প্রশ্ন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
প্রশ্নঃ এক ভাই নিম্নোক্ত প্রশ্নটি করেছেন।
“তাবিজের কিতাব” লেখক মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মাদ এছহাক (পীর সাহেব চরমনাই)। বই এর ৩১ পৃষ্ঠায় লেখা আছে ” নিম্নোক্ত তাবিজ পুরুষের ডান হাতে এবং ইস্ত্রি লোকের বাম হাতে বাধিলে স্বপ্নদোষ, স্বপ্নে ভয় পাওয়া ইত্যাদি রোগ দূর হইয়া যায় ” এর পর তাবিজের একটি নকসা দেয়া আছে। নকসার প্রথম নাম ” ফিরাউন” দ্বিতীয় নাম ” শয়তান” তৃতীয় নাম ” হামান” এবং চথুরত নাম ” ইবলিশ” ।
এই চারটি নাম যাদের তাদের মনে হয় না কোন মুসলিম এর কাছে অপরিচিত?
তাবিজে এই পাপিষ্ঠ দের নাম আসার পসিবল কি কারণ থাকতে পারে? এবং এদের নামে রোগ কি ভাবে দূর হয়?
স্ক্রিনশট সাথে দিয়ে দিলাম।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এরকম উদ্ভট প্রশ্ন আপনার মনে কেন উদয় হল তা আমাদের বুঝে আসছে না। তাদের নাম কেন আসতে পারবে না? এ মর্মে কুরআনের কোন আয়াত বা হাদীসে নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি?
আর এদের নামে রোগ দূর হবার কথা কি উক্ত স্থানে লেখা আছে নাকি এছহাক রহঃ এর এমন আকিদা কোথাও লেখা হয়েছে?
এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। আর সকল চিকিৎসাই অভিজ্ঞতা লব্ধ বিষয় হয়ে থাকে। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অনেক কিছু বুঝতে পারে। যেমন প্যারাসিটামল খেলে জ্বর ভাল হয়, এটি মানুষের অভিজ্ঞতা।
তেমনি কবিরাজরা তাদের অভিজ্ঞতা দ্বারা কিছু তাবিজ লিখলে নির্দিষ্ট কিছু অসুস্থ্যতা দূরিভূত হয় মর্মে অভিজ্ঞতা দ্বারা বুঝতে পেরেছেন।
এখন কোন ব্যক্তি যদি প্রশ্ন করে “প্যারাসিটামলে রোগ কিভাবে দূর হয়”?
আশা করি আপনার কাছেও প্রশ্নটি হাস্যকর লাগবে। কারণ কিভাবে হয়, তা অভিজ্ঞতা দ্বারা ডাক্তাররা বুঝতে পেরেছেন। এখানে কুরআন ও হাদীস খুঁজতে যাওয়া বোকামী। হ্যাঁ, আকিদা ঠিক রাখতে হবে। এ প্যারাসিটামলের রোগ ভাল করার কোন ক্ষমতা নেই। এটি শুধুই ওসীলা।
তেমনি তাবিজ কবচ। এসবই কবিরাজদের অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়। যদি কোন শিরকী বা কুফরী কিছু না থাকে, তাহলে এসব ব্যবহারে কোন প্রকার খারাবী নেই। যেমন হোমিওপ্যাথী এ্যালুপেথী ওষুধ ব্যবহারে কোন খারাবী নেই। এসব বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা শিশুসূলভ মানসিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
চিকিৎসা পদ্ধতি মানেই সব কিছু আমাদের যুক্তির অধীন হতে হবে এটি বোকামীসূলভ কথা। এর পুরোটাই নির্ভরশীল অভিজ্ঞতার উপর। যেমন
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহঃ কু-দৃষ্টির চিকিৎসায় লিখেছেন-
وَمِنْهَا أَنْ يُؤْمَرَ الْعَائِنُ بِغَسْلِ مَغَابِنِهِ وَأَطْرَافِهِ وَدَاخِلَةِ إِزَارِهِ، وَفِيهِ قَوْلَانِ أَحَدُهُمَا أَنَّهُ فَرْجُهُ. وَالثَّانِي أَنَّهُ طَرَفُ إِزَارِهِ الدَّاخِلِ الَّذِي يَلِي جَسَدَهُ مِنَ الْجَانِبِ الْأَيْمَنِ، ثُمَّ يُصَبُّ عَلَى رَأْسِ الْمَعِينِ مِنْ خَلْفِهِ بَغْتَةً، وَهَذَا مِمَّا لَا يَنَالُهُ عِلَاجُ الْأَطِبَّاءِ، وَلَا يَنْتَفِعُ بِهِ مَنْ أَنْكَرَهُ، أَوْ سَخِرَ مِنْهُ، أَوْ شَكَّ فِيهِ، أَوْ فَعَلَهُ مُجَرِّبًا لَا يَعْتَقِدُ أَنَّ ذَلِكَ يَنْفَعُهُ
“যার কু-দৃষ্টির কারণে নজর লেগেছে তাকে আদেশ দেয়া হবে, সে যেন তার উরুসন্ধি ও পাশের জায়গা ও পায়জামার নীচের অংশ ধৌত করে। পায়জামার নীচের অংশ দু’টি উদ্দেশ্য হতে পারে। ১. যৌনাঙ্গ ধৌত করবে। ২.পায়জামার নীচে শরীরের ডান দিকের অংশ ধৌত করবে। অত:পর, যার নজর লেগেছে, তার পেছন থেকে হঠাৎ সেই পানি তার উপর ঢেলে দিবে। এটি ডাক্তার পদ্ধতি থেকে ভিন্ন। কেউ যদি এটি অস্বীকার করে , কিংবা এটি নিয়ে উপহাস করে, বা সন্দেহ করে অথবা পরীক্ষা করে দেখার জন্য এটি করে তাহলে তার উপকার হবে না। “[আত-তিব্বুন নববী, পৃ.১৩৪, ইবনুল কায়্যিম রহ]
এবার বলুন! কু-দৃষ্টি থেকে বাঁচতে এ কি শিক্ষা দিলেন ইবনুল কাইয়্যিম সাহেব? এ চিকিৎসা পদ্ধতি উলামায়ে দেওবন্দের কিতাবে থাকলে পুরাই ধুম মাচিয়ে দিতো আমাদের লামাযহাবী ভাইয়েরা।
শুধু তাই নয়, আরেকটি চিকিৎসা দেখুন
فإن قيل: فهل تبيح الشريعة مثل ذلك، قيل: إذا تعين طريقا للدواء، ونجاة العبد من الهلكة، لم يكن بأعظم من مداواة المرأة للرجل الأجنبي ومداواته لها، ونظر الطبيب إلى بدن المريض ومسه بيده للحاجة، وأما التداوي بالجماع فلا يبيحه الشرع بوجه ما، وأما التداوي بالضم والقبلة فإن تحقق الشفاء به كان نظير التداوي بالخمر عند من يبيحه، بل هذا أسهل من التداوي بالخمر، فإن شربه من الكبائر، وهذا الفعل من الصغائر، والمقصود أن الشفاعة للعشاق فيما يجوز من الوصال والتلاق سنة ماضية وسعي مشكور”
কেউ যদি প্রশ্ন করে, এভাবে শরীয়তের হারামকে হালাল করছেন? তাকে উত্তর দেয়া হবে, এটি যদি চিকিৎসা হিসেবে সুনিশ্চিত হয় এবং কোন মানুষ ধ্বংস থেকে বেচে যায়, তাহলে পরপুরুষ দ্বারা মহিলার চিকিৎসা কিংবা পরনারী দ্বারা পুরুষের চিকিৎসা, ডাক্তার রোগীর শরীরের গোপন জায়গা দেখা, প্রয়োজনে স্পর্শ করার চেয়ে এটি বড় কিছু নয়। তবে সহবাস দ্বারা চিকিৎসা শরীয়তে বৈধ নয়। নারীকে আলিঙ্গন ও চুম্বনের দ্বারা যদি কারও চিকিৎসা সুনিশ্চিত হয়, তাহলে এটি মদের দ্বারা চিকিৎসার অনুরূপ হবে। বরং এটি মদের দ্বারা চিকিৎসার চেয়ে সহজ ও লঘু। কেননা মদ পান অনেক বড় গোনাহ, সেই তুলনায় এগুলো ছোট। মোটকথা, প্রেমিকদের চিকিৎসা হিসেবে প্রেমিকার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ এটি পুরনো নিয়ম এবং একটি প্রশংসনীয় কাজ” ।
[ রওজাতুল মুহিব্বীন, পৃ.৫১৬-৫১৭, তাহকীক, মুহাম্মাদ উজাইর শামস]উপরোক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে কি বুঝা গেল? সরাসরি কুফরী কোন বিষয় না থাকলে চিকিৎসা বিষয়ে অহেতুক বিতর্ক করার কোন অবকাশ নেই। যদি থাকে, তাহলে প্রথম অভিযোগ আসবে ইবনুল কাইয়্যুম রহঃ এর উপর।
যাইহোক, এসব বিষয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাযত করুন। আমীন।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।