প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম।
আমার প্রশ্নটি হলো,
যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল নেই, প্রায় সময়ই দু-জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। সংসারের ছোটখাটো বিষয় নিয়েও ঝগড়া লেগেই থাকে।
একদিন স্বামীর উপর গুসল ফরজ ছিল, কিন্তু ওইদিন স্বামী গোসল করতে যাবে, এই মুহূর্তে দুইজনের মধ্যে রাগারাগি হয়, স্বামী আর তখন গোসল করতে পারেনি, এইভাবেই দুজন ঘরে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো, স্বামী শুয়ে ছিল। স্বামী হঠাৎ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তার অফিস টাইম হয়ে গিয়েছে, এখন সে তাড়াহুড়ো করে, গোসল না করেই, না খেয়ে অফিসের জন্য রেডি হয়ে বের হয়ে যাচ্ছে, বউকে বললো পরে এসে গোসল করে নিব, এখন সময় নেই।
এই বলে স্বামী যখন ঘর থেকে বের হবে, ঠিক ও-ই মুহুর্তে স্ত্রী তার পাশে থাকা ১০ মাসের সন্তানকে জোরে পিঠে দুইটা চর মারলো, বাচ্চাটা হাও মা-ও করে কেঁদে দিল, তখন বাচ্চার কান্না শুনে স্বামী আর অফিসে যেতে পারেনি,। স্বামী তখন রাগ হয়ে স্ত্রীকে জোরে থাপ্পর দিল এবং বলতে লাগলো যে,, তুই আমার ছেলেকে কেন মারলি, শূয়রের বাচ্চা কুত্তার বাচ্চা, আমি কি তর মায়ের সাথে ছিলাম, যে আমাকে গোসল করে যেতেই হবে, তুই আমার ছেলেকে কেন মারলি। এতটুকুর পর দুজনেই চুপ হয়ে যায়, স্বামীর আর অফিস যাওয়া হয়নি।
এখন আমার জানার বিষয় হলো, এই যে স্বামী রাগের মাথায় বলে ফেলেছেন, আমি কি তর মায়ের সাথে ছিলাম, এই কথার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়? আশাকরি এই বিষয়ে উত্তরটি দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞ করবে।।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
উক্ত কথার দ্বারা স্ত্রীর উপর কোন তালাক পতিত হয়নি। তবে এভাবে স্ত্রীকে গালি দেয়া, স্ত্রীর গায়ে হাত তোলা সবই গোনাহের কাজ। এহেন গোনাহ থেকে বিরত থাকা এবং অতীত গোনাহের জন্য জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাওয়া আবশ্যক।
আর নাপাক অবস্থায় বেশিক্ষণ থাকা উচিত নয়। দ্রুত গোসল করে নেয়া উচিত।
كل للظ لا يحتمل الطلاق لا يقع به الطلاق (الفتاوى الهندية-1/376، جديد-1/444)
وكذا كل لفظ لا يحتمل الطلاق لا يقع به الطلاق وإن نوى (بدائع الصنائع، زكريا-3/172، قديم-3/108)
ولو قال إن وطئتك وطئت أمى، فلا شيء عليه (الفتاوى الهندية-1/507، جديد-1/564)
أَنَّ صَفْوَانَ بْنَ سُلَيْمٍ، أَخْبَرَهُ عَنْ عِدَّةٍ، مِنْ أَبْنَاءِ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَنْ آبَائِهِمْ دِنْيَةً عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «أَلَا مَنْ ظَلَمَ مُعَاهِدًا، أَوِ انْتَقَصَهُ، أَوْ كَلَّفَهُ فَوْقَ طَاقَتِهِ، أَوْ أَخَذَ مِنْهُ شَيْئًا بِغَيْرِ طِيبِ نَفْسٍ، فَأَنَا حَجِيجُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের কিছু সন্তান তাদের পিতা সূত্রে বর্ণনা করেন যে, যারা ছিলেন পরস্পর ঘনিষ্ঠ। তিনি বলেনঃ সাবধান! যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ সম্প্রদায়ের কোনো ব্যক্তির উপর যুলম করবে বা তার প্রাপ্য কম দিবে কিংবা তাকে তার সামর্থের বাইরে কিছু করতে বাধ্য করবে অথবা তার সন্তুষ্টিমূলক সম্মতি ছাড়া তার কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করবে, কিয়ামাতের দিন আমি তার বিপক্ষে বাদী হবো। [সূনানে আবূ দাউদ, হাদীস নং-৩০৫২]
عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الفَاحِشِ وَلاَ البَذِيءِ
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু’মিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিসম্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৯৭৭]
أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَخَلَ رَهْطٌ مِنَ اليَهُودِ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا: السَّامُ عَلَيْكَ، فَفَهِمْتُهَا فَقُلْتُ: عَلَيْكُمُ السَّامُ وَاللَّعْنَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَهْلًا يَا عَائِشَةُ، فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّهِ» فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوا؟ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” فَقَدْ قُلْتُ: وَعَلَيْكُمْ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার একদল ইয়াহূদী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললঃ আসসামু আলাইকা। (তোমার মরণ হোক)। আমি এ কথার অর্থ বুঝে বললামঃ আলাইকুমুস্ সামু ওয়াল লানাতু। (তোমাদের উপর মৃত্যু ও লা‘নাত)। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ! তুমি থামো। আল্লাহ সর্ব হালতে নম্রতা পছন্দ করেন। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! তারা যা বললোঃ তা কি আপনি শুনেননি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এ জন্যই আমিও বলেছি, ওয়া আলাইকুম (অর্থাৎ তোমাদের উপরও)। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬২৫৬]
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سِبَابُ المُسْلِمِ فُسُوقٌ، وَقِتَالُهُ كُفْرٌ
‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ কোন মুসলিমকে গাল দেয়া ফাসিকী কাজ (জঘন্য পাপ) আর কোন মুসলিমকে হত্যা করা কুফরী। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০৭৬]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “أَكْمَلُ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا أَحْسَنُهُمْ خلقا، وخياركم خياركم لنسائهم
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মধ্যে পূর্ণতর মুমিন সেই ব্যক্তি, যার আচার আচারণ উত্তম। আর তোমাদের মাঝে উত্তম সেই ব্যক্তি যে তার স্ত্রীদের কাছে উত্তম। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪১৭৬}
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ مِنْ أَكْمَلِ الْمُؤْمِنِينَ إِيمَانًا، أَحْسَنَهُمْ خُلُقًا، وَأَلْطَفَهُمْ بِأَهْلِهِ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মুমিনদের মাঝে সেই ব্যক্তি অধিকতর পূর্ণ মুমিন, যে ব্যক্তি সদাচারী এবং নিজ পরিবারের জন্য কোমল এবং অনুগ্রহশীল। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪২০৪, তিরমিজী, হাদীস নং-২৬১২}
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]