প্রশ্ন
আচ্ছালামু ‘আলাইকুম ওয়ার’হমাতুল্লাহ
মাননিয় মুফতী সাহেব
আমি আমার একটি সমস্যার সমাধান চাইছি। আনুগ্রহ করে আমাকে এর সমাধান দিবেন।
আমাদের বিয়ে
পারিবারিক ভাবে মেনে নিবে না বলে
আমি ইভাকে নিয়ে আসি ওর বাসা
থেকে এবং ওর বাবা মার অমতে ০৭/১০/১৪
তারিখে কাজী অফিসে বিয়ে করি
ইসলামিক ভাবে এবং রেজিস্ট্রি করে । তার পর ইভাকে আমার বাসায় নিয়ে আসি। পরবর্তিতে ওই দিন রাত্রে ইভার বাবা মা আমাদের বাসায় আসে এবং পারিবারিক ভাবে অনুষ্ঠান করে আমার সাথে বিয়ে দেবার কথা দিয়ে নিয়ে যায়। তার পর থেকে সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তার পর অনেক দিন পর ইভার সাথে আমার ফোনে কথা হয় তাকে দিয়ে তার বাবা মা যোর পূর্বক মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে তালাক দেওয়ায়। কিন্তু আমার কাছে তালাকের কোন নোটিস আসে নাই এবং আমাকে তালাকের ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। তার কিছুদিন পর আবার ইভা পালিয়ে আমার কাছে চলে আসে। তখন তার বাবা মা বলেন তালাক হয়ে গেছে। আমরা আর এক সাথে সংসার করতে পারব না। আবার বিয়ে করতে হলে নাকি হিল্লা বিবাহ করতে হবে। এই বলে ইভাকে আবার ওর বাসায় নিয়ে যায়। পরে আমি জানতে পারি তালাক দেওয়ার কারন হচ্ছে মনের মিল না হওয়া, ঝগড়া বিবাদ। যেহেতু ইভা আমার সাথে একদিনও সংসার করে নাই সেহেতু এই কারন গুলো যুক্তিসংগত নয়। তাহলে কি আমাদের তালাক হয়েছে। আমরা কি আবার নতুন করে বিয়ে করতে পারব? ইভাকে যোর করে বাসায় বন্দি করে রেখেছে এর জন্য আমি কি কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারব?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
এ প্রশ্নের জবাব মূলত আপনাদের বিবাহের কাবিন নামা এবং আপনাকে দেয়া আপনার স্ত্রীর তালাক নামা বা তালাক দেবার শব্দের উপর নির্ভরশীল।এছাড়া বিষয়ের হুকুম এবং কয় তালাক হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়।
মূলনীতি বলে দেই-
যদি কাবিন নামায় স্ত্রীকে তালাক দেবার অধিকার দেয়া হয়ে থাকে, আর স্ত্রী উক্ত শর্তানুরূপ নিজের উপর তালাক পতিত করে থাকে, তাহলে তালাক পতিত হয়ে গেছে বলেই ধর্তব্য হবে। আর যদি তালাক দেবার অধিকার দেয়া না হয়, বা শর্ত মেনে তালাক দেয়া হয়নি, তালাক হয়নি। আপনারা স্বামী স্ত্রী হিসেবেই বাকি আছেন। তাই নতুন করে বিবাহ করার কোন প্রয়োজন নেই।
তাই কাবিন নামা এবং তালাকনামা বা তালাকের হুবহু শব্দ ও তালাকের শর্ত না জেনে এ বিষয়ে সঠিক হুকুম বলা সম্ভব নয়।
পিতা-মাতাকে অসন্তুষ্ট করে বিবাহ করা উচিত নয়। বাকি বিবাহ করার পর অহেতুক বিবাহ ভেঙ্গে ফেলাও উচিত নয়।
وفي رد المحتار- وأنواعه ثلاثة : تفويض ، وتوكيل ، ورسالة وألفاظ التفويض ثلاثة : تخيير وأمر بيد ، ومشيئة .
( قال لها اختاري أو أمرك بيدك ينوي ) تفويض ( الطلاق ) لأنها كناية فلا يعملان بلا نية ( أو طلقي نفسك فلها أن تطلق في مجلس علمها به ) مشافهة أو إخبارا ( وإن طال ) يوما أو أكثر ما لم يوقته ويمضي الوقت قبل علمها ( ما لم تقم ) لتبدل مجلسها حقيقة ( أو ) حكما بأن ( تعمل ما يقطعه ) مما يدل على الإعراض لأنه تمليك فيتوقف على قبول في المجلس لا توكيل ، فلم يصح رجوعه ، حتى لو خيرها ثم حلف أن لا يطلقها فطلقت لم يحنث في الأصح ( لا ) تطلق ( بعده ) أي المجلس ( إلا إذا زاد ) في قوله طلقي نفسك وأخواته ( متى شئت أو متى ما شئت أو إذا شئت أو إذا ما شئت ) فلا يتقيد بالمجلس ( ولم يصح رجوعه ) لما مر (رد المحتار-كتاب الطلاق، باب تفويض الطلاق-4/452)
فى الفتاوى الهندية- لَا يَجُوزُ لِلرَّجُلِ أَنْ يَتَزَوَّجَ زَوْجَةَ غَيْرِهِ وَكَذَلِكَ الْمُعْتَدَّةُ، كَذَا فِي السِّرَاجِ الْوَهَّاجِ. (الفتاوى الهندية، كِتَابُ النِّكَاحِ وَفِيهِ أَحَدَ عَشَرَ بَابًا، الْبَابُ الثَّالِثُ فِي بَيَانِ الْمُحَرَّمَاتِ وَهِيَ تِسْعَةُ أَقْسَامٍ، الْقِسْمُ السَّادِسُ الْمُحَرَّمَاتُ الَّتِي يَتَعَلَّقُ بِهَا حَقُّ الْغَيْرِ-1/280، بدائع الصنائع، كتاب النكاح عدم جواز منكوحة الغير-2/547، زكريا، البحر الرائق، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/108)
وفى رد المحتار- اما نكاح منكوحة الغير ومعتدة لم يقل احد بجوازه فلم ينعقد اصلا (رد المحتار، كتاب النكاح، باب العدة، مطلب فى النكاح الفاسد والباطل-5/197، 4/274، قاضى خان على الهندية-1/366)
فى الفتاوى الهندية- وَلَوْ تَزَوَّجَ بِمَنْكُوحَةِ الْغَيْرِ وَهُوَ لَا يَعْلَمُ أَنَّهَا مَنْكُوحَةُ الْغَيْرِ فَوَطِئَهَا؛ تَجِبُ الْعِدَّةُ، وَإِنْ كَانَ يَعْلَمُ أَنَّهَا مَنْكُوحَةُ الْغَيْرِ لَا تَجِبُ حَتَّى لَا يَحْرُمَ عَلَى الزَّوْجِ وَطْؤُهَا، كَذَا فِي فَتَاوَى قَاضِي خَانْ.. (الفتاوى الهندية، كِتَابُ النِّكَاحِ وَفِيهِ أَحَدَ عَشَرَ بَابًا، الْبَابُ الثَّالِثُ فِي بَيَانِ الْمُحَرَّمَاتِ وَهِيَ تِسْعَةُ أَقْسَامٍ، الْقِسْمُ السَّادِسُ الْمُحَرَّمَاتُ الَّتِي يَتَعَلَّقُ بِهَا حَقُّ الْغَيْرِ-1/280، قاضى خان على هامش الهندية1/366، خلاصة الفتاوى، كتاب الطلاق، الفصل الثامن فى العدة-2/118)
قوله تعالى : ( فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ ( . (البقرة: من الآية230
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।