প্রচ্ছদ / তাবলীগ জামাত / নবী পরিবারের প্রতি সম্মানহানীকর বক্তব্য ফাজায়েলে আমলে আনা হয়েছে?

নবী পরিবারের প্রতি সম্মানহানীকর বক্তব্য ফাজায়েলে আমলে আনা হয়েছে?

প্রশ্ন

শায়েখ জাকারিয়া রহঃ ফাযায়েলে আমালে এমন একটি ঘটনা এনেছেন যাতে রাসূল সাঃ এর পরিবারের জন্য সম্মানহানীকর। সেটা হল- হযরত আলী রাঃ জান্নাতী হওয়া নিশ্চিত ও অকাট্য। সেই সাথে তিনি আশারায়ে মুবাশরার অন্তর্ভূক্ত।
অথচ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সাদ বিন জুবায়ের রহঃ কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হযরত আলী রাঃ জান্নাতে আছে না জাহান্নামে? তখন সাদ বিন জুবাইর রহঃ বললেন-আমি যদি জান্নাতে গিয়ে দেখে আসি, এবং জাহান্নামে গিয়ে দেখে আসি তাহলে বলতে পারবো যে, তিনি জান্নাতী না জাহান্নামী।
রাসূল সাঃ এর পরিবারভূক্ত ব্যক্তিত্ব জান্নাতী সাহাবীর ব্যাপারে এমন মন্তব্য করাটা চরম আপত্তিকর। সুতরাং এর দ্বারা আহলে বাইতকে অপমান করা হয়েছে।

জবাব

بسم الله الرحمن الرحيم

হযরত সাদ বিন জুবায়ের ইজতিরারী হালাতে ছিলেন। অর্থাৎ তিনি তখন এমন কথা বলতে বাধ্য ছিলেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ চাচ্ছিল, যেকোন পদ্ধতিতে তাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে জল্লাদ দিয়ে হত্যা করাবে। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যেহেতু হযরত আলী রাঃ কে দেখতে পারতো না, তাই এমন প্রশ্ন করেছে যেন সাদ ফেঁসে যায়। আর সে সুযোগ পেয়ে যায় তাকে হত্যা করার। এ কারণে সাদ বিন জুবাইর রহঃ খুব সুন্দর পদ্ধতিতে বুদ্ধিমত্বার সাথে জবাব দিয়েছেন।
সাদ বিন জুবাইর জবাবে না কুফরী কথা বলেছেন, না মিথ্যা বলেছেন। না তাওরিয়া করেছেন, তথা সত্য গোপন করে উল্টো কথা বলেছেন। বরং তিনি জবাবের পদ্ধতিটি পাল্টে দিয়েছেন। যেমন হযরত মুসা আঃ কে যখন ফেরাইন জিজ্ঞাসা করেছিল যে, ما بال القرون الأولى؟ তথা পূর্বের নাফরমান জাতির কি পরিণাম হয়েছে? তখন এ পশ্নের পরিস্কার জবাবতো এটাই ছিল যে, ওরা সবাই জাহান্নামে আছে। কিন্তু হযরত মুসা আঃ যেহেতু ইজতিরারী অবস্থায় ছিলেন তথা নিরূপায় হালাতে ছিলেন তাই তিনি পরিস্কার জবাবের পদ্ধতি পাল্টে দিলেন। যেন ফেরাউনের কোন সুযোগ না থাকে তাকে ফাঁসিয়ে দেয়ার, কিংবা হত্যা করার। তাইতো হযরত মুসা আঃ জবাব দিলেন-علمها عند ربى তথা এটা আমার আল্লাহ জানেন।
ঠিক তেমনি সাদ বিন জুবাইর ও জবাবের পদ্ধতি পাল্টে এমনটি বলেছেন। তাই এতে রাসূল সাঃ এর পরিবারের প্রতি কোনই অসম্মান করা হয়নি।

নিরূপায় অবস্থায়তো কুফরী কথা বলাও জায়েজ!

হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ কে একবার মক্কার মুশরিকরা পানিতে এমনভাবে চেপে ধরল যে, তিনি একেবারে দিশেহারা হয়ে গেলেন। সে সময় আরবের মুশরিকরা যা চাইল সবই হযরত আম্মারের মুখ দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিল।
হযরত আম্মার বিন ইয়াসির রাঃ যখন মুশরিকদের থেকে ছাড়া পেয়ে রাসূল সাঃ এর দরবারে এলেন, তখন তার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন-“আম্মার! কী খবর?” তিনি বললেন-“ইয়া রাসূলাল্লাহ! খুবই খারাপ সংবাদ! আজ আমার প্রাণ সে পর্যন্ত মুক্তি পায়নি, যতক্ষণ না আমি আপনার শানে মন্দ কথা ও তাদের বাতিল প্রভূদের সত্য বলে উত্তম প্রশংসা করেছি”।
রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসা করলেন-“আম্মার! তোমার মনের অবস্থা কেমন ছিল?” তিনি বললেন-“মন ঈমানের উপর অটল ছিল”।
তখন রাসূল সাঃ অত্যান্ত মমতার সাথে হযরত আম্মার রাঃ এর চোখের পানি মুছে দিলেন। বললেন-“কোন সমস্যা নেই। যদি আবার তোমার সাথে এমন করে, তাহলে তুমিও এমনি করে নিও। এ ঘটনার পর কুরআনে কারীমের এ আয়াত নাজীল হয় যে, “যে ব্যক্তি ঈমান আনার পর আল্লাহ তাআলাকে অস্বিকার করে, তবে যদি অপারগ হয়, আর তার মন ঈমানের উপর থাকে অবিচল। {সূরা নাহল-১৪} (তাহলে কোন সমস্যা নেই) {দ্রষ্টব্য তাবক্বাতে ইবনে সাদ রহঃ}

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

ইমেইল- ahlehaqmedia2014@gmail.com

lutforfarazi@yahoo.com

আরও জানুন

অযুতে কনুই ধৌত না করে নামায পড়লে নামায আদায় হবে কি?

প্রশ্ন আসলে আমি অযু করে নেওয়ার সময় আমার হাতের কনুইয়ের উপর ও উপরিভাগে পানি লাগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *