প্রচ্ছদ / জিহাদ ও কিতাল / আত্মঘাতি বোমা হামলার হুকুম কী? টুইন টাওয়ারে হামলা ইসলাম ও মুসলমানদের উপকারী ছিল?

আত্মঘাতি বোমা হামলার হুকুম কী? টুইন টাওয়ারে হামলা ইসলাম ও মুসলমানদের উপকারী ছিল?

প্রশ্ন

নামঃ সাবেত বিন মুক্তার

দেশঃ বাংলাদেশ

বিষয়ঃ জিহাদ

প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম। জিহাদের ময়দানে ফিদায়ি হামলা তথা আত্মঘাতী হামলা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? কাফেরদের অর্থনৈতিক ঘাঁটি টুইন টাওয়ারে হামলা শরিয়াতের দৃষ্টিতে কতটুকু গ্রহণযোগ্য? জানাবেন। জাযাকাল্লাহ খায়রান।

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

যেসব রাষ্ট্রে কাফেরদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ চলছে। যেমন আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলার দ্বীনকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে, সেই সাথে মুসলমানদের মাঝে জিহাদী ও শহীদী তামান্না জাগ্রত করার নিমিত্বে কাফেরদের ঘাঁটিতে অস্ত্র বা গোলা বারুদসহ প্রবেশ করা একথা জেনে যে, সেখানে গেলে তার মৃত্যু অবধারিত বা প্রায় নিশ্চিত। সেই সাথে উক্ত হামলার কারণে কাফেরদের ব্যাপক ক্ষতি হওয়া নিশ্চিত বা প্রায় নিশ্চিত ধারণা থাকে, তাহলে উক্ত হামলাকারীর হামলার পদ্ধতি দু’টি হতে পারে। যথা-

প্রথমে শত্রু ঘাটিতে প্রবেশ করবে। তারপর সুযোগ মত নিজের থেকে গোলা বারুদ আলাদা করে শত্রুর উপর নিক্ষেপ করবে। তারপর পরিস্থিতি যা হয়, তা মেনে নিবে।

শত্রু ঘাটিতে নিজে প্রবেশ করে প্রথমে নিজেকে ধ্বংস করবে বোমা ফাটিয়ে। তারপর এ বিস্ফোরণ দ্বারা শত্রুর ক্ষতি হবে।

এ দুই সূরতের মাঝে প্রথমে উল্লেখিত শর্তসমূহ তথা এর দ্বারা আল্লাহর দ্বীন বুলন্দ করা মাকসাদ, সেই সাথে এর দ্বারা কাফেরদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন, মুসলিম যুবকদের মাঝে জিহাদ ও শহীদ হবার প্রতি আকাংশ জাগ্রতকরণ ইত্যাদি উদ্দেশ্য থাকার সাথে সাথে ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুতের রুখে দেবার আর কোন পথ ও পন্থা বাকি না থাকে তাহলে আত্মঘাতি হামলা জায়েজ আছে। এর মাধ্যমে উক্ত ব্যক্তি মারা গেলে সে শরয়ী শহীদ বলেই গণ্য হবে। সেই সাথে শহীদের যত মর্যাদা কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তার প্রতিটি মর্যাদার সে হকদার হবে ইনশাআল্লাহ।

তবে দ্বিতীয় সূরত তথা প্রথমে নিজেকে ধ্বংস করা তারপর এর দ্বারা ক্ষতি সাধন, এ পদ্ধতি বিষয়ে সরাসরি কোন বিধান কিতাবের মাঝে অধমের নজরে পড়েনি। তাই এ পদ্ধতিটিকে পরিহার করাই উচিত বলে মনে হয়।

কিন্তু যেসব রাষ্ট্রে যুদ্ধ চলছে না। বরং বিধর্মী এবং মুসলিমরা একত্র বসবাস করছে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে যেমন বাংলাদেশ এর মত যেসব রাষ্ট্রে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ চলছে না, এসব এলাকা ও রাষ্ট্রে আত্মঘাতি হামলা কিছুতেই বৈধ নয়।

إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [٩:١١١

আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য। {সূরা তওবা-১১১}

(قَوْلُهُ لَمْ يَلْزَمْهُ الْقِتَالُ) يُشِيرُ إلَى أَنَّهُ لَوْ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ جَازَ، لَكِنْ ذَكَرَ فِي شَرْحِ السِّيَرِ أَنَّهُ لَا بَأْسَ أَنْ يَحْمِلَ الرَّجُلُ وَحْدَهُ وَإِنْ ظَنَّ أَنَّهُ يُقْتَلُ إذَا كَانَ يَصْنَعُ شَيْئًا بِقَتْلٍ أَوْ بِجَرْحٍ أَوْ بِهَزْمٍ فَقَدْ فَعَلَ ذَلِكَ جَمَاعَةٌ مِنْ الصَّحَابَةِ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – يَوْمَ أُحُدٍ وَمَدَحَهُمْ عَلَى ذَلِكَ فَأَمَّا إذَا عَلِمَ أَنَّهُ لَا يَنْكِي فِيهِمْ فَإِنَّهُ لَا يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَحْمِلَ عَلَيْهِمْ؛ لِأَنَّهُ لَا يَحْصُلُ بِحَمْلَتِهِ شَيْءٌ مِنْ إعْزَازِ الدِّينِ، بِخِلَافِ نَهْيِ فَسَقَةِ الْمُسْلِمِينَ عَنْ مُنْكَرٍ إذَا عَلِمَ أَنَّهُمْ لَا يَمْتَنِعُونَ بَلْ يَقْتُلُونَهُ فَإِنَّهُ لَا بَأْسَ بِالْإِقْدَامِ، وَإِنْ رُخِّصَ لَهُ السُّكُوتُ؛ لِأَنَّ الْمُسْلِمِينَ يَعْتَقِدُونَ مَا يَأْمُرُهُمْ بِهِ فَلَا بُدَّ أَنْ يَكُونَ فِعْلُهُ مُؤَثِّرًا فِي بَاطِنِهِمْ بِخِلَافِ الْكُفَّارِ (رد المحتار، كتاب الجهاد-4/127، الفتاوى التاتارخانية-5/257، الفتاوى الهندية-5/353)

وَأَمَّا مَسْأَلَةُ حَمْلِ الْوَاحِدِ عَلَى الْعَدَدِ الْكَثِيرِ مِنَ الْعَدُوِّ فَصَرَّحَ الْجُمْهُورُ بِأَنَّهُ إِنْ كَانَ لِفَرْطِ شَجَاعَتِهِ وَظَنِّهِ أَنَّهُ يُرْهِبُ الْعَدُوَّ بِذَلِكَ أَوْ يُجَرِّئُ الْمُسْلِمِينَ عَلَيْهِمْ أَوْ نَحْوِ ذَلِكَ مِنَ الْمَقَاصِدِ الصَّحِيحَةِ فَهُوَ حَسَنٌ وَمَتَى كَانَ مُجَرَّدَ تَهَوُّرٍ فَمَمْنُوعٌ وَلَا سِيَّمَا إِنْ تَرَتَّبَ عَلَى ذَلِكَ وَهَنٌ فِي الْمُسلمين وَالله أعلم (فتح البارى، 8/235)

প্রসঙ্গ টুইন টাওয়ার

টুইন টাওয়ারে কারা হামলা করেছে তা আমাদের পরিস্কার নয়। কিন্তু এর দ্বারা পুরো মুসলিম উম্মাহের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই।

এই একটি ঘটনার পর থেকে পুরো মুসলিম জাতিকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের উপর আমেরিকানরা হামলার ছুতো বের করেছে। যা এর আগে হয়নি। সেই সাথে ঢালাওভাবে মুসলমানদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ইহুদী খৃষ্টান মিডিয়াগুলো মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও তথ্যসন্ত্রাসের রসদ জুটিয়েছে।

তাই এ হামলা কিছুতেই মুসলমান ও ইসলামের জন্য আমাদের দৃষ্টিতে উপকারী হয়নি। বরং অনেক ক্ষতির কারণ হয়েছে। তাই আমাদের দৃঢ় সন্দেহ! এ হামলা কোন খাঁটি মুসলমান করেছে নাকি ইহুদীদেরই ষড়যন্ত্রের একটি নীল নকশার বাস্তবায়ন তা আসলেই খতিয়ে দেখা দরকার।

আল্লাহ তাআলা আমাদের হককে হক হিসেবে এবং বাতিলকে বাতিল হিসেবে বুঝে তার দ্বীনের রুজ্জুকে সমুন্নত করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম সালেহপুর, আমীনবাজার ঢাকা।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

 

আরও জানুন

স্ত্রীকে দুই তালাক দিলে কি আবার বিয়ে করতে হবে?

প্রশ্ন দুই তালাক বলে ফেলছি এখন কি আবার নতুন করে বিয়ে করতে হবে? উত্তর بسم …

No comments

  1. আস সালামু আলাইকুম,
    শায়খ উসামা(র) এর পক্ষ নিয়ে বয়ান করেছেন, তিনি বলেছেন যে যতদিন ফিলিস্তিনে হামলাকারী ইসরাইলকে সাহায্য করা বন্ধ করা হবে না ততদিন আমেরিকাকে শান্তিতে থাকতে দেয়া হবেনা”
    সেই হিসাবে বলা যায় হামলা মুজাহিদরাই করেছেন।
    এতে আমেরিকা সুপার পাওয়ার থেকে ১১ বছরের মাথায় হাপানো কুকুরে পরিণত হয়েছে।আর কোথাও আক্রমণ করার শক্তি নেই।

  2. মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম

    পাশ্চাত্যের অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন, যে টুইন টাওয়ার ধবংশের ঘটনা আমেরিকার নিজের ঘটানো ঘটনা ! একটি মাত্র উড়োজাহাজের আঘাতে শততলা বিশিষ্ট বিল্ডিং গুড়ো হয়ে মাটিতে কখনোই মিশে যেতে পারে না!
    টুইন টাওয়ারের কাঠামোর পুরো মাঝখান জুড়ে ছিল স্টিল কোর যার গলনাংক সম্ভবত ২৮০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশী। জেট ফুয়েল সম্ভবতঃ ২০০০ ডিগ্রী এর বেশী তাপমাত্রা উৎপন্ন করতে পারে না। বিজ্ঞানীরা টুইন টাওয়ারের ধ্বংসাবশেষে ন্যানো থারমাইট নামক এক বিষ্ফোরকের উপস্থিতি পেয়েছেন যার মাধ্যমে ঐ ধরণের তাপমাত্রায় পৌছানো সম্ভব। এ সব কিছু থেকেই বোঝা যায়, টুইন টাওয়ারকে “Controlled demolition” করা হয়েছিল। বহু আগে এ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলাম, তাই সব তথ্য ঠিকমত মনে নেই।
    আরেকটা কথা, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ঐ কমপ্লেক্সে টুইন টাওয়ারসহ মোট সাতটি ভবন ছিল। এর মধ্যে আরেকটি ভবন টুইন টাওয়ার ধ্বংশের ৬ ঘন্টা পরে ধ্বসে পড়ে। সেই ভবনটিতে মার্কিন গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষিত থাকত। ওখানে কিন্তু কোন বিমান হামলা হয় নি!

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস