প্রচ্ছদ / নাম ও বংশ/নবজাতক / ভুলে আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে করে সন্তান হয়ে গেলে করণীয় কী?

ভুলে আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে করে সন্তান হয়ে গেলে করণীয় কী?

প্রশ্ন

আসসালামুওয়ালাইকুম উস্তাজ,

আমার আত্নীয় ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। অজ্ঞতা বসত আপন ভাগ্নির মেয়েকে বিয়ে করেন। এবং ২০২২ সালে জানতে পারেন এই বিয়ে ইসলামে হারাম। এর মধ্যে এক ছেলে এক মেয়ে হয়েছে।

তখন কেউ কেউ বলেছিল বিষয়টা গোপন রেখে সংসার করার জন্য। উনি সেভাবেই আরো এক বছর একসাথে থাকে। এর পর তার ব্যাবসা বানিজ্য সব কিছুতে ধস নামা শুরু হয় এবং সে আল্লাহর দিকে ধাবিত হতে শুরু করে। এবং ওই মেয়েকে এক তালাক দিয়ে দেয় ২০২৩ সালে।

কিন্তু মেয়ে কিছুতেই তাকে ছাড়বে না তার সাথে জোর করে হলেও ঘর করবে। তাই তার বাসায় থাকত ওই ফ্লাট সে ছাড়বে, মুলত ফ্লাট টা সে চাচ্ছিল। আর তারা  হারাম হালাল বোঝে না, মানে না।

২০২৪ সালে ওই মেয়েকে তিন কাঠার একটা ফ্লাট ( এই ফ্লাটেই মেয়ে থাকত) দেয়া হয় এবং সাথে  মেয়ের পরিবারের পরিচিত এক ছেলের সাথে বিয়ে দেয়া হয়। সাথে এক বছরের ভরন পোষন দেয়া হয়।

এখন যা জানা জরুরি-

১। যেহেতু বিয়ে হারাম ছিল তাদের বাচ্চারা কি জারজ হিসেবে গন্য হবে নাকি স্বাভাবিক সন্তানের মত হবে।

২। যদি স্বাভাবিক না হয় তাহলে তাদের বংশ পরিচয় কেমন হবে, তাদের সম্পদ বন্টন মাসালা কি এবং তাদের লালন পালনের দ্বায়িত্বের কে বেশি হকদার হবে।

৩। তাদের মা বিয়ে করেছে এবং আগের স্বামির বাড়িতেই নতুন স্বামি নিয়ে আছে এবং মেয়ে বাচ্চাটা তার সাথে আছে। তার দ্বিতীয় স্বামির সাথে বাচ্চাদের সম্পর্ক কি হবে। বা বালেগ হলে পর্দার বিধান কি হবে।

৪। আর ছেলে বাচ্চাটা তার ফুপুর সাথে আছে। তারা একি বাসায় ভিন্ন ফ্লাটে থাকে। আর তাদের বাবা দেশের বাহিরে থাকে। এখন এই বাচ্চাদের বাবা তাদের লালন পালনের জন্য নতুন করে বিয়ে করবে। সেক্ষেত্রে  ছেলে বাচ্চা বালেগ হলে সৎ মায়ের সাথে পর্দার কোন বিধান আছে কি না জানতে চাই।

সর্বপোরি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালে কৃতজ্ঞ হবে। যেন ভবিষতে আর কোন শরীয়তের সীমা লঘ্নন না হয়।

জাযাকাল্লা খাইরন

(নাম গোপন রাখা হলো)

উতরা,ঢাকা-১২৩০  

উত্তর

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم

মাহরামকে বিয়ে করা হারাম। ভুলে মাহরামকে বিয়ে করলে সেটি নিকাহে ফাসিদ হয়। নিকাহে ফাসিদের বিধান হলো এতে করে সন্তানের বংশ পরিচয় সাব্যস্ত হয়। তাই বিয়ে শুদ্ধ না হলেও:

জন্ম নেয়া সন্তানারা জারজ বলে সাব্যস্ত হবে না। বরং তাদের বংশ পরিচয় মা বাবা থেকে প্রমাণিত সাব্যস্ত হবে স্বাভাবিক সন্তানের মতোই। সুতরাং স্বাভাবিক সন্তানরা যেভাবে লালন পালনের হক পায় তেমনি তারাও পাবে, সেইসাথে বাবা মা থেকে মিরাছও পাবে। তবে তাদের আপন পিতা মাতা স্বামী স্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবে না। যেহেতু তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম।

মহিলার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে মহিলার সন্তানদের সম্পর্ক হবে বাবা সন্তানের। পর্দা করা লাগবে না। কারণ তিনি বাবার হুকুমে মাহরাম সাব্যস্ত হবেন।

বাবা বিয়ে করলে সৎ মায়ের সাথে সন্তানদের কোন পর্দা নেই। কারণ বাবার বিয়েকৃত মহিলা সন্তানদের মায়ের হুকুমে চলে আসবে। আর সৎ মায়ের সাথে কোন পর্দা নেই।  

 

‌حُرِّمَتۡ ‌عَلَيۡكُمۡ أُمَّهَٰتُكُمۡ وَبَنَاتُكُمۡ وَأَخَوَٰتُكُمۡ وَعَمَّٰتُكُمۡ وَخَٰلَٰتُكُمۡ وَبَنَاتُ ٱلۡأَخِ وَبَنَاتُ ٱلۡأُخۡتِ وَأُمَّهَٰتُكُمُ ٱلَّٰتِيٓ أَرۡضَعۡنَكُمۡ وَأَخَوَٰتُكُم مِّنَ ٱلرَّضَٰعَةِ وَأُمَّهَٰتُ نِسَآئِكُمۡ وَرَبَٰٓئِبُكُمُ ٱلَّٰتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَآئِكُمُ ٱلَّٰتِي دَخَلۡتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمۡ تَكُونُواْ دَخَلۡتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيۡكُمۡ وَحَلَٰٓئِلُ أَبۡنَآئِكُمُ ٱلَّذِينَ مِنۡ أَصۡلَٰبِكُمۡ وَأَن تَجۡمَعُواْ بَيۡنَ ٱلۡأُخۡتَيۡنِ إِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورا رَّحِيما

তোমাদের প্রতি হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, তোমাদের মেয়ে, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভাতিজী, ভাগ্নি, তোমাদের সেই সকল মা, যারা তোমাদেরকে দুধ পান করিয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মা, তোমাদের প্রতিপালনাধীন তোমাদের সৎ কন্যা,  যারা তোমাদের এমন স্ত্রীদের গর্ভজাত, যাদের সাথে তোমরা নিভৃতে মিলিত হয়েছ। তোমরা যদি তাদের সাথে নিভৃত-মিলন না করে থাক (এবং তাদেরকে তালাক দিয়ে দাও বা তাদের মৃত্যু হয়ে যায়), তবে (তাদের কন্যাদেরকে বিবাহ করাতে) তোমাদের কোন গুনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীগণও (তোমাদের জন্য হারাম) এবং এটাও (হারাম) যে, তোমরা দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করবে। তবে পূর্বে যা হয়েছে, হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আন নিসা – ২৩]  

رجل مسلم تزوج بمحارمه فجئن بأولاد يثبت نسب الأولاد منه عند أبي حنيفة رحمه الله تعالى خلافا لهما بناء على أن النكاح فاسد عند أبي حنيفة رحمه الله تعالى باطل عندهما كذا في الظهيرية (الفتاوى الهندية-1/540)

وفى هذه زيادة تحقيق لقول الإمام لما فيه من تحقيق الشبهة حتى ثبت النسب (رد المحتار، زكريا-6/34)

وأما النكاح الفاسد ، فلا حكم له قبل الدخول ، وأما بعد الدخول ، فيتعلق به أحكام منها ثبوت النسب ومنها وجوب العدة ، وهو حكم الدخول في الحقيقة ومنها وجوب المهر  (بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (ج 6 / ص 177)

إذْ لَا يَجِبُ عَلَيْهَا الِاسْتِتَارُ ‌مِنْ ‌أَوْلَادِ ‌زَوْجِهَا (رد المحتار، زكريا-5/225، كرتاشى-3/537)

 

والله اعلم بالصواب

উত্তর লিখনে

লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল– ahlehaqmedia2014@gmail.com

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

One comment

  1. মাশাআল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *