মাওলানা আব্দুল্লাহ ফাহাদ
মুমিন বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ এই যে, তিনি তাকে এমন কিছু ইবাদত দান করেছেন, যার মাধ্যমে বান্দা রূহানী তারাক্কী, কলবের সুকুন ও প্রশান্তি এবং দুনিয়া-আখেরাতের খায়ের ও কল্যাণ লাভ করে থাকে। এসবেরই একটি হল হজ্ব। আল্লাহ তাআলা বান্দাকে বাইতুল্লাহ্র হজ্ব করার নির্দেশ দিয়েছেন, যেন এর মাধ্যমে তারা গুনাহ থেকে পাকসাফ হয় এবং জান্নাতে উচ্চ মর্তবা ও মাকাম লাভ করে।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
الحُجَّاجُ وَالْعُمَّارُ وَفْدُ اللهِ، إِنْ دَعَوْهُ أَجَابَهُمْ، وَإِنِ اسْتَغْفَرُوهُ غَفَرَ لَهُمْ.
আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ্ব ও উমরাকারী হল আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহ্ও তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৮৯৩
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
হজ্ব ও উমরাকারীগণ আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়েছে আর আল্লাহ্ও তাদের প্রার্থনা কবুল করেন। –মুসনাদে বাযযার, হাদীস ১৬৬১
নিম্নে হজ্ব ও উমরার কিছু ফযীলত উল্লেখ করা হল। যেন এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ লাভে অনুপ্রাণিত ও উৎসাহী হতে পারি।
হজ্বের ফযীলত
আবু হুরায়রা রা. বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি–
مَنْ حَجَّ لِلهِ فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّه.
যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্ব করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ঐ দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ্ব থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫২১
অন্য এক বর্ণনায় তিনি বলেন–
سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: حَجٌّ مَبْرُور.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন। জিজ্ঞাসা করা হল, এর পর কোনটি? বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। বলা হল, এরপর? তিনি বললেন, মাবরূর হজ্ব। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫১৯
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
… والحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَه جَزَاءٌ إِلا الْجَنَّةُ.
…মাবরূর হজ্বের প্রতিদান কেবল জান্নাত। –সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৭৭৩
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
ثلَاثَةٌ فِي ضَمَانِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، رَجُلٌ خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ إِلَى مَسْجِدٍ مِنْ مَسَاجِدِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَرَجُلٌ خَرَجَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَرَجُلٌ خَرَجَ حَاجًّا.
আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। যথা :
১. যে ব্যক্তি আল্লাহর কোনো মসজিদের উদ্দেশে বের হয়।
২. যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়।
৩. যে ব্যক্তি হজ্বের উদ্দেশে বের হয়। –মুসনাদে হুমাইদী, হাদীস ১১২১
দুর্বলদের জিহাদ হল হজ্ব
উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
الْحَجُّ جِهَادُ كُلِّ ضَعِيفٍ.
হজ্ব হল প্রত্যেক দুর্বলের জিহাদ। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৯০২
মহিলাদের হজ্ব করার ফযীলত
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জিহাদকে সর্বোত্তম আমল মনে করি। তাহলে আমরা (নারীরা) কি জিহাদ করব না? উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন–
لاَ، لكِنَّ أَفْضَلَ الجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ.
না; তোমাদের জন্য উত্তম জিহাদ হল মাবরূর হজ্ব। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫০২
উমরার ফযীলত
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
العُمْرَةُ إلى العُمْرَةِ كَفّارَةٌ لِما بيْنَهُما، والحَجُّ المَبْرُورُ لَيسَ لَه جَزَاءٌ إلا الجَنَّة.
এক উমরা অন্য উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সকল কিছুর কাফফারা। আর মাবরূর হজ্বের একমাত্র প্রতিদান জান্নাত। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭২৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯
হজ্বে খরচ করার ফযীলত
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! লোকেরা তো দুইটি ইবাদত নিয়ে ফিরে যাচ্ছে আর আমি শুধু একটি নিয়ে ফিরব? তখন তাঁকে বলা হল–
انْتَظِرِي، فَإِذَا طَهُرْتِ، فَاخْرُجِي إِلَى التَّنْعِيمِ، فَأَهِلِّي ثُمَّ ائْتِينَا بِمَكَانِ كَذَا، وَلَكِنَّهَا عَلَى قَدْرِ نَفَقَتِكِ أَوْ نَصَبِكِ.
অপেক্ষা কর। যখন তুমি পবিত্র হবে তখন তানঈমে যাবে এবং (উমরার) ইহরাম বাঁধবে। এরপর অমুক স্থানে যাও। অবশ্য এসবের প্রতিদান হবে তোমার ব্যয় ও কষ্ট অনুযায়ী। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৮৭
অন্য বর্ণনায় তিনি আরো বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে উমরার সময় বললেন–
إِنَّمَا أَجْرُكِ فِي عُمْرَتِكِ عَلَى قَدْرِ نَفَقَتِكِ.
তোমার ব্যয় অনুপাতে উমরার প্রতিদান দেওয়া হবে। –মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৭৭৭ (১৭৩৪)
হজ্ব-সফরের ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি–
مَا يَرْفَعُ إِبِلُ الْحَاجِّ رِجْلًا وَلَا يَضَعُ يَدًا إِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً، أَوْ مَحَى عَنْهُ سَيِّئَةً، أَوْ رَفَعَه بِهَا دَرَجَةً.
আল্লাহ তাআলা হজ্ব আদায়কারীর উটনীর প্রতি কদমে একটি নেকী লেখেন কিংবা একটি গুনাহ মুছে দেন। অথবা একটি মর্তবা বুলন্দ করেন। –সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৮৮৭; শুআবুল ঈমান, বাইহাকী, হাদীস ৩৮২১
তালবিয়া পাঠের ফযীলত
সাহ্ল ইবনে সা‘দ আসসায়েদী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
مَا مِنْ مُلَبٍّ يُلَبِّي، إِلَّا لَبَّى مَا عَنْ يَمِينِه وَشِمَالِه، مِنْ حَجَرٍ، أَوْ شَجَرٍ، أَوْ مَدَرٍ، حَتَّى تَنْقَطِعَ الْأَرْضُ، مِنْ هَاهُنَا وَهَاهُنَا.
কেউ যখন তালবিয়া পাঠ করে তখন তার ডানে ও বামে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সকল গাছপালা, মাটি-পাথর তালবিয়া পাঠ করতে থাকে। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৮২৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৯২১
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
… وَمَا مِنْ مُؤْمِنٍ يَظِلُّ يَوْمَه مُحْرِمًا إِلا غَابَتْ الشَّمْسُ بِذُنُوْبِه، وَمَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُلَبِّيْ لِلهِ بِالْحَجِّ إِلا شَهِدَ لَه مَا عَلى يَمِيْنِه وَشِمَالِه إِلى مُنْقَطَعِ الأرْضِ.
কোনো মুমিন যখন ইহরামের হালতে দিন কাটাবে তখন সূর্য তার সকল গুনাহ নিয়ে অস্ত যাবে। আর কোনো মুমিন যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্বের তালবিয়া পাঠ করবে তখন তার ডানে-বামে পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সবকিছু তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৮১০
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
مَا أَهَلَّ مُهِلٌّ قَطُّ إِلَّا بُشِّرَ، وَلَا كَبَّرَ مُكَبِّرٌ قَطُّ إِلَّا بُشِّرَ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، بِالْجَنَّةِ؟ قَالَ: نَعَمْ.
কেউ তালবিয়া পাঠ করলে তাকে সুসংবাদ দেওয়া হয়। এবং কেউ তাকবীর বললে তাকে সুসংবাদ দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! জান্নাতের সুসংবাদ? উত্তরে নবীজী বললেন, হাঁ। –আলমু‘জামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৭৭৭৯
মক্কা মুকাররমার ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে আদী ইবনে হামরা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ‘হাযওয়ারা’ নামক স্থানে ছিলেন তখন তাকে উটের উপর সওয়ার অবস্থায় বলতে শুনেছি–
وَاللهِ إِنَّكِ، لَخَيْرُ أَرْضِ اللهِ، وَأَحَبُّ أَرْضِ اللهِ إِلَيَّ، وَاللهِ لَوْلَا أَنِّي أُخْرِجْتُ مِنْكِ، مَا خَرَجْتُ.
আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ যমীন আর আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। আল্লাহর কসম! যদি আমাকে তোমার (বুক) থেকে চলে যেতে বাধ্য না করা হত, তাহলে আমি কখনো যেতাম না। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩১০৮
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন–
إن هذا البلد حرمه الله يوم خلق السماوات والأرض، فهو حرام بحرمة الله إلى يوم القيامة.
নিশ্চয়ই আসমান-যমীন সৃষ্টির দিনই আল্লাহ এই যমীনকে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং কিয়ামত পর্যন্ত তা সম্মানিত।…। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৫৩
মসজিদে হারামে নামায আদায়ের ফযীলত
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
لَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَى ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ: مَسْجِدِي هَذَا، وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ، وَمَسْجِدِ الْأَقْصَى.
শুধু তিনটি মসজিদের উদ্দেশে সফর করা যায়। যথা : আমার এই মসজিদ (মসজিদে নববী), মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৯৭
জাবির রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
صَلَاةٌ فِي مَسْجِدِي أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلَاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلَّا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ.
আমার এই মসজিদের একটি নামায অন্য মসজিদে হাজার নামায থেকেও উত্তম। তবে মসজিদে হারাম ছাড়া। কেননা, মসজিদে হারামে একটি নামায অন্য মসজিদের এক লক্ষ নামাযের চেয়ে উত্তম। –মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ৪৬৪৬
বাইতুল্লাহ তাওয়াফের ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
مَنْ طَافَ بِالْبَيْتِ، وصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، كَانَ كَعِتْقِ رَقَبَةٍ.
কেউ বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করলে এবং দুই রাকাত নামায আদায় করলে একটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৯৫৬
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
الطواف حول البيت مثل الصلاة، إلا أنكم تتكلمون فيه، فمن تكلم فيه فلا يتكلمن إلا بخير.
বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ হচ্ছে নামাযের মতো। তবে এতে তোমরা কথা বলতে পার। সুতরাং এ সময় যে কথা বলবে সে যেন শুধু উত্তম কথাই বলে। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৬০
হাজরে আসওয়াদে চুমু খাওয়ার ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি–
إِنَّ مَسْحَهُمَا كَفَّارَةٌ لِلْخَطَايَا.
এই রোকন দুটির (হাজরে আসওয়াদ ও রোকনে ইয়ামানী) স্পর্শ গুনাহসমূহকে মুছে দেয়। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৫৯
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
لَيَأْتِيَنَّ هَذَا الْحَجَرُ، يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا، وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ، يَشْهَدُ عَلَى مَنْ يَسْتَلِمُهُ بِحَقٍّ.
কিয়ামতের দিন এই পাথর এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তার দুটি চোখ থাকবে, যা দ্বারা সে দেখবে এবং জিহ্বা থাকবে, যা দ্বারা সে কথা বলবে। সে ঐ ব্যক্তির পক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে তাকে সঠিক পন্থায় ইসতিলাম করে। –সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৯৪৪
সাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈর ফযীলত
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন–
اِنَّ الصَّفَا وَ الْمَرْوَةَ مِنْ شَعَآىِٕرِ اللهِ.
নিশ্চয়ই সাফা-মারওয়া আল্লাহর দুটি নিদর্শন। –সূরা বাকারা (০২) : ১৫৮
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
وأمّا طوافُكَ بالصَّفا والمروةِ؛ كعِتْقِ سبعينَ رقبةً.
আর সাফা-মারওয়ায় তোমার সায়ী সত্তর জন দাস মুক্ত করার সমান। –মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৬১৭৭; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৮৮৭
আরাফায় উকূফের ফযীলত
আয়েশা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
ما من يوم أكثر من أن يعتق الله فيه عبدا من النار، من يوم عرفة، وإنه ليدنو، ثم يباهي بهم الملائكة، فيقول: ما أراد هؤلاء؟
আরাফার দিনে আল্লাহ তাআলা সর্বাধিক সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এদিন তিনি তাদের নিকটবর্তী হন। এরপর ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে করে বলেন, এরা কী চায়? –সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৮
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
إِنَّ اللهَ يُبَاهِي بِأَهْلِ عَرَفَاتٍ مَلَائِكَةَ أَهْلِ السَّمَاءِ، فَيَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي هَؤُلَاءِ انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي جَاءُونِي شُعْثًا غُبْرًا.
আরাফায় অবস্থানকারী সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, আমার এইসব বান্দাদের দেখ, কেমন উষ্কখুষ্ক চুল ও ধুলোমলিন বদনে আমার নিকট এসেছে। –সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৮৫২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৮৩৯
আরাফার দিনে দুআর ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي: لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
আরাফা দিবসের দুআ হল শ্রেষ্ঠ দুআ। আর আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবীগণ যা বলেছেন তার সর্বশ্রেষ্ঠ হল–
لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَه لَا شَرِيكَ لَه، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
–জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩৫৮৫
জামরায় রমীর ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
إِذَا رَمَيْتَ الْجِمَارَ كَانَ لَكَ نُوْرًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
তুমি জামরায় রমী করলে তা তোমার জন্য কিয়ামতের দিন নূর হবে। –মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৬১৭৭
হাদী নিয়ে যাওয়া ও কুরবানী করার ফযীলত
আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, উত্তম হজ্ব কী? তিনি বললেন–
العَجُّ وَالثَّجُّ.
উচ্চৈঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করা এবং পশু কুরবানী করা। –জামে তিরমিযী, হাদীস ৮২৭
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে এক দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
أَمَّا نَحْرُكَ فَمَدْخُوْرٌ لَكَ عِنْدَ رَبِّكَ.
…আর তুমি কুরবানী করলে তা তোমার প্রতিপালকের নিকট সঞ্চিত থাকবে। –মুসনাদে বাযযার, হাদীস ৬১৭৭
হজ্ব থেকে হালাল হওয়ার জন্য হলক ও চুল কাটার ফযীলত
আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন–
اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُحَلِّقِينَ، قَالُوا: وَلِلْمُقَصِّرِينَ، قَالَ: اللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُحَلِّقِينَ، قَالُوا: وَلِلْمُقَصِّرِينَ، قَالَهَا ثَلاَثًا، قَالَ: وَلِلْمُقَصِّرِينَ.
হে আল্লাহ! আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন। সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যারা চুল কাটবে তাদের? তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন। সাহাবায়ে কেরাম আবার আরয করলেন, যারা চুল কাটবে তাদের? তিনি বললেন, হে আল্লাহ! আপনি হলককারীকে ক্ষমা করুন। সাহাবায়ে কেরাম তৃতীয়বার আরয করলে তিনি বললেন, আর যারা চুল কাটবে তাদেরকেও। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭২৮
হজ্বে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণকারীর ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। জনৈক ব্যক্তি ইহরাম অবস্থায় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলেন। হঠাৎ সওয়ারী থেকে পড়ে তার মৃত্যু হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন–
اغْسِلُوهُ بِمَاءٍ وَسِدْرٍ، وَكَفِّنُوهُ فِي ثَوْبَيْهِ، وَلَا تُخَمِّرُوا رَأْسَهُ، فَإِنَّ اللهَ يَبْعَثُه يَوْمَ الْقِيَامَةِ مُلَبِّيًا.
তোমরা তাকে বড়ই পাতার পানি দ্বারা গোসল দাও এবং তার কাপড়দুটি দিয়েই তাকে কাফন পরাও। তবে তার মাথা ও চেহারা ঢাকবে না। কেননা, কিয়ামতের দিন সে তালবিয়া পাঠ করতে করতে উঠবে। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ১২০৬
ছোটদেরকে হজ্ব করানোর ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাওয়াহা নামক স্থানে (কিছু লোকের সাথে) সাক্ষাৎ হলে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কারা? তারা বলল, মুসলিম। এরপর তারা জিজ্ঞাসা করল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূল। তখন তাঁর নিকট একজন মহিলা (একটি ছোট বাচ্চার দিকে ইশারা করে) বলল, এর জন্য কি হজ্ব আছে? তিনি বললেন–
نعم، ولك أجر.
হাঁ। আর তুমি এর প্রতিদান পাবে। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৯৪
হাজ্বীদেরকে পানি পান করানো ও তাদের খেদমতের ফযীলত
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করার স্থানে এসে পান করাতে বললেন।
তখন আব্বাস রা. বললেন, হে ফযল! তোমার মায়ের নিকট গিয়ে তার কাছ থেকে পানীয় নিয়ে এস।
এরপর তিনি বললেন, আমাকে পান করাও।
তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকেরা এর ভেতরে হাত প্রবেশ করিয়ে থাকে।
তিনি বললেন, আমাকে পান করাও। এরপর তিনি তা থেকে পান করলেন। অতঃপর তিনি যমযমের নিকট এলেন। লোকেরা সেখানে পান করাচ্ছিল ও কাজ করছিল।
তিনি বললেন, তোমরা কাজ করতে থাক। কেননা, তোমরা নেক কাজই করছ। এরপর তিনি ইরশাদ করলেন–
لَوْلاَ أَنْ تُغْلَبُوا لَنَزَلْتُ، حَتَّى أَضَعَ الحَبْلَ عَلَى هذِه.
যদি এ আশঙ্কা না হত যে, লোকেরা তোমাদের থেকে এ কাজ ছিনিয়ে নেবে, তাহলে আমি নেমে আসতাম আর রশি এর ওপর (অর্থাৎ কাঁধের ওপর) রাখতাম। তিনি হাত দ্বারা কাঁধের দিকে ইশারা করলেন। –সহীহ বুখারী, হাদীস ১৬৩৪
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে হজ্বের পরিপূর্ণ ফযীলত ও বরকত দান করুন– আমীন।