প্রচ্ছদ / নামায/সালাত/ইমামত / মসজিদে নির্দিষ্ট জামাতের পূর্বে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করা যাবে কী?

মসজিদে নির্দিষ্ট জামাতের পূর্বে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করা যাবে কী?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!

মুহতারাম মুফতী সাহেব! আমি যে মহল্লায় থাকি সে মহল্লার জামে মসজিদ সংলঘ্ন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষরা মিলে অত্র জামে মসজিদে (যেখানে ইমাম মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট) সেখানে তারা জামাতে নামাজ আদায়ের পূর্বেই জামাত করতে চাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কুরআন ও হাদীস ভিত্তিক এর গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? কুরআন হাদীস থেকে তথ্যবহুল আলোচনা দিয়ে আমাদেরকে উপকৃত করবেন।

প্রশ্নকর্তাঃ ড. মুহা. আব্দুল্লাহ আল আরেফিন!

নয়াপল্টন ঢাকা।

بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا و مسلما

উত্তরঃ

ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!

মসজিদ একতার স্থান। নামাজের কাতার এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। মসজিদে মুসল্লিদের মাঝে পরস্পর ভেদাভেদ ও দুরত্ব কমিয়ে আনার শিক্ষা নামাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়। এজন্য সকলে মিলে একসাথে নামাজ আদায় করা উচিত। ভিন্নতা অবলম্বন করা উচিত নয়। ভিন্ন ভিন্ন নামাজ আদায়ে  একতা ঠিক থাকে না। তাছাড়া ইমামকে মানার ব্যপারে হাদীসে স্পষ্ট আকারে বলা আছে। ইমামের অনুমতি ব্যতিক্রমে ইমামতি করা নাজায়েজ।

হযরত মালিক ইবনে হুয়াইরিছের ঘটনা তিরমিযিতে আসছে, ওনাকে ইমামতির জন্য বলা হলেও তিনি তা করেননি। সুতরাং এধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।

ফিকহের কিতাবে মসজিদকে দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে।

এক. স্থানীয় মসজিদ, দুই চলাচলের রাস্তায়, যানবাহন ইত্যাদি স্থানের মসজিদ।

প্রথম প্রকার মসজিদের বিধান হলো, যদি তাতে নির্ধারিত ইমাম, মুয়াজ্জিন থাকে এবং মহল্লাবাসী আজান ও ইকামতের সাথে জামাত করে থাকে, তাহলে স্থানীয় লোকদের জন্য উক্ত মসজিদে দ্বিতীয় জামাত করা মাকরুহে তাহরীমি, তবে কোন কারণে যদি মহল্লাবাসীর কিছু লোক জামাত না পায়, তাদের জন্য মেহরাব ব্যতিরেকে দ্বিতীয় জামাত করা বৈধ, তবে উত্তম হলো,একাকি নামাজ আদায় করা। অথবা যদি অন্য এলাকার লোক দ্বিতীয় জামাত করতে চায় বা মুসাফির হয়, তাদের জন্যও বৈধ আছে।

এমনিভাবে মসজিদে নির্ধারিত জামাত হওয়ার পূর্বে জামাতবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করাও মাকরুহে তাহরীমি। যদি সবসময় এমন করা হয়, তাহলে তা জামাতের প্রতি গুরুত্ব কমে যাওয়া ও একতা বিনষ্ট হওয়া এবং ফিতনার আশঙ্কায় নাজায়েজ ও হারাম।

দ্বিতীয় প্রকার মসজিদের বিধান হলো, এধরনের মসজিদে দ্বিতীয় জামাত করা বৈধ।

 

শরঈ দলিলঃ

১.হাদীস থেকে

عَنْ أَوْسِ بْنِ ضَمْعَجٍ، قَالَ سَمِعْتُ أَبَا مَسْعُودٍ الأَنْصَارِيَّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللَّهِ فَإِنْ كَانُوا فِي الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوا فِي السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوا فِي الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَكْبَرُهُمْ سِنًّا وَلاَ يُؤَمُّ الرَّجُلُ فِي سُلْطَانِهِ وَلاَ يُجْلَسُ عَلَى تَكْرِمَتِهِ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ بِإِذْنِهِ “

আবু মাসউদ আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহর কিতাব কুরআন অধ্যয়নে যে অধিক পারদর্শী সে ইমাম হবে। যদি অধ্যয়ন ক্ষেত্রে সকলেই এক বরাবর হয় তবে সুন্নাহ সম্পর্কে যে বেশী জ্ঞনী সে ইমামত করবে, সুন্নাহর ক্ষেত্রে সমান সমান হলে যে অগ্রে হিজরত করেছে সে; আর হিজরতরে ক্ষেত্রে এক সমান হলে যার বয়স বেশী সে ইমাম হবে। কারো কর্তৃত্বাধীন স্থানে তাঁর অনুমতি ব্যাতিত অন্য ব্যক্তি ইমামত করবে না এবং কারো বাড়িতে তাঁর নিজস্ব বসার স্থানে অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য কেউ বসবে না।

তিরমিযি হাদীস নং ২৩৫। আল মুসনাদ – ইমাম আহমদ রহঃ হাদীস নং: ১৩৬৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং: ১৪০৮ আন্তর্জাতিক নং: ৬৭৩ – ৩।

২.হাদীস থেকে

إعلاء السنن: (336/4، ط: إدارة القرآن و العلوم الإسلامية، كراتشي)
وقوله صلى الله عليه وسلم: “ولا في سلطانه” يعم الإمام الراتب أيضا فإنه صاحب السلطان فى مسجده

৩. ফিকহের কিতাব থেকে

جاء في “الأصل” ۱ : ۱۱۳ باب الأذان (ط. الاحرار) : قال : قلت : أرأيت قوما فاتتهم الصلوة في جماعة فدخلوا المسجد وقد أقيم في ذالك المسجد وصلي فيه فأراد القوم أن يصلوا فيه جماعة بأذان وإقامة ؟ قال : أكره لهم ذالك ولكن عليهم أن يصلوا وحدانا بغير أذان ولا إقامة ، لأن أذان أهل المسجد وإقامتهم تجزيهم، قلت: فإن أذنوا وأقاموا وصلوا جماعة ؟ قال : صلوة صلوتهم تامة وأحب إلي أن لا يفعلوا . انتهى

.وفي” الفتاوى السراجية” من ٩٧ كتاب الصلوة (ط. مكتبة الاتحاد): قال: لا بأس بتكرار الجماعة في مسجد على قوارع الطريق ليس له إمام ومؤذن معين . انتهى.

 

وفي “الهندية” : ١٤٠/١ كتاب الصلوة (ط. زكريا ديوبند): قال: المسجد إذا كان له إمام معلوم وجماعة معلومة في محله فصلى أهله فيه بالجماعة لا يباح تكرارها فيه بأذان ثان، أما إذا صلوا بغير أذان يباح إجماعا وكذا في مسجد قارعة الطريق. انتهى

 

وفي” الدر المختار” مع “رد المحتار” ۲: ۷۹ كتاب الصلوة (ط – الأزهر) : قال : وتكرار الجماعة إلا في مسجد على طريق فلا بأس بذالك .
قال ابن عابدين رح تحت هذه المسألة… يكره تحريما لقول الكافي لايجوز، والمجمع لايباح
وشرح الجامع الصغير إنه بدعة……،
ويكره تكرار الجماعة في مسجد محله بأذان وإقامة إلا إذا صلى بهما فيه غير أهله أو أهله لكن بمخافتة الأذان، ولو كرر أهله بدونهما أو كان مسجد طريق جاز إجماعا، كما في مسجد ليس له إمام ولا مؤذن ويصلي الناس فيه فوجا فوجا ،فإن الأفضل أن يصلي كل فريق بأذان وإقامة على حدة .انتهى

الدر المختار مع رد المحتار: (51/2، ط: سعید)
“(شرع فيها أداء) خرج النافلة والمنذورة والقضاء فإنه لا يقطعها (منفردا ثم أقيمت) أي شرع في الفريضة في مصلاه لا إقامة المؤذن ولا الشروع في مكان وهو في غيره (يقطعها) لعذر إحراز الجماعة كما لو ندت دابته أو فار قدرها۔۔۔
(قوله يقطعها) قال في المنح: جاز نقض الصلاة منفردا لإحراز الجماعة. اه. وظاهر التعليل الاستحباب، وليس المراد بالجواز مستوي الطرفين. وقد يقال إن إحراز الجماعة واجب على أعدل الأقوال فيقتضي وجوب القطع، وقد يقال إنه عارضه الشروع في العمل ط.”

ويراجع أيضا ”بدائع الصنائع “١: ٣٧٨، و”الفقه الإسلامي وأدلته” ١٥٣:٢ ، و”امداد الفتاوى” ۱ : ۳۶۲ ، و”أمد او الأحكام” ۱۱۱:۲ ، و”فتاوى محمودية” ۴۱۳:۰۹ و” امداد المفتين”  ۳۰۸:۱. انتهى.

والله أعلم بالصواب

 

উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।

সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.

পরিচালক– তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী।

শাইখুল হাদীস: জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া, সনমানিয়া, কাপাসিয়া, গাজীপুর।

0Shares

আরও জানুন

‘সুন্দর সম্পর্ক কেন নষ্ট করে দিলা’ বলার দ্বারা কি স্ত্রী তালাক হয়ে যায়?

প্রশ্ন আস্সালামুআলাইকুম মুফতি সাহেব, এই প্রশ্ন কয়েকটা আগেও করেছিলাম, উত্তর না পেয়ে আবার করছি| ওয়াসওয়াসা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *