প্রচ্ছদ / আহলে হাদীস / বৃহস্পতিবার তাবলীগের মার্কাজে একত্র হওয়া কি বিদআত?

বৃহস্পতিবার তাবলীগের মার্কাজে একত্র হওয়া কি বিদআত?

প্রশ্ন

আমাকে এক আহলে হাদীস বলেছেন যে, রাসূল সাঃ থেকে মুসলিম শরীফে একটি হাদীস আছে। যাতে বলা হয়েছে-

“জুমআর রাতে তথা বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মাঝের রাতকে ইবাদতের জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন।” {সহীহ মুসলিম}

সুতরাং তাবলীগীদের কাছে প্রশ্ন-

১-   বৃহস্পতিবার রাতে তাবলীগী মার্কাজ মসজিদে কেন তাবলীগীরা একত্র হয়?

২-   রাসূল সাঃ এর নির্দেশের বিরুদ্ধে তারা লোকদের দাঁড় করাচ্ছে না?

৩-   তাবলীগীরাতো বলে বেড়ায় যে, তারা লোকদের নবীজী সাঃ এর আনুগত্বের দিকে আহবান করে, রাসূল সাঃ এর নির্দেশ অমান্য করার নাম কি তাঁর আনুগত্বের দিকে আহবান?

৪-   আপনারাই বলুন, তাদের কর্মপদ্ধতিটি কি সঠিক?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আসলে এসব অন্তসারশূণ্য বিদ্বেষমাখা প্রশ্নের উত্তর দিতে মন সায় দেয় না। রাসূল সাঃ এর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে,

عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ

অনুবাদ- হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ইসলামের সৌন্দর্যের মাঝে এটিও একটি যে, অযথা বিষয়কে উপেক্ষা করা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৯৭৬, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৩১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৩৭}

কিন্তু যেহেতু এমন অহেতুক বিষয় নিয়েও মুসলিম জনসাধারণ্যের মাঝে ফিতনা ছড়াচ্ছে নামধারী আহলে হাদীসরা। তাই বাধ্য হয়ে এর জবাব লিখছি।

আসলে চূড়ান্ত অজ্ঞতা আর মুর্খতার দরূন এমন প্রশ্ন উদিত হয়েছে ভাইটির মনে। আসুন আমরা আগে হাদীসটি দেখে নেই-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي، وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, রাতসমূহের মাঝে তোমরা জুমআর রাতকে নামাযের জন্য বিশেষভাবে খাস করো না। আর দিনসমূহের মাঝে জুমআর দিনকে রোযা রাখার জন্য বিশেষভাবে খাস করো না। তবে যদি তোমাদের রোযা রাখার মাঝে এদিন এসে যায়, তাহলে ভিন্ন কথা। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৪৪}

¯্রফে অনুবাদের দিকে খেয়াল করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে রাসূল সাঃ বিশেষভাবে নামায পড়ার জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন। আর পরদিন তথা জুমআর দিনকে বিশেষভাবে রোজার জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন।

আর আমরা সবাই জানি, তাবলীগের মার্কাজে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কি সবাই একত্র হয় বেশি বেশি করে নামায পড়ার জন্য? বা পরদিন রোযা রাখার জন্য? না দ্বীনী কথা শুনে, দ্বীনী বিষয় শিখে দ্বীন পালনের জজবা আনয়নের জন্য?

একথা তাবলীগ সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তারা মার্কাজের মসজিদে একত্র হন, দ্বীনী বয়ান শুনে, দ্বীনী বিষয় শিখে নিজের ঈমানকে তাজা করার জন্য একত্র হন। বেশি বেশি করে সে রাতে ইবাদত করা পরদিন রোযা রাখা ইত্যাদি উদ্দেশ্য হয় না।

তাহলে মুসলিম শরীফের উল্লেখিত তাবলীগের বিরুদ্ধে দলীল হল কিভাবে? এটাতো পুরোপুরোই হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতাসূচক মনোভাব ছাড়া আর কিছুই নয়।

পক্ষান্তরে বৃহস্পতিবারে দ্বীন বয়ান, দ্বীনী মুযাকারা ও দ্বীনী কথা শুনার জন্য মসজিদে একত্রি হওয়ার বর্ণনা রাসূল সাঃ এর নিকটতম সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ থেকে প্রমাণিত।

হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ عَبْدُ اللَّهِ يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيسٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ؟ قَالَ: أَمَا إِنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ أُمِلَّكُمْ، وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا، مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا “

হযরত ওয়াইল রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ রাঃ প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের ওয়াজ নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বলল, হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার মন চায়, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহ করেন। তিনি বললেন, এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হল, আমি তোমাদের ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের [অবস্থার] প্রতি লক্ষ্য রাখি, যেমন রাসূল সাঃ আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন আমাদের ক্লান্তির আশংকায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০}

ইমাম বুখারী রহঃ যে পরিচ্ছেদে এ হাদীস এনেছেন, তার শিরোনাম দিয়েছেন- بَابُ مَنْ جَعَلَ لِأَهْلِ العِلْمِ أَيَّامًا مَعْلُومَةً তথা ইলম শিক্ষার্থীর জন্য দিন নির্দিষ্ট করা।

বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,  بعض النصوص المبينة والضابطة لحكم توقيت الوعظ، তথা কতিপয় সুষ্পষ্ট ইবারত ও মূলনীতি ওয়াজ-নসীহতের জন্য সময় নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। {ফাতহুল বারী}

উল্লেখিত হাদীস এবং ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ এর ব্যাখ্যা দ্বারা একথা সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণ করছে যে, ওয়াজ-নসীহতের জন্য সময় নির্ধারণ করা এটি শরীয়ত সম্মত। এবং খোদ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ নিজেই প্রতি বৃৃহস্পতিবার ওয়াজ ও নসীহত করতেন।

তাহলে তাবলীগের মার্কাজের বয়ান ও নসীহতের জন্য একত্র হওয়া কিভাবে বিদআত হয়?

আল্লাহ তাআলা আমাদের এসব জাহিল ব্যক্তিদের প্রোপাগান্ডা থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযাত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

মুসলমানদের জন্য হিন্দু পরিচয় দিয়ে ইসকনের মিছিলে শরীক হওয়ার হুকুম কী?

প্রশ্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মিছিলে যেসব মুসলমান শরীক হয়, নিজেদের হিন্দু পরিচয় দেয় …

No comments

  1. হক্কানী আলেম সমাজ বাতিলের বিরুদ্ধে এভাবে দাঁতভাঙা জবাব দিলে প্রকৃত ইসলাম সুরক্ষিত থাকবে ইনশাল্লাহ।
    ধন্যবাদ হজরত লুৎফুর রহমান ফরায়েজীকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *