প্রচ্ছদ / খাদ্য-দ্রব্য / বিদেশের রাস্তায় পড়ে থাকা ফল ভক্ষণ করা যাবে?

বিদেশের রাস্তায় পড়ে থাকা ফল ভক্ষণ করা যাবে?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন

প্রবাসে বসবাস করছি, এখানে পথে ঘাটে, মাঠে ,নদীর পাড়ে,পার্কে যত্রতত্র ফলমূলের গাছে ভরপুর।

এসব গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল আসে এবং দেখে মনে হয় সংগ্রহ না করার কারনে প্রচুর পরিমাণে ফল গাছের নিচে পড়ে ,গলে নস্ট হয়ে যায়।

দেখে ভালো লাগলেও নস্ট হওয়া দেখে আফসুস হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে- এসব ফল গাছ থেকে সংগ্রহ করে খাওয়া যাবে কিনা?

অথবা গাছ থেকে পড়ে যাওয়া ফল সংগ্রহ করে খাওয়া যাবে কিনা?

প্রশ্নকর্তাঃ Muhiddin Jahangir

[email protected]

 

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
حامدا ومصليا و مسلما

উত্তরঃ

১, প্রশ্নোক্ত ফলগাছ যদি সরকারী হয়, তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সরকারী গাছের ফলমুল ভক্ষণ করা জায়েজ নয়। তাই এ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِالنَّاسِ  بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢:١٨٨]

তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। [সূরা বাকারা-১৮৮]

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ أَخَذَ شَيْئًا مِنَ [ص:107] الأَرْضِ بِغَيْرِ حَقِّهِ، خُسِفَ بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ»

সালিম (রাহঃ)- এর পিতা ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো জমির সামান্যতম অংশও আত্মসাৎ করে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনের নীচে তাকে ধ্বসিয়ে দেওয়া হবে।

—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৬৯ (আন্তর্জাতিক নং ৩১৯৬)

অন্য বর্ণনায় আসছে,

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ سُئِلَ عَنِ الثَّمَرِ الْمُعَلَّقِ فَقَالَ ” مَنْ أَصَابَ بِفِيهِ مِنْ ذِي حَاجَةٍ غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً فَلاَ شَىْءَ عَلَيْهِ وَمَنْ خَرَجَ بِشَىْءٍ مِنْهُ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوبَةُ وَمَنْ سَرَقَ مِنْهُ شَيْئًا بَعْدَ أَنْ يُئْوِيَهُ الْجَرِينُ فَبَلَغَ ثَمَنَ الْمِجَنِّ فَعَلَيْهِ الْقَطْعُ ” . وَذَكَرَ فِي ضَالَّةِ الإِبِلِ وَالْغَنَمِ كَمَا ذَكَرَهُ غَيْرُهُ قَالَ وَسُئِلَ عَنِ اللُّقَطَةِ فَقَالَ ” مَا كَانَ مِنْهَا فِي طَرِيقِ الْمِيتَاءِ أَوِ الْقَرْيَةِ الْجَامِعَةِ فَعَرِّفْهَا سَنَةً فَإِنْ جَاءَ طَالِبُهَا فَادْفَعْهَا إِلَيْهِ وَإِنْ لَمْ يَأْتِ فَهِيَ لَكَ وَمَا كَانَ فِي الْخَرَابِ – يَعْنِي – فَفِيهَا وَفِي الرِّكَازِ الْخُمُسُ ” .

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কে বৃক্ষে ঝুলন্ত ফল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ যদি কেউ তা খায় এবং সে যদি অভাবী হয়, আর সে তা লুকিয়ে না নেয় তবে এজন্য তার কোন

গুনাহ নাই। আর যদি কেউ তা লুকিয়ে নিয়ে যায় তবে জরিমানাস্বরূপ তার নিকট হতে দ্বিগুণ আদায় করা হবে এবং উপরোক্ত শাস্তিও ভোগ করতে হবে। আর যদি কেউ খেজুর চুরি করে এমতাবস্থায় যে, তা বৃক্ষ হতে কেটে খলিয়ানে শুকাতে দেওয়া হয়েছে এবং ঐ চুরিকৃত খেজুরের মূল্য একটি বর্মের মূল্যের সম পরিমাণ হয়, তবে তার হাত কাটা যাবে।

অতঃপর তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) হারানো প্রাপ্ত বকরী ও উটের কথা বর্ণনা করেছেন, যেমন অন্য রাবী (যায়দ ইবনে খালিদ) বর্ণনা করেছেন। অতঃপর তাকে লুকতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ যা কিছু জনসাধারণের চলাচলের রাস্তায় বা জনপদে পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে এক বছর যাবত ঘোষণা দিতে হবে। যদি এর মালিক এসে যায় তবে তা তাকে প্রদান করতে হবে। আর যদি না আসে তবে তা তোমার জন্য। আর যে লুকতা জনপদের বাইরে এবং যমীনের মধ্যে যে গুপ্তধন পাওয়া যাবে, তার যাকাত হল এক পঞ্চমাংশ।

—সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ১৭১০ (আন্তর্জাতিক নং ১৭১০)

 

الفتاوى الهندية (2/ 474):
“وإذا غرس شجراً في طريق العامة فالحكم أن الشجر للغارس، وإذا غرس شجراً على شط نهر العامة أو على شط حوض القرية فهو للغارس، كذا في الظهيرية. ولو قطعها فنبتت من عروقها أشجار فهي للغارس، كذا في فتح القدير”.

مجلة الأحكام العدلية (ص: 242):
“الْمَادَّةُ (1259) لِأَيِّ أَحَدٍ كَانَ أَنْ يَقْطِفَ فَاكِهَةَ الْأَشْجَارِ الَّتِي فِي الْجِبَالِ الْمُبَاحَةِ، وَفِي الْأَوْدِيَةِ وَالْمُرَاعِي الَّتِي لَا صَاحِبَ لَهَا

২,
যদি ব্যক্তি মালিকানাধিন গাছ হয়, তাহলে মালিকের পক্ষ থেকে যদি ফল কুড়িয়ে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধ করা না হয়, তাহলে আপনার জন্য ওইসব গাছের নিচে পড়ে থাকা ফল কুড়িয়ে খাওয়া জায়েয আছে। অবশ্য কখনো যদি এ ব্যাপারে মালিকের অসম্মতি বা অসন্তুষ্টি বোঝা যায়, তখন পড়ে থাকা ফলও কুড়িয়ে নেওয়া জায়েয হবে না।

عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بِتَمْرَةٍ فِي الطَّرِيقِ قَالَ ” لَوْلاَ أَنِّي أَخَافُ أَنْ تَكُونَ مِنَ الصَّدَقَةِ لأَكَلْتُهَا “

আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) রাস্তায় পড়ে থাকা খেজুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বললেন, আমার যদি আংশকা না হত যে এটি সাদ্‌কার খেজুর তা হলে আমি এটা খেতাম।
—সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৬৯ (আন্তর্জাতিক নং ২৪৩০-২৪৩২)

 

عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ سُئِلَ عَنْ الثَّمَرِ الْمُعَلَّقِ فَقَالَ مَا أَصَابَ مِنْ ذِي حَاجَةٍ غَيْرَ مُتَّخِذٍ خُبْنَةً فَلَا شَيْءَ عَلَيْهِ وَمَنْ خَرَجَ بِشَيْءٍ مِنْهُ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوبَةُ وَمَنْ سَرَقَ شَيْئًا مِنْهُ بَعْدَ أَنْ يُؤْوِيَهُ الْجَرِينُ فَبَلَغَ ثَمَنَ الْمِجَنِّ فَعَلَيْهِ الْقَطْعُ وَمَنْ سَرَقَ دُونَ ذَلِكَ فَعَلَيْهِ غَرَامَةُ مِثْلَيْهِ وَالْعُقُوبَةُ

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, গাছে ঝুলান ফল চুরির ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি প্রয়োজনের তাগিদে ফল নেয়, কিন্তু লুকিয়ে কাপড়ে বেঁধে না নেয়, তার কোন শাস্তি হবে না। যদি কেউ এরূপ ফল নিয়ে বের হয়, তবে তার দ্বিগুণ জরিমানা হবে এবং শাস্তি দেওয়া হবে। ফল খােলায় রাখার পর যদি কেউ চুরি করে, আর তার মূল্য ঢালের মূল্যের পরিমাণ হয়, তবে তার হাত কাটা যাবে। যদি কোন ব্যক্তি ঢালের মূল্যের চেয়ে কম মূল্যের বস্তু চুরি করে, তবে তার দ্বিগুণ জরিমানা দিতে হবে, আর শাস্তিও হবে।
—সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ৪৯৫৮ (আন্তর্জাতিক নং ৪৯৫৮)

والله أعلم بالصواب

উত্তর লিখনে
মুহা. শাহাদাত হুসাইন , ছাগলনাইয়া, ফেনী।

সাবেক শিক্ষার্থী: ইফতা বিভাগ
তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।

সত্যায়নে
মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী দা.বা.

পরিচালক– তা’লীমুল ইসলাম ইনস্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া কাসিমুল উলুম আমীনবাজার ঢাকা।

প্রধান মুফতী: জামিয়াতুস সুন্নাহ লালবাগ, ঢাকা।

উস্তাজুল ইফতা– জামিয়া ইসলামিয়া দারুল হক লালবাগ ঢাকা।

পরিচালক: শুকুন্দী ঝালখালী তা’লীমুস সুন্নাহ দারুল উলুম মাদরাসা, মনোহরদী নরসিংদী

0Shares

আরও জানুন

বিয়ের আগে ‘ব্রেক আপ বা তালাক’ বললে কি বিয়ের পর তালাক হয়?

প্রশ্ন   নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, কাতার প্রবাসী একটি মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন হারাম রিলেশন ছিল এখন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *