প্রসঙ্গ লাইলি মজনুর প্রেম কাহিনীঃ সত্য না কল্পকাহিনী?
প্রশ্ন
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
আবু ওবায়দার পক্ষ থেকে লুৎফুর রহমান ফরায়েজী কে,
আসসালামুয়ালাইকুম
শ্রদ্বেয় হজরত,
আপনি লিখেছেন লাইলী মজনুর কোন প্রেম কাহিনী কে অলীক ও উপমা বলেছেন। আর বলেছেন এগুলার দলীল নেই। আসলে এগুলার দলীল কুরআন বা হাদীসে নেই। কেননা এই দুইটি নামই উপমা বা উপাদি মূলক নাম।
তবে আমি ইতিহাসের ছাত্র বিধায় এ ব্যাপারে কিছু জ্ঞান আহরনের সুযোগ পেয়েছি। এর কিছু অংশ নীচে দিলাম। বাকি এগুলার সত্যতা তো আল্লাহই ভাল জানেন।
লাইলীঃ অর্থ “রাত”। আরবে মেয়েদের হেঁয়ালিকে, প্রেমিকা সুলভ আচরন কে রাতের সাথে তুলনা করা হয়। তাই হয়ত এখানে মেয়েটির নাম লাইলি বলা হয়েছে।
মজনুঃ অর্থ পাগল। তার দুর্বলতা সূলভ আচরন এবং অস্বাভাবিক প্রেমময় আচরন এর কারনে তাকে মজনু বা উদ্ভ্রান্ত বলা হয়েছে।
আসলে আমার জানামতে এই দুই নারী পুরুষ তাবেইদের যুগের অনেক বিখ্যাত আরব/হিজাজের বাসিন্দা ছিলেন। তাদের মূল নাম আরবের অনেক প্রসিদ্ব এবং গ্রহনযোগ্য কিতাবে বিদ্যমান। মূলত লাইলী এবং মজনু এরা দুইজনই একই এলাকার আত্নীয় (সম্ভবত দুঃসম্পকের চাচাত ভাই বোন) ছিল। মজনু উপাদির ব্যাক্তিটি তারই এক আত্নীয়ের প্রেমে পড়ে। স্বভাবগত ও মানসিক ভাবে সে দুর্বল থাকায় এই প্রেম তার মাঝে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি করে। কিন্তু দারিদ্রতার কারনে সে ছিল অপরাগ। তাই তার চাচা মেয়েটিকে নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। এই বিরহই মজনু উপাদির ব্যাক্তিটিকে একজন বিখ্যাত ও পাগল প্রায় কবিতে পরিনত করে। যে কি শুধু তার ওই হারানো মেয়েটিকে উদ্যেশ্য করে কবিতা লিখে যায়।
অনেক বিখ্যাত আলেম/হাদিস বিসারদ ব্যাক্তির সাথে এই ভ্রমন পিয়াসী মজনুর দেখা হয় আর তারা তার থেকে বিভিন্ন শিক্ষনীয় কবিতা সংগ্রহ করেন।
তবে আমাদের দেশে প্রচলিত লাইলী-মজনু কাহিনী গুলার অনেক অংশই সম্ভবত বানোয়াট বা অতিরিক্ত। কিন্তু মূল কাহিনী বাস্তবসম্মত ও বিশ্বাসযোগ্যই মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি অনেক আধুনিক/নব্য চিন্তাধারার আলেমের কাছে শুনেছি এইগুলা এবং এ সংশ্লিস্ট অনেক কিছুই বানোয়াট। কিন্তু তাদেরকে যখন আমি বলেছি আপনারা ইতিহাসের ওই ওই কিতাব পড়েছেন কিনা ? তাদের জবাব ছিল “এড়িয়ে যাবার”।
আমাদের গবেষণা অনুপাতে আমরা এখনো উক্ত অবস্থানে রয়েছি। যদি আপনার গবেষণায় উক্ত বিষয়টি সহীহ সূত্র পরম্পরায় কোন গ্রন্থে লিপিবদ্ধ থাকে বলে প্রমাণ পেয়ে থাকেন, তাহলে দয়া করে আমাদের কাছে উক্ত গ্রন্থ এবং তার লিখনীগুলো পাঠালে আমরা যাচাই করে দেখতাম।
আমাদের কথাই চূড়ান্ত এ দাবী আমরা করছি না। আমাদের গবেষনা ও পড়াশোনা অনুপাতে এসব ঘটনার কোন ভিত্তিশীল প্রমাণ পাইনি। যদি থেকে থাকে, তাহলে আমাদের কাছে বিষয়গুলো পাঠান। যদি যাচাই করে তা সঠিক হয়, তাহলে আমরা আমাদের বক্তব্য ফিরিয়ে নিতে সচেষ্ট হবো ইনশাআল্লাহ।
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।