প্রশ্ন
মো: আলামিন ইসলাম ঠিকানা: দিনাজপুর আসসালামু আলাইকুম হুজুর।
হুজুর আমি অনেক দিন ধরে খুব পেরেশানিতে আছি। দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করেন। আমি আর পারছি না। আমার তালাকের ওয়াসওয়াসা আছে। আর আমি ওয়াসওয়াসার কারনে সব শেষ করে ফেলতেছি।আমি এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
১)
আমি একদিন ওয়াসওয়সায় পড়ে। কারন টা বিশ্লেষণ করলাম না। নাইলে প্রশ্নটা বড় হয়ে যাবে। তো ওয়াসওয়াসায় পড়ে বলছিলাম আজকে যদি স্ত্রী কে তার বাবার বাড়ি না নিয়ে যাই তাহলে তালাক। তো ওইদিনেই স্ত্রী কে তার বাবার বাড়ি নিয়ে যাই। মানে শর্ত পুরন করি।কিন্ত সমস্যা টা হলো একদিন মুফতি সাহেবকে মাসআলা জিজ্ঞেস করার সময় তার বাবার বাড়ি না বলে ভুল করে আমার বাবার বাড়ি বলে ফেলি। মনে মুফতি সাহেবকে মাসআলা জিজ্ঞেস করার সময় বলে ফেলি আজকে যদি স্ত্রী কে আমার বাবার বাড়ি না নিয়ে যাই তাহলে তালাক। ভুল করে মুফতি সাহেবকে মাসআলা জিজ্ঞেস করার সময় তার বাবার বাড়ি না বলে আমার বাবার বাড়ি বলে ফেলি। এতে কি কোনো তালাক হবে?? এটা আমি মাসআালা জানার উদ্দেশ্যে ভুল করে বলে ফেলি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়।আর যখন এই ঘটনা টা ঘটে তার কিছু সময় আগে স্ত্রী তার বাবার বাড়ি যায় তাই তাকে সেখান থেকে আনা সম্ভব হয়নি। আজকে যদি স্ত্রী কে তার বাবার বাড়ি না নিয়ে যাই তাহলে তালাক এমন বলছিলাম আর মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে ভুল করে তার বাবার বাড়ি না বলে আজকে যদি স্ত্রী কে আমার বাবার বাড়ি না নিয়ে যাই তাহলে তালাক বলে ফেলি কিন্তু কে তালাক এটা বলি নাই আর কে তালাক এটাতে স্ত্রী কে নিসবত ও করিনাই এতে কি তালাক হবে??
২)
একদিন ওয়াসওয়াসায় পড়ে ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বলছি তুমি(স্ত্রী) যদি বেপর্দায় বাড়ি থেকে বের হও তাহলে তোমার আর আমার মধ্যে কার সম্পর্ক শেষ হবে। আপনি উওর দিছেন কোন তালাক হয়নি। কিন্তু সমস্যা টা হলো উপরে বর্ণিত সম্পর্ক শেষ অনেক মুফতি সাহেব বলতেছিলো কেনায়া কেউ বলতেছিলো ছরীহ তাই আমি ভালো করে জানার জন্য মোট তিন জন মুফতি সাহেবকে বলছিলাম যে আমি শব্দটা উচ্চারণ করছি। মানে মুফতি সাহেবকে বলছিলাম যে আমি স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে বলছি তুমি যদি বেপর্দায় বাড়ি থেকে বের হও তাহলে তোমার আর আমার মধ্যে কার সম্পর্ক শেষ হবে। ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে বলছিলাম তা আর বলি নাই। তো আমি যে মুফতি সাহেবকে উচ্চারণ করার কথা বলছি এতে কি কোনো তালাক হবে?? আমি এই কারনে বলছি যে যদি সম্পর্ক শেষ শব্দটা কেনায়া হয় তাহলে তো আর কোন টেনশন থাকবে না তাই উচ্চারণ করার কথা বলছি। কিন্তু আমি ঠোঁট না খুলে জিহবা নাড়িয়ে বলছিলাম উচ্চারণ করনি তো মুফতি সাহেবকে উচ্চারণ করার কথা বলার কারন কি কোনো তালাক হবে?? আমি মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে বলছি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়
৩)
২ নং প্রশ্নে উল্লেখ মানে একদিন যে বলছিলাম ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তুমি(স্ত্রী) যদি বেপর্দায় বড়ি থেকে বের হও তাহলে তোমার আর আমার মধ্যে কার সম্পর্ক শেষ হবে।এটা কোন কোন মুফতি সাহেব ছড়ীহ বলতেছিলো তাই আমি একটা বুদ্ধি বের করি যে তালাক তো ছড়িহ শব্দ আর স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে যদি ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তালাক বললেও তালাক না হয় তাহলে তো আর কোন টেনশন থাকবে না তাই আমি মোট তিন জন মুফতি সাহেবকে বলি যে আমি স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তালাক বলছি। কিন্তু আমি কোন দিন ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তালাক বলি নাই। এই করনে বলি যে কিছু মুফতি সাহেব সম্পর্ক শেষ শব্দ টাকে ছড়ীহ বলতেছিলো তাই। আর আমি মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে বলছিলাম।তো এতে কি কোনো তালাক হবে?? আমি মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে বলি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয় এতে কি কোনো তালাক হবে??
৪)
২ নং মাসআলা নিতে গিয়ে এক মুফতি সাহেবকে ফোন করি।আর মাসআলা নিতে গিয়ে সব উল্টাপাল্টা হয়ে যায়। আর আমি মুফতি সাহেবকে এমন বলে ফেলি (আমি একদিন স্ত্রী কে উদ্দেশ্য করে ঠোঁট না খুলে শুধু জিহবা নাড়িয়ে তালাক বলছি আপনি বলছেন তালাক হবে না কিন্তু আমি মাসআলা নেওয়ার সময় মুফতি সাহেবকে বলছি যে আমি তালাকটা সরাসরি বলে ফেলছি) হুবহু ব্রাকেটের ভিতরের কথাটা বলি।কিন্তু আমি কোন মুফতি সাহেবকে তালাক সরাসরি বলিনাই। ভুল করে এমন বলে ফেলি। এতে কি কোনো তালাক হবে?? আমি মাসআলা জানার উদ্দেশ্যে ভুল করে এটা বলে ফেলি তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয় এতে কি কোনো তালাক হবে??
৫)
একদিন স্ত্রী বলতেছে আমি আর তোমার বাড়িতে থাকবো না। তো আমি জানি যে এটা তালাক সংক্রান্ত আলোচনা তাই খুব সাবধানে আছি। কিন্তু স্ত্রী যখন বলে আমি আর তোমার বাড়িতে থাকবো না তখন ভুল করে মুখ থেকে ওটাই তো বেরিয়ে গেছে। ওটাই তো দারা আমি চলে যাও উদ্দেশ্য নেইনাই।এতে কি কোনো তালাক হবে?? হুজুর কখনো আমার স্ত্রী কে তালাক দেওয়ার কোন নিয়ত ছিলো না। সব সময় আমার মাথায় শুধু ওই শব্দটাই ঘুরতে থাকে আমি কি করবো। আমার স্ত্রী কে নিয়ে আমি সুখে শান্তিতে আছি। কিন্তু এই তালাকের ওয়াসওয়াসা আমাকে পেরেশানিতে ফেলে দিয়েছে কি করবো একটু পরামর্শ দেন দয়া করে।
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আপনার প্রশ্নোক্ত বিবরণের কোন সূরতেই তালাক হয়নি। তাই পেরেশান হবার কিছু নেই।
আপনার সমস্যাগুলো মাসআলাগত নয়, বরং মানসিক। আপনি মানসিকভাবে অসুস্থ্য। আপনার উচিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানো। এটাই আপনাকে দেয়া আমাদের শেষ প্রশ্নোত্তর।
তালাকের ওয়াসওয়াসওয়া সংক্রান্ত আর কোন প্রশ্ন করবেন না। আপনি যতো বেশি প্রশ্ন করবেন, ততো বেশি আপনার ওয়াসওয়াসার রোগ বাড়বে। নতুন নতুন প্রশ্ন মনে উদয় হবে। আমাদের বারবার ফোন করে নিজেকেও কষ্ট দিবেন না, আমাদের সময়গুলো নষ্ট করবেন না দয়া করে।
আপনার ভালোর জন্য আমাদের উপদেশগুলো মনে চলুন।
১
আজ থেকে তালাকের কোন প্রকার মাসআলা পড়বেন না।
২
যত ওয়াসওয়াসাই আসুক কাউকে তালাক সংক্রান্ত মাসআলা জিজ্ঞাসা করবেন না। তালাক বিষয়ক আলোচনাও কারো সাথে করবেন না। মনকে দৃঢ় রাখবেন আপনার কোন তালাক হয়নি,বা হবেও না।
৩
তালাকের ওয়াসওয়াসা আসলে মনকে দৃঢ় করে ফেলবেন যে, আমার দ্বারা কোন তালাক হয়নি। এটা শয়তান আপনাকে কষ্ট দিতে মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, শয়তান মুমিনকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়।
৪
তালাকের ওয়াসওয়াসা আসতে শুরু করলে, স্ত্রীর সাথে বা কাছের বন্ধুদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠার চেষ্টা করবেন। বিষয়বস্তু পরিবর্তন করে ফেলবেন।
৫
একা থাকবেন না। যখনি ওয়াসওয়াসা শুরু হবে, তখনি স্ত্রীর সাথে বা কাছের কোন আত্মীয় বা বন্ধুর সাথে অন্য কোন বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করবেন।
৬
বেশি বেশি ইস্তিগফার এবং সূরা ফালাক ও সূরা নাস এর আমল করবেন।
৭
একজন বিশেষজ্ঞ মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।
منها شك هل طلق أم لا لم يقع (الأشباه-108، جديد-196)
عدم الشك من الزوج فى الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لو شك فيه لا يحكم بوقوعه (بدائعل الصنائع، كتاب الطلاق، فصل فى الرسالة-3\126، جديد-3\199)
يشترط بالاتفاق القصد فى الطلاق، وهو إرادة التلفظ به ولو لم ينو فلا يقع طلاق فقيه يكره ولا طلاق حاك عن نفسه أو غيره لأنه لام يقصد معناه، بل قصد التعليم والحكاية، (الفقه الاسلام وادلته، كتاب الطلاق، باب شروط الطلاق-7/368)
لو كرر مسائل الطلاق بحضرة زوجته ويقول: أنت طالق ولا ينوى طلاقا لا تطلق، (فتح القدير، كتاب الطلاق، باب ايقاع الطلاق-4/4)
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com