প্রচ্ছদ / জুমআ ও ঈদের নামায / অপরাধের কারণে কাউকে জুমআ পড়তে নিষেধ করা মসজিদে জুমআর নামায কি শুদ্ধ হবে?

অপরাধের কারণে কাউকে জুমআ পড়তে নিষেধ করা মসজিদে জুমআর নামায কি শুদ্ধ হবে?

প্রশ্ন

বরাবর,

ফতুয়া বিভাগ।

তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা, বাংলাদেশ।  

বিষয়ঃ জুমাহ সংক্রান্ত।

প্রশ্নঃ

আমরা যেখানে জুমার নামাজ আদায় করি, সে মসজিদটি এলাকার এবং সেখানে আমাদের একটি জামিয়া ও রয়েছে! আর জামিয়ার সকল আসাতিযায়েকেরাম ও সমস্ত ছাত্ররা উক্ত মসজিদে জুমা সহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে থাকেন।

সম্প্রতি একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা আসাতিযায়েকেমের মধ্যে জুমার নামাজ আদায় হওয়া ও না হওয়া নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়!

উত্তর দেওয়ার সুবিধার্থে পুরো ঘটনাটি নিম্নে তুলে ধরা হলো:-

“এলাকার একজন দাগি/ চেছড়া চোর; যে এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে বিভিন্ন সময় চুরি করে থাকে, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ও বিভিন্ন সময় হাতে নাতে ও তাকে ধরা হয়েছে শুধু তাই নয় মাদ্রাসার মটর চুরি ও অন্যের ছাগল চুরি করে এনে মাদ্রাসায় বিক্রি করা এবং বিভিন্ন যায়গা থেকে অন্যের বিবাহিত স্ত্রী এনে ব্যভিচার সহকারে নানান রকমের নানান ধরনের নিন্দিত ও নিষিদ্ধ কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।

তাই এলাকাবাসি সবাই মিলে চোরের পরিবার ও বাবার কাছে বিচার দিলে বাবা বলে আমি এই ছেলেকে ত্যাজ্য করে দিয়েছি!

অতএব তার কোন সমাধান আমার কাছে নেই! তোমরা যা পারো তা করো!

এরপর এলাকাবাসী ধরে তাকে ভালো ভাবে মেরে হসপিটালে ভর্তি করে (এবং তার চিকিৎসা বাবদ যাবতীয় খরচ এলাকাবাসী বহন করে)

কিছু দিন পরে চোর এবং চোরের বাবা (যে ইতিপূর্বে ছেলেকে ত্যাজ্য পুত্র বলে ঘোষণা করেছিল) মিলে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে!

এতে এলাকার যুবসমাজ চোর ও চোরের বাবার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে কোন এক জুমার দিন সকলের উপস্থিতে এক যুবক ঘোষণা করে চোর ও চোরের বাবা যদি মসজিদে আসে তাহলে আমরা আর মসজিদে আসবো না!

সুতরাং তারা আর আমাদের মসজিদে আসতে পারবে না!

তারপর থেকে চোর ও চোরের বাবা তারা আর মসজিদে আসে না”!

এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে হযরত আসাতিযায়েকেরামের মধ্যে উক্ত মসজিদে জুমার নামাজ আদায় হওয়া ও না হওয়া নিয়ে মতানৈক্য দেখা দেয়;

কেউ কেউ বলেন ইজনে আম ফওত হয়েগেছে কেউ কেউ বলেন না ফওত হয়নি!

এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে:-

একঃ

ইজনে আম দ্বারা উদ্দেশ্য কী? এর দ্বারা ইজনে আম বাকি আছে না নেই?

দুইঃ

ইজনে আম ফওত/ বাতিল হওয়ার জন্য শর্ত কী?

তিনঃ

ইজনে আ’মের ক্ষেত্রে যে কেউ নিষেধ করলেই কি হয়? নাকি হাকিম বা কাজি বা রাষ্ট্রপ্রধান নিষেধ করতে হয়?

চারঃ

ইজনে আ’মের নিষেধ যে কোন যায়গার ক্ষেত্রেই কী কার্যকর হবে?

আমাদের দেশের এলাকাগুলোতে তো এক এক গ্ৰামে একাধিক মসজিদ থাকে এক মসজিদে নিষেধ করলে উক্ত ব্যক্তি পার্শ্ববর্তী মসজিদে জুমা আদায় করতে পারে!

এসত্তেও কী ইজনে আম বাতিল হয়ে যাবে?  

কোরআন সুন্নাহ ও ফিক্বাহ শাস্ত্রের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদীর মাধ্যমে উত্তর দানে বাধিত করবেন।

মুহতাজে দোয়া

মুফতী আব্দুর সবুর

মুহতামিম: জামিয়া ইসলামিয়া মারকাযুল উলুম, চরভদ্রাসন ফরিদপুর।

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

  ১

ইজনে আম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: যারা নামায আদায় করাচ্ছেন তাদের পক্ষ থেকে নামায পড়তে কাউকে বাঁধা না দেয়া। ]

বরং যাদের উপর জুমআর নামায ফরজ তাদের সবাইকে উক্ত নামায পড়তে প্রবেশের অনুমতি দেয়া।

যেখানে জুমআর নামায ফরজ এমন ব্যক্তিদের প্রবেশে বাঁধা দেয়া হয়, সেখানে ইজনে আম নেই বলে ধর্তব্য হবে।

নির্দিষ্ট কাউকে তার অপরাধের কারণে বাঁধা প্রদান করায়, উক্ত মসজিদের ইজনে আম বাতিল হয়ে যায় না।

যদিও এভাবে কাউকে নামায পড়তে এভাবে বাঁধা প্রদান করা জায়েজ নয়।

যারা নামায কায়েম করছেন তাদের পক্ষ থেকে বাঁধা প্রদানই ইজনে আম বাতিল হবার জন্য যথেষ্ট। রাষ্ট্রকর্তৃক বাঁধা প্রদান জরুরী নয়।

জুমআ আবশ্যক এমন ব্যক্তিদের প্রবেশে বাঁধা দেয়া সকল মসজিদের ক্ষেত্রেই ‘ইজনে আম’ নেই বলে ধর্তব্য হবে। যদিও উক্ত ব্যক্তির অন্যত্র নামায পড়ার সুযোগ থাকে।    

والإذن العام: أى شرط صحتها الأداء على سبيل الاشتهار، حتى لو أن أميرا أغلق أبواب الحصن وصلى فيه أهله، وعسكره صلاة الجمعة لا تجوز (البحر الرائق، زكريا-2/263-264، كرتاشى-2/151، بدائع الصنائع، زكريا-1/603، رد المحتار، زكريا-3/26، كرتاشى-2/151)

)و) السابع: (الإذن العام) من الإمام، وهو يحصل بفتح أبواب الجامع للواردين كافي فلا يضر غلق باب القلعة لعدو أو لعادة قديمة لأن الإذن العام مقرر لأهله وغلقه لمنع العدو لا المصلي، نعم لو لم يغلق لكان أحسن كما في مجمع الأنهر معزيا لشرح عيون المذاهب قال: وهذا أولى مما في البحر والمنح فليحفظ.

)قوله: الإذن العام) أي أن يأذن للناس إذنًا عامًّا بأن لايمنع أحدًا ممن تصح منه الجمعة عن دخول الموضع الذي تصلى فيه، وهذا مراد من فسر الإذن العام بالاشتهار، (الدر المختار مع رد المحتار، زكريا-3/25-26/ كرتاشى-2/151، مجمع الأنهر، بيروت-1/246)

الشرط السادس: الإذن العام، وهو أن تفتح أبواب الجامع فيؤذن بالناس كافة، حتى أن جماعة لو اجتمعوا فى الجامع، وأغلقوا أبواب المسجد على أنفسهم، وجمعوا لم يجزيهم (الفتاوى التاتارخانية، زكريا-2/577، رقم-3345)

من شرائط الجمعة: هو أداء الجمعة بطريق الاشتهار، حتى أن أميرا لو جمع جيشه فى الحصن، وأغلق الأبواب وصلى بهم الجمعة لا تجزئهم…. ولو لم يأذن للعامة وصلى مع جيشه لا تجوز (بدائع الصنائع، زكريا-1/602)

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ (سورة البقرة-114)

فلا يضر غلق باب القلعة لعدو أو لعادة قديمة لأن الإذن العام مقرر لأهله، وغلقه لمنع العدو لا للمصلى (رد المحتار، زكريا-3/25)

والذى يضر إنما هو منع المصلين لا منع العدو (رد المحتار، زكريا-3/25)

فلو الولاة كفار يجوز للمسلمين إقامة الجمعة ويصير القاضى قاضيا بتراضى المسلمين (رد المحتار، زكريا-3/14)

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: জামিয়াতুস সুন্নাহ কামরাঙ্গিরচর, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল[email protected]

0Shares

আরও জানুন

নামাযী ব্যক্তির কতটুকু সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে? নামাযী ব্যক্তির সামনে বসা ব্যক্তি কি সরে যেতে পারবে?

প্রশ্ন জনাব, আসসালামু আলাইকুম। হযরতের কাছে আমার প্রশ্ন হলঃ ১। নামাজী ব্যক্তির কতখানি সামনে দিয়ে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আহলে হক্ব বাংলা মিডিয়া সার্ভিস