তালাকের নিয়ত ছাড়া “তোমার যেহেনে খুশি সেখানে যাও” বলার দ্বারা কি কোন তালাক হবে?

প্রশ্ন

নাম: এইচ.এম.আসাদুজ্জামান।

ঠিকানা:  বর্তমান- কুমিল্লা। স্থায়ী -ঢাকা।

আমি পেরেশানিতে আছি। আমার লিখাটা গুরুত্ব দিয়ে পড়ার অনুরুধ করছি।
আমার যতদূর বা যতুটুকু মনে হয় তা লিখতেছি।একদিন আমি রাগ করে আমার বউকে অনেক খারাপ কথা বলেছি,খারাপ ব্যবহার করেছি,গালি দিছি। রাস্তায় মাদরাসা লাইনের এক ব্যাক্তির কাছে বিস্তারিত বলেছি যে আমি আমার বউয়ের সাথে এমন এমন কথা বলেছি এর দ্বারা তালাক হইছে কিনা?সে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছে তালাক বা তালাক জাতীয় কোন কিছু আমি বলেছি কিনা? আমি ঐ ব্যাক্তিকে বলেছি  এ ধরনের কোন কথা আমার স্ত্রীকে  আমি বলি নাই। উত্তরে সে বলেছে তালাক হয় নাই। ঐ ব্যাক্তির নিকট থেকে চলে আসার পর আমার কেন  জানি মনে হলো ঐ ব্যাক্তির সাথে কথা বলার সময় আমি হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নেড়েছিলাম। আমি কেন হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নেড়েছিলাম তা মনে করতে গিয়ে এক সময়   ইচ্ছাকৃতভাবে মনে মনে বলি —— আপনি কি তালাক দিয়েছেন এই কথা বলার পর হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছি। বা আপনি কি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এই কথা বলার পর হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছি। এই ২ ঘটনার যে কোন একটা বা দুনোটাই ঘটেছে। যাই হইছে আমার মনে কোন প্রকার তালাক দেওয়ার  নিয়ত ছিলো না। আমি বুঝতেছিনা এবং আমি মনে করতে পারতেছিনা- আমি যে  মনে মনে বলেছি এবং হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছি ঐ ঘটনা আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে করা হইছে কিনা।আমি আবারো বলতেছি আমার মনে কোন প্রকার তালাক দেওয়ার  নিয়ত ছিলো না। ঐ কথাগুলো  মনে মনে বলা এবং হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়ানোর কোন দরকার বা প্রয়োজন আমার ছিলো না। আমি কেন ঐ কথাগুলো বলেছিলাম এবং হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছিলাম তা নিজে নিজে বিশ্লেষণ করেছি, এবং বিশ্লেষণ করে পাই – রাস্তায় যে ব্যাক্তির কাছে আমি বিস্তারিত বলেছিলাম এবং তালাক হইছে কিনা জানতে চাইছিলাম ঐ ব্যাক্তি ঐ রকম কোন কথা বলেছিলো কিনা যে – আপনি কি তালাক দিয়েছেন বা আপনি কি আপনার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, এই কথাগুলো আমাকে বলেছিলো কিনা? বলার সময় বা বলার পরে আমি হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছিলাম কিনা। বা ঐ ব্যাক্তি ঐ জাতীয়  বা তালাক জাতীয় কোন প্রশ্ন আমাকে করেছিলো কিনা? প্রশ্ন করার সময় বা প্রশ্ন করার পরে আমি হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছিলাম কিনা।বা ঐ ব্যাক্তি কি বলেছিলো,  কি বলার সময় বা কি বলার পরে আমি হ্যাঁ বোধক ভাবে মাথা নাড়াইছিলাম তা মনে করতে গিয়ে বা কল্পনা করতে গিয়ে বা চিন্তা করতে গিয়ে এমনটা হইছে  বা এই ঘটনাটা ঘটেছে। এই ঘটনা ঘটার পরবর্তী  সময়ে আমি একজন মুফতি সাহেবের কাছে যাই।      (আমি আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছি বা বলছি)  ব্রেকেটে লিখা এই কথাটা আমি ঐ মুফতি সাহেবের কাছে বলেছি,,ব্রেকেটে লিখা এই কথাটা  আমি মুফতি সাহেবের কাছে যে বলেছি তা আমি ভূল বলেছি বা ভূলে বলেছি বা ভূল করে বলেছি। এগুলো কি ইচ্ছাকৃত ভূল করা নাকি অনিচ্ছাকৃত ভূল করা বা ইচ্ছাকৃত ভূল নাকি অনিচ্ছাকৃত ভূল তাও বুঝতেছিনা। আসলে আমি যে  মনে মনে বলেছি এবং হ্যাঁ বোধকভাবে মাথা নাড়াইছি (যে ঘটনাটা ঘটেছে)ঐ ঘটনা আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে করা হইছে কিনা তা আমি বুঝতেছিনা এবং আমি মনে করতে পারতেছিনা।আমি আবারো বলতেছি আমার মনে কোন প্রকার তালাক দেওয়ার নিয়ত ছিলো না। বিভিন্ন সময় তালাক জাতীয় বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা আমার মনে আসে,আমার জীবনটা খুব কষ্টের হয়ে যাচ্ছে। আমার স্ত্রীর  সাথে বিভিন্ন সময় খারাপ আচরণ হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় আমার মানসিক  সমস্যা হচ্ছে।বিভিন্ন সময় এইসব চিন্তা ভাবনা মনে আসার কারনে আমার স্বাভাবিক জীবনে সমস্যা হয়। আমার মনে ভয় হয় আমি আল্লাহর কাছে কি জবাব দিবো। আমি কখনো তালাক দিলাম, ছেড়ে দিলাম,মুক্ত করে দিলাম,তুমি মুক্ত,তুমি আজাদ, তুমি স্বাধীন,তুমাকে আমার দরকার নেই,তুমি আমার জীবন থেকে চলে যাও, এইসব কথা আমার স্ত্রীকে বলি নাই।
আমার স্ত্রী আমাকে বলেছিলো তাকে ঘুরতে নিয়ে যেতে,আমার যতদূর বা যতটুকু মনে পড়ে আমি তাকে রাগ করে বলেছিলাম —— না—– তুমার যেহেনে মন চায় সেহেনে যাও বা তুমার যেহেনে খুশি সেহেনে যাও।এই কথাগুলো যে তাকে বলেছি এতেও আমার কোনো প্রকার তালাকের নিয়ত ছিলো না। আমি আমার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসি, সে অনেক ভালো মেয়ে, বিভিন্ন সময় তার সাথে খারাপ আচরণ  হয়ে যায়। যা কিছুই হইছে বা ঘটেছে আমার মনে কোন প্রকার তালাক দেওয়ার নিয়ত ছিলো না।আমি জেনে বুঝে সচেতন ভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে আমার স্ত্রীকে তালাকের নিয়তে কখনো কোনো কিছু বলি নাই কখনো কোনো কিছু করি নাই তালাকের কোন শর্ত দেই নাই। আমি ৪টা বিষয় জানতে চাই———-

১/আমি  যে  মনে মনে বলেছি এবং হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াইছি (যে ঘটনাটা ঘটেছে)ঐ ঘটনা আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে করা হইছে কিনা তা আমি বুঝতেছিনা,এই বিষয়টা আমি পরিষ্কার ভাবে বুঝতে চাই।

২/ তুমার যেহেনে মন চায় সেহেনে যাও বা তুমার যেহেনে খুশি সেহেনে যাও। এই কথাগুলো যে তাকে বলেছি এতেও আমার কোনো প্রকার তালাকের নিয়ত ছিলো না।এই কথা দ্বারা কোন প্রকার তালাক হইছে কিনা?

৩/(আমি আমার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছি বা বলছি)  ব্রেকেটে লিখা এই কথাটা আমি ঐ মুফতি সাহেবের কাছে বলেছি,,ব্রেকেটে লিখা এই কথাটা  আমি মুফতি সাহেবের কাছে যে বলেছি তা আমি ভূল বলেছি বা ভূলে বলেছি বা ভূল করে বলেছি।এগুলো কি ইচ্ছাকৃত ভূল করা নাকি অনিচ্ছাকৃত ভূল করা বা ইচ্ছাকৃত ভূল নাকি অনিচ্ছাকৃত ভূল তাও বুঝতেছিনা।এর দ্বারা কোন প্রকার তালাক হইছে কিনা?

৪/উপরে উল্লেখিত কোন বিষয় বা কথা বা ঘটনার কারনে কোন প্রকার তালাক হইছে কিনা?

উত্তর

بسم الله الرحمن الرحيم

আপনার ১, ২, ৩ এবং ৪ নং প্রশ্নের উত্তর একই। সেটি হলো: আপনার স্ত্রীর উপর কোন তালাকই পতিত হয়নি।

সুতরাং পেরেশান হবার কারণ নেই।

আপনার তালাক বিষয়ক ওয়াসওয়াসার সমস্যা আছে। তাই আপনার উচিত এসব বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা বাদ দেয়া। নিজেকে এসব চিন্তা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা। স্ত্রীর সাথে উত্তম আচরণ করতে হবে। খারাপ আচারণ করা জায়েজ হবে না।

منها شك هل طلق أم لا لم يقع (الأشباه-108، جديد-196)

عدم الشك من الزوج فى الطلاق وهو شرط الحكم بوقوع الطلاق حتى لو شك فيه لا يحكم بوقوعه (بدائعل الصنائع، كتاب الطلاق، فصل فى الرسالة-3\126، جديد-3\199)

يشترط بالاتفاق القصد فى الطلاق، وهو إرادة التلفظ به ولو لم ينو فلا يقع طلاق فقيه يكره ولا طلاق حاك عن نفسه أو غيره لأنه لام يقصد معناه، بل قصد التعليم والحكاية، (الفقه الاسلام وادلته، كتاب الطلاق، باب شروط الطلاق-7/368)

لو كرر مسائل الطلاق بحضرة زوجته ويقول: أنت طالق ولا ينوى طلاقا لا تطلق، (فتح القدير، كتاب الطلاق، باب ايقاع الطلاق-4/4)

والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনে
লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

পরিচালক-তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

ইমেইল– [email protected]