৮৯৭, মুসলিম ৪/১৯৭২,হা.নং-২৫৪৬

রাসুলুল্লাহ (সা.) উপরোক্ত হাদীসে যে পারস্য ব্যক্তির অসাধারণ কৃতিত্বের সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, বিশেষজ্ঞ উলামাদের মতে , বিশেষ করে ইমাম সুয়ূতী , ইমাম ইবনে হাজার মক্কী ও শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহ.) প্রমুখের গবেষণার আলোকে সে সুসংবাদপ্রাপ্ত পারস্য ব্যক্তি হলেন ইমাম আবু হানীফা (রহ.)।

কেননা পারস্য বা অনারবে ইমাম আবু হানীফাই ইতিহাসের একমাত্র প্রথিতযশা ও ক্ষণজন্মা ব্যক্তি যিনি ইলম-প্রজ্ঞা ও ইজতিহাদ-গবেষণায় এ চরম উৎকর্ষতা অর্জন করেছিলেন। তাবয়ীযুছ ছাহীফা, ২০-২১, আল-খাইরাতুল হিসান-২৯ উকুদুয যামান-৪৫

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন-

الناس عیال علی ابی حنفیۃ فی الفقہ

“ ফিক্বহের জগতে পরবর্তীকালের সমস্ত মানুষ ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর সন্তান-সন্ততি ও পারিবারিক সদস্য হিসেবে গণ্য”। তারীখে বাগদাদ, ১৩/৩৪৬

ইমাম বুখারীর অন্যতম উস্তাদ মাক্কী বিন ইবরাহীম (রহ.) বলেন-

کان ابو حنفیۃ أعلم اھل زمانہ

* ইমাম আবু হানীফা সকল বিষয়ে যুগশ্রেষ্ঠ আলিম ছিলেন।” মাকনাতু ইমাম আবী হানীফা, ডঃ হারেসী-১৯২

হাদীস বিশারদদের সর্বজ্ঞ পর্যবেক্ষক ও সর্বশ্রেষ্ঠ নিরীক্ষক ইমাম ইবনে মঈন (রহ. মৃত ২৩৩হি.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ইমাম আবু হানীফা (রহ.) কি নির্ভরযোগ্য হাদীস বিশারদ? উত্তরে তিনি বলেন-

نعم،  ثقۃ ثقۃ

”হ্যাঁ অন্যতম নির্ভরযোগ্য , অন্যতম নির্ভরযোগ্য।” তারীখে বাগদাদ, ১৩/৩৪৫

বুখারী-মুসলিমের শ্রেষ্ঠ বর্ণনাকারী ইমাম শু’বা (রহ.) বলেন-

کان واللہ حسن الفھم جید الحفظ

আল্লাহর শপথ! আবু হানীফার অনুধাবন শক্তি অতি আকর্ষণীয় এবং স্মৃতি শক্তি খুবই প্রখর ছিল।” আল-খাইরাতুল হিসান-৩৪

ইমাম আব্দুল হাই লক্ষ্ণৌভী (রহ.) ইমাম আবু হানীফার উপর অর্পিত অভিযোগ খ-ন করতে গিয়ে লিখেন-

ای شناعۃ فوق ھذا (؟!) فانہ امام تقی نقی خائف من اللہ، ولہ کرامات شھیرۃ فای شئ تطرق الیہ الضعف؟

এর চেয়ে জঘন্যতম ন্যক্কারজনক ও মারাত্মক বিদ্বেষী অপকর্ম আর কী হতে পারে(!) আবু হানীফা মুত্তাক্বী ও খোদাভীরু ইমাম। তাঁর অসংখ্য কারামত সর্বত্র প্রসিদ্ধ আছে, তাহলে কোন কারণে তাঁকে দুর্বলতার অপবাদ দিতে সাহস করেছে?” আর রাফউ, ওয়াততাকমীল-পৃ.৭০

বলাবাহুল্য যে, বিদ্বেষীদের চক্রান্ত আর অবান্তর অভিযোগ থেকে নবী-রাসূল এবং সাহাবাগণও রেহাই পাননি। এভাবে ইমাম নাসাঈ, ইমাম আহমাদ ইবনে ছালেহের সমালোচনা করেছেন। ক্বাইদাতুন ফিল জারহে ওয়াত্তা’দীল, ২৪-২৮

অনেকে আবার ইমাম নাসাঈকে শীয়া বলেছেন। বোস্তানুল মুহাদ্দিসীন, পৃ.১১১

এভাবে ইমাম মালেককে ইবনে আবী জীব এবং ইমাম শাফেয়ীকে ইবনে মঈন অনেক অপবাদে অভিযুক্ত করেছেন। ক্বাইদাতুন ফিল জারহে ওয়াত্তা’দীল, ২৪-২৮ যিকরু আসমায়ি মান তুকুল্লিমা-৪৯   ইবনে খাল্লিকান ইমাম মুসলিমকে জাহমিয়া বলেছেন। ওফায়া’তুল আয়ান , ২/৯১

ইবনে হাযাম ইমাম তিরমীযীকে বলেছেন (مجھول) অজ্ঞাত পরিচয়। মিযানুল ই’তেদাল ৩/৬৭৮

আবু হাতেম ও আবু যুরয়া ইমাম বুখারী থেকে হাদীস সংগ্রহ করা পরিত্যাগ করেছেন। আল জারহ-ওয়াত্তা’দীল, ৭/১৯১    ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম জুহালী ইমাম বুখারীকে মু’তাযিলা, কাফির ইত্যাদি বলেই ক্ষান্ত হননি, বরং মুসলমানদের কবরস্থানে ইমাম বুখারীকে কবর দিতে নিষেধ করেছেন, তাঁকে পরিত্যাগযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন। সিয়ার আলামিন নুবালা, ১২/৪৫৬, তারীখে বাগদাদ , ২/১৩ তাবকাতুশ শাফেয়ীয়াতুল কুবরা, ২/২২৯

কিন্তু মুসলিম উম্মাহ এ সমস্ত মাতলামিপূর্ণ কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপই করেনি। কেননা, এ সমস্ত বাজে কথা গ্রহণ করলে কি তাঁদের হাদীস গ্রহণ করা যেতো? এভাবে ইমাম আবু হানীফার ব্যাপারেও আজে-বাজে মাতলামিপূর্ণ কথা-বার্তা অনেকে বলেছে। এ সমস্ত বাজে প্রলাপের কারণে তাদের নিজেদের মানহানী বৈ আর কিছুই হয়নি। মুসলিম উম্মাহ এগুলোর প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি; বরং উসূলে হাদীসের অবধারিত নিয়ম হলো- যার ইমামাত ও ন্যায়পরায়ণতা সর্বত্র প্রসিদ্ধ হয়েছে ও ব্যাপকতা লাভ করেছে, তার ব্যাপারে কোনো অশুভ উক্তি গ্রহণ করা যাবে না। ক্বাইদাতুন ফিল জারহে ওয়াত্তা’দীল , পৃ. ২৩, দেরাসাতুন ফিল জারহে ওয়াত্তা’দীল, পৃ.৭৬

(কথিত আছে, চামচিকা সূর্যের কিরণ সহ্য করতে না পেরে অনেক গাল-মন্দ করে, কিন্তু এতে সূর্যের কোনো ক্ষতি হয় না।)

আরও জানুন

হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম কি গান বাজনা করতেন?

প্রশ্ন লেখক কবি দার্শনিক জনাব ফরহাদ মজহার তার এক সাক্ষাৎকারে বলেন যে, “ইসলামে গান বাজনা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *