প্রশ্ন
আসসালামু আলাইকুম। গাজওয়ায়ে হিন্দ নামে যে জিহাদের কথা বলা হয়, সেটা কি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত? বর্তমানে ছানা উল্লাহ সিরাজীর লেখা “কাসিদায়ে নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ.” নামে একটি বই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে লেখক দাবি করেছেন, নেয়ামতুল্লাহ শাহ ওলি কাশ্মিরী রহ. ভারতবর্ষ সম্পর্কে গাজওয়ায়ে হিন্দসহ বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এগুলোর নাকি অনেকগুলো বাস্তবে ঘটেছে। এসব কতটুকু সত্য?
উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গাযওয়ায়ে হিন্দ এর কথা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
১
عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللَّهُ مِنْ النَّارِ عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِمَا السَّلَام
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোলাম ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের দুটি দল আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে জাহান্নাম হতে পবিত্রাণ দান করবেন, একদল যারা হিন্দুস্থানের জিহাদ করবে, আর একদল যারা ঈসা ইবন মারিয়াম (আঃ) এর সঙ্গে থাকবে। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩১৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৩৯৬, আলমু’জামুল আওসাত লিততাবারানী, হাদীস নং-৬৭৪১, সুনানুর কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৮৬০০, মাযমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-৯৪৫৩]
শায়েখ শুয়াইব আলআরনাউত রহঃ বলেন, এটি হাসান হাদীস। [মুসনাদে আহমাদ, ২২৩৯৬ নং হাদীসের টিকা]
শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহঃ বলেন, এটি সহীহ হাদীস। [সিলসিলাতুস সহীহাহ, হাদীস নং-১৯৩৪, সহীহ জামে সগীর, হাদীস নং-৪০১২]
২
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ وَعَدَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَزْوَةَ الْهِنْدِ فَإِنْ أَدْرَكْتُهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي فَإِنْ أُقْتَلْ كُنْتُ مِنْ أَفْضَلِ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ أَرْجِعْ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হিন্দুস্থানের জিহাদের ওয়াদা দিয়েছিলেন। যদি আমি ঐ যুদ্ধের সুযোগ পাই, তা হলে আমি তাতে আমার জান-মাল ব্যয় করব। আর যদি আমি তাতে নিহত হই, তা হলে আমি শহীদের মধ্যে উত্তম সাব্যস্ত হব। আর যদি আমি ফিরে আসি, তা হলে আমি আবূ হুরায়রা হবো আযাদ বা জাহান্নাম হতে মুক্ত। [সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩১৭৬, সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-২৩৭৪, আলফিতান আবূ নূআইম বিন হাম্মাদ, হাদীস নং-১২৩৭, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৮৮১৯, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-৬১৭৭, সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৮৫৯৯]
শেষের হাদীস সনদের বিচারে জঈফ হলেও আগের সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে শক্তিশালী হয়ে যায়।
সুতরাং গাযওয়ায়ে হিন্দ সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এটাকে অস্বিকার করার কোন সুযোগ নেই।
হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ এবং হযরত আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ এর সময়ে হিন্দ বিজয়ে একাধিক যুদ্ধ একাধিক অঞ্চল বিজয় হয়েছে। এছাড়া পরবর্তীতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সময়ে মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বেও বিশাল সফলতা অর্জিত হয়েছে। পরবর্তীতে সুলতান মাহমুদ গজনবী রহঃ এর মাধ্যমে সোমনাথ মন্দির ধ্বংসের মাধ্যমে গাযওয়ায়ে হিন্দের একটি বাস্তবতা পাওয়া যায়।
বাকি এ যুদ্ধ সামনে হতে পারে বলেও উলামাগণ মত প্রকাশ করেছেন। ইতোপূর্বে সুলতান মাহমুদ গজনবী রহঃ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে গেছে বলেও অনেকের মত পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলাই হাকীকত ভালো জানেন।
কুরআন ও বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত বিষয় ছাড়া কোন ব্যক্তি বিশেষের ভবিষ্যতবাণীর ইসলামে কোন মূল্য নেই। তিনি যতো বড় বুযর্গই হোন না কেন। সুতরাং নেয়ামাতুল্লাহ কাশ্মীরী রহঃ এর ভবিষ্যতবাণী বিশ্বাস করার কোন সুযোগ ইসলামে নেই। কারণ, অদৃশ্যের সংবাদ এবং ভবিষ্যতের বিষয় একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। অন্য কারো ক্ষেত্রে তা বিশ্বাস করার কোন সুযোগ নেই।
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ [٦:٥٩]
তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। [সূরা আনআম-৫৯]
قُل لَّا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ ۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ [٦:٥٠]
আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না? [সূরা আনআম-৫০]
عَنْ صَفِيَّةَ، عَنْ بَعْضِ، أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ مَنْ أَتَى عَرَّافًا فَسَأَلَهُ عَنْ شَىْءٍ لَمْ تُقْبَلْ لَهُ صَلاَةٌ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً
হযরত সাফীয়্যাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন স্ত্রীর সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আররাফ (গণকের) কাছে গেল এবং তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, চল্লিশ রাত তার কোন সালাত কবুল করা হয় না। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৫৬২৭]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।
উস্তাজুল ইফতা: কাসিমুল উলুম আলইসলামিয়া, সালেহপুর আমীনবাজার ঢাকা।
পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।
শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
ইমেইল– [email protected]