প্রচ্ছদ / প্রশ্নোত্তর / নফল রোযার নির্ধারিত দিনসমূহে কাযা রোযা রাখলে কাযার সাথে সাথে নফলের সওয়াবও কি পাওয়া যাবে?

নফল রোযার নির্ধারিত দিনসমূহে কাযা রোযা রাখলে কাযার সাথে সাথে নফলের সওয়াবও কি পাওয়া যাবে?

প্রশ্ন

আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

আমি সাবাহ্‌। বাংলাদেশ থেকে বলছি।

আমার প্রশ্ন হলোঃ

আমরা জানি যে আরবি মাসের প্রতি ১৩,১৪,১৫ তারিখে এবং প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, মুহররম মাসের ১০ তারিখে ও আরো কিছু দিনে নফল রোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারো যদি জীবনের ফরজ রোজা কাজা থাকে তাহলে এই দিনগুলোতে ফরজ কাজা রোজার নিয়তে রোজা করতে হবে নাকি নফলের নিয়তে রোজা করা যাবে? যদি এই দিনগুলোতে ফরজের কাজা তোলা হয় তাহলে নফলের সওয়াব পাওয়া যাবে কি?

বিস্তারিত বললে উপকৃত হব।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

ফরজ রোজা কাযা হলে তা পরবর্তীতে আদায় করে নেয়াও ফরজ। কারণ পবিত্র কুরআনে কাযা রোযা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে-

فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ [٢:١٨٥]

কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোযা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। {সূরা বাকারা-১৮৫}

আর আপনি যেসব রোজার কথা বলেছেন তা সুন্নত। সুন্নতের তুলনায় ফরজের গুরুত্ব কতটুকু তা আশা করি বলার প্রয়োজন নেই।

তাই নফল রোযা রাখার আগে ফরজ রোযার কাযাগুলো আগে আদায় করাই সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘরের দরজা না লাগিয়ে আগে ঘরে ফার্নিচার লাগানোর মতই হাস্যকর কাজ হল ফরজ রোযার কাযা আদায় না করে নফল রোযা রাখা।

তবে দরজা না লাগিয়ে যেমন ঘরে ফার্নিচার লাগালে ফার্নিচার আনা হয়ে যায়, তেমনি ফরজ রোযার কাযা আদায় না করে নফল রোযা রাখলেও তা আদায় হবে। বাকি ফরজের কাযার জন্য আখেরাতে পাকরাও হতে হবে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত।

আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, এসব নফল রোযা রাখার বিশেষ দিনগুলোতে আগের কাযা রোযা রাখলে কাযা আদায়ের সাথে সাথে নফলের সওয়াব হবে কি না?

রোযা রাখবে ফরজের কাযার। তাই শুধু কাযা রোযাই আদায় হবে। নফল রোযার সওয়াব হবে না। {ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ-৬/৩০৬}

বাকি যেহেতু দিনগুলো বিশেষ রোযার সাথে খাস ছিল। তাই এদিন রোযা রাখার দ্বারা উক্ত বিশেষ নফলেরও সওয়াবের আশা করা যায়। বাকি এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের  কোন ঘোষণা নেই। এটি কেবলি রহমানুর রহীম আল্লাহর প্রতি আমাদের আশা ছাড়া আর কিছু নয়।

তবে একই সাথে যদি দুই নিয়তে [রোযার কাযা এবং নফল রোযা] এক রোযা রাখা যাবে না। বরং একটিকে নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে।

وَمَتَى نَوَى شَيْئَيْنِ مُخْتَلِفَيْنِ مُتَسَاوِيَيْنِ فِي الْوَكَادَةِ وَالْفَرِيضَةِ، وَلَا رُجْحَانَ لِأَحَدِهِمَا عَلَى الْآخَرِ بَطَلَا، وَمَتَى تَرَجَّحَ أَحَدُهُمَا عَلَى الْآخَرِ ثَبَتَ الرَّاجِحُ كَذَا فِي مُحِيطِ السَّرَخْسِيِّ.الخ وَإِذَا نَوَى قَضَاءَ بَعْضِ رَمَضَانَ، وَالتَّطَوُّعُ يَقَعُ عَنْ رَمَضَانَ فِي قَوْلِ أَبِي يُوسُفَ – رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى -، وَهُوَ رِوَايَةٌ عَنْ أَبِي حَنِيفَةَ – رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى – كَذَا فِي الذَّخِيرَةِ.

 (الفتاوى الهندية، كِتَابُ الصَّوْمِ وَفِيهِ سَبْعَةُ أَبْوَابٍ، الْبَابُ الْأَوَّلُ فِي تَعْرِيفِهِ وَتَقْسِيمِهِ وَسَبَبِهِ وَوَقْتِهِ وَشَرْطِهِ-1/196-197

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- [email protected]

[email protected]

0Shares

আরও জানুন

ইমামের সামনের সুতরা কি মাসবূক মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট?

প্রশ্ন ইমামের সুতরা মুসল্লিদের জন্য যথেষ্ট কি না? এবং ইমামের সুতরা মসবুক ব্যাক্তির জন্য যথেষ্ট …

No comments

  1. Thanks

Leave a Reply to Rezaul Karim Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *