প্রশ্ন
এক ব্যক্তি বলছে সে রাগ করে তার স্ত্রীকে বলেছে তুমি “ এক তাক, দুই তাক তিন তাক”। স্ত্রীকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে। তালাক দেবার উদ্দেশ্যে বলেনি।
কিন্তু স্ত্রী বলছে তার স্বামী স্পষ্টই তালাক শব্দ বলেছে এমতাবস্থায় হুকুম কী হবে?
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
যদি স্বামীর কথা সত্য হয় তাহলে স্ত্রী তালাক হয়নি। কারণ “তাক” শব্দ দ্বারা তালাক পতিত হয় না।
وان حذف اللام فقط فقال: أنت طاق لا يقع وان نوى، (الفتاوى الهندية، كتاب الطلاق، باب فى ايقاع الطلاق-1/357، البحر الرائق، كتاب الطلاق-3/255)
কিন্তু স্ত্রীর কথা যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলেতো পরিস্কার তিন তালাক পতিত হয়ে গেছে।
তাই স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রী আর হালাল নয়।
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। {বাকারা-২৩০}
কিন্তু এখানে বিষয় হল স্ত্রী বলছে তিন তালাক দিয়েছে আর স্বামী বলছে কোন তালাকই দেয়নি। এখন হুকুম কী?
এক্ষেত্রে ফিক্বহের প্রসিদ্ধতম মূলনীতি হল “মহিলা কাযীর মত”। তথা যদি ইসলামী খিলাফত থাকে, তাহলে আদালতে উক্ত মামলাটি উপস্থাপন করা হবে। যদি স্ত্রী তালাকের পক্ষে সাক্ষ্যি প্রদান করতে পারে, তাহলে তার কথা অনুপাতে তিন তালাক হয়েছে মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হবে। আর যদি না পারে, তাহলে স্বামী কসম করবে। কসম করার দ্বারা তালাক হয়নি বলে সাব্যস্ত হবে। সেই হিসেবে স্ত্রীকে স্বামীর সাথে থাকার অনুমতি প্রদান করবে।
কিন্তু যেহেতু স্ত্রী পরিস্কার জানে যে, তার স্বামী তাকে তিন তালাকই প্রদান করেছে। কিন্তু প্রমাণের অভাবে তা সাব্যস্ত করতে পারেনি। তখন সে নিজেই বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। অর্থাৎ যেমন বিচারক আসল অবস্থা জানলে স্ত্রীকে স্বামীর সাথে থাকতে দিত না, তেমনি স্ত্রীও স্বামীর সাথে থাকবে না। এক্ষেত্রে তার সূরত দু’টি। যথা-
১-স্ত্রী চেষ্টা করবে স্বামীর সাথে খোলা করে তালাক নিয়ে নিতে।
২-যদি এতে সক্ষম না হয়, তাহলে এভাবেই ঘর সংসার করতে থাকবে, এতে করে স্বামীর গোনাহ হবে। স্ত্রীর কোন গোনাহ হবে না।
এবার আপনি নিজেই আপনাদের বিষয়টির সমাধান ও হুকুম নির্ধারণ করে নিতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
وَالْمَرْأَةُ كَالْقَاضِي إذَا سَمِعْته أَوْ أَخْبَرَهَا عَدْلٌ لَا يَحِلُّ لَهُ تَمْكِينُهُ. وَالْفَتْوَى عَلَى أَنَّهُ لَيْسَ لَهَا قَتْلُهُ، وَلَا تَقْتُلُ نَفْسَهَا بَلْ تَفْدِي نَفْسَهَا بِمَالٍ أَوْ تَهَرُّبٍ، كَمَا أَنَّهُ لَيْسَ لَهُ قَتْلُهَا إذَا حُرِّمَتْ عَلَيْهِ وَكُلَّمَا هَرَبَ رَدَّتْهُ بِالسِّحْرِ. وَفِي الْبَزَّازِيَّةِ عَنْ الْأُوزْجَنْدِيِّ أَنَّهَا تَرْفَعُ الْأَمْرَ لِلْقَاضِي، فَإِنَّهُ حَلَفَ وَلَا بَيِّنَةَ لَهَا فَالْإِثْمُ عَلَيْهِ. اهـ. قُلْت: أَيْ إذَا لَمْ تَقْدِرْ عَلَى الْفِدَاءِ أَوْ الْهَرَبِ وَلَا عَلَى مَنْعِهِ عَنْهَا فَلَا يُنَافِي مَا قَبْلَهُ. (رد المحتار، كتاب الطلاق-4/463)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।