মাওলানা মুহাম্মদ ইমরান হুসাইন
বড় কেউ যদি কাউকে স্মরণ করে, সে গর্বিত হয় এবং নিজেকে ধন্য মনে করে। বরেণ্য কোনো মনীষী যদি কাউকে ভালবাসে, কাছে টেনে নেয়, সে যারপরনাই আনন্দিত হয়। তাহলে ঐ সব মানুষের কত বড় সৌভাগ্য, স্বয়ং রাব্বুল আলামীন যাদের ভালবাসেন, যাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সঙ্গে গর্ব করেন!
হাঁ, কিছু ভাগ্যবান মানুষ আছেন, আল্লাহ তাআলা যাদের প্রশংসা করেন, তাদের আমল নিয়ে গর্ব করেন। যেসব খোশকিসমত বান্দা রাতের শেষ প্রহরে আরামের বিছানা ত্যাগ করে আপন রবের সামনে দাঁড়িয়ে যায়, ঘুমের আরাম ঝেড়ে ফেলে রোনাযারি ও ইবাদত-বন্দেগীতে মগ্ন হয়ে যায়, স্বয়ং আল্লাহ তাআলা তাদের মহব্বত করেন, তাদের প্রশংসা করেন; এমনকি তাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করেন।
এই নিবন্ধে এসব খোশকিসমত বান্দাদের নিয়ে আলোচনা হবে, তাদের কিছু ফযীলত, বৈশিষ্ট্য ও প্রাপ্তি সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে, ইনশাআল্লাহ।
তাহাজ্জুদ : ইবাদুর রাহমানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য
‘ইবাদুর রহমান’ তথা দয়াময় আল্লাহর প্রিয় ও নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দা। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপাধি। দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা। যারা এই মহিমান্বিত অভিধায় ভূষিত হবেন তাদের একটি গুণ হল, তারা রাতের শেষ সময়টাকে রহমানের ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করেন। ইরশাদ হয়েছে–
وَ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ الَّذِیْنَ یَمْشُوْنَ عَلَی الْاَرْضِ هَوْنًا وَّ اِذَا خَاطَبَهُمُ الْجٰهِلُوْنَ قَالُوْا سَلٰمًا، وَ الَّذِیْنَ یَبِیْتُوْنَ لِرَبِّهِمْ سُجَّدًا وَّ قِیَامًا.
তারা রহমানের বান্দা, যারা ভূমিতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, অজ্ঞলোক যখন তাদেরকে লক্ষ করে (অজ্ঞতাসুলভ) কথা বলে তখন তারা শান্তিপূর্ণ কথা বলে।
এবং যারা রাত অতিবাহিত করে নিজ প্রতিপালকের সামনে (কখনো) সিজদারত অবস্থায় এবং (কখনো) দণ্ডায়মান অবস্থায়। –সূরা ফুরকান (২৫) :
৬৩-৬৪
তারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত বান্দা
আবুদ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
ثَلَاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، يَضْحَكُ إِلَيْهِمْ وَيَسْتَبْشِرُ بِهِمْ.
তিন শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা মহব্বত করেন; তাদের প্রতি হাসেন এবং তাদের ব্যাপারে খুশি প্রকাশ করেন।
এ তিন শ্রেণির মধ্যে দুই শ্রেণিই হল তাহাজ্জুদগুজার। এক শ্রেণির পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে–
وَالَّذِي لَهُ امْرَأَةٌ حَسْنَاءُ وَفِرَاشٌ لَيِّنٌ حَسَنٌ، فَيَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ فَيَذَرُ شَهْوَتَه فَيَذْكُرُنِي وَيُنَاجِينِي وَلَوْ شَاءَ لَرَقَدَ.
যার রয়েছে সুন্দরী স্ত্রী এবং নরম বিছানা। কিন্তু সে নিজের চাহিদা পরিত্যাগ করে রাতের বেলা উঠে যায়; আমাকে স্মরণ করে, আমার সাথে গোপন আলাপ করে। অথচ ইচ্ছে করলে সে ঘুমিয়ে থাকতে পারত।
আরেক শ্রেণির প্ররিচয় এই–
وَالَّذِي يَكُونُ فِي سَفَرٍ، وَكَانَ مَعَه رَكْبٌ، فَسَهَرُوا وَنَصَبُوا، ثُمَّ هَجَعُوا، فَقَامَ فِي السَّحَرِ فِي سَرَّاءٍ أَوْضَرَّاءٍ.
ঐ ব্যক্তি, যে কোনো সফরে আছে। তার সাথে কাফেলা আছে। রাতে সফর করতে করতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সকলে নিন্দ্রায় গিয়েছে। কিন্তু সে সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় শেষ রাতে জেগে ইবাদত করেছে। –আলআসমা ওয়াস সিফাত, বাইহাকী, হাদীস ৯৮৩
রাব্বুল আলামীন যাদের প্রশংসা করেছেন
কুরআন কারীমের বহু স্থানে আল্লাহ তাআলা ঐসব বান্দার প্রশংসামূলক আলোচনা করেছেন, যারা রাতের শেষ প্রহরে ঘুম থেকে জেগে ওঠে এবং নামায, দুআ-যিকির ও ইস্তিগফারে মগ্ন থাকে। মুত্তাকী বান্দাদের প্রশংসা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন–
اِنَّ الْمُتَّقِیْنَ فِیْ جَنّٰتٍ وَّ عُیُوْنٍ، اٰخِذِیْنَ مَاۤ اٰتٰىهُمْ رَبُّهُمْ اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِیْنَ، كَانُوْا قَلِیْلًا مِّنَ الَّیْلِ مَا یَهْجَعُوْنَ، وَ بِالْاَسْحَارِ هُمْ یَسْتَغْفِرُوْنَ.
মুত্তাকীগণ অবশ্যই উদ্যানরাজি ও প্রস্রবণসমূহের মাঝে থাকবে। তারা উপভোগ করতে থাকবে তাদের প্রতিপালক তাদেরকে যা-কিছু দেবেন। পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মশীল। তারা রাতের অল্প সময়ই নিন্দ্রায় অতিবাহিত করত এবং তারা সাহরীর সময় ইস্তিগফারে রত থাকত। –সূরা যারিআত (৫১) : ১৫-১৮
অন্যত্র রাতের বিভিন্ন প্রহরে ইবাদতকারী বান্দাদের প্রশংসা করা হয়েছে এভাবে–
اَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیْلِ سَاجِدًا وَّ قَآىِٕمًا یَّحْذَرُ الْاٰخِرَةَ وَ یَرْجُوْا رَحْمَةَ رَبِّهٖ.
তবে কি (এরূপ ব্যক্তি সেই ব্যক্তির সমতুল্য হতে পারে,) যে আখেরাতকে ভয় করে এবং নিজ প্রতিপালকের রহমতের আশা করে রাতের মুহূর্তগুলোতে ইবাদত করে, কখনো সিজদাবস্থায়, কখনো দাঁড়িয়ে? বল, যারা জানে আর যারা জানে না উভয়ে কি সমান? –সূরা যুমার (৩৯) : ০৯
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রশংসা করেছেন এভাবে–
مِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ اُمَّةٌ قَآىِٕمَةٌ یَّتْلُوْنَ اٰیٰتِ اللهِ اٰنَآءَ الَّیْلِ وَهُمْ یَسْجُدُوْنَ.
কিতাবীদের মধ্যেই এমন লোকও আছে, যারা (সঠিক পথে) প্রতিষ্ঠিত, রাতের বেলা আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং তারা (আল্লাহর উদ্দেশে) সিজদাবনত হয়। –সূরা আলে ইমরান (৩) : ১১৩
আল্লাহ তাআলা তাদের ভালবাসেন
বান্দা আল্লাহকে ভালবাসবে, আল্লাহ বান্দাকে ভালবাসবেন– এটাই তো বান্দার দিলের তামান্না, মুমিনের হৃদয়ের প্রত্যাশা। যারা শেষ রজনীতে আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে যায়, তাঁর ইবাদতে মশগুল থাকে, তারা আল্লাহ তাআলার ওলী হয়ে যান, আল্লাহ তাদেরকে আপন মহব্বত ও ভালবাসায় সিক্ত করেন।
আবু যর গিফারী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
ثَلَاثَةٌ يُحِبُّهُمُ اللهُ.
তিন শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা ভালবাসেন।
এরপর ঐ তিন শ্রেণির বিবরণ দিয়েছেন। তাদের এক শ্রেণি হলেন, যারা রাতের শেষভাগে ইবাদত-বন্দেগী ও যিকির-তিলাওয়াতে মগ্ন থাকে, এমনকি সফর ও ক্লান্তির হালতেও। হাদীস শরীফের ভাষ্য হল–
وَقَوْمٌ سَارُوْا لَيْلَتَهُمْ حَتَّى إِذَا كَانَ النَّوْمُ أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِمَّا يُعْدَلُ بِه، نَزَلُوا فَوَضَعُوا رُءُوسَهُمْ فَقَامَ يَتَمَلَّقُنِي وَيَتْلُو آيَاتِي.
এক কাফেলা রাতভর সফর করেছে। সফর করতে করতে যখন দুনিয়ার সবকিছু থেকে ঘুম তাদের প্রিয় হয়ে উঠেছে, তখন যাত্রা বিরতি দিয়েছে এবং (বিছানায়) মাথা রেখেছে। এ অবস্থায় তাদের একজন নামাযে দাঁড়িয়ে আমার কাছে অনুনয়-বিনয় করছে এবং আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করছে। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৩৫৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৫৬৮; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬১৫; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৪৫৬
আল্লাহ তাআলা তাদের নিয়ে গর্ব করেন
আল্লাহ তাআলা যখন মানব সৃষ্টির ইচ্ছা করেন, পরামর্শ আকারে ফেরেশতাদের সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। ফেরেশতাগণ বললেন, এরা তো যমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করবে, খুনখারাবি করবে। আপনার স্তুতিগান ও উপাসনার জন্য তো আমরাই যথেষ্ট।
আল্লাহ তাআলা সংক্ষিপ্ত বাক্যে সারগর্ভ জবাব দিয়েছিলেন যে, আমি যা জানি তোমরা তা জানো না।
এখন বান্দা যদি এমন কোনো কর্ম সম্পাদন করে, যাতে আল্লাহ তাআলার প্রতি নিরলস আনুগত্য প্রকাশ পায় এবং তাঁর প্রতি গভীর ভক্তি-মহব্বত যাহের হয়, তখন আল্লাহ তাআলা খুশি হন এবং ফেরেশতাদের সাথে তার আলোচনা করেন। এই ধরনের মহৎ আমলের একটি হল রাতের শেষ অংশের আমল। যারা রাতের শেষ প্রহরে জাগ্রত হয়ে আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হয় আল্লাহ তাদের নিয়ে গর্ব করেন, ফেরেশতাদের সামনে তাদের আলোচনা করেন।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
عَجِبَ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى مِنْ رَجُلَيْنِ:
مِنْ رَجُلٍ ثَارَ مِنْ لِحَافِه وَفِرَاشِه مِنْ بَيْنِ حِبِّه وَأَهْلِه إِلَى صَلَاتِه، فَيَقُولُ اللهُ لِمَلَائِكَتِه: يَا مَلَائِكَتِيْ، انْظرُوا إِلَى عَبْدِي هَذَا، قَامَ مِنْ بَيْنِ فِرَاشِه وَلِحَافِه مِنْ بَيْنِ حِبِّه وَأَهْلِه إِلَى صَلَاتِه، رَغْبَةً فِيمَا عِنْدِي، وَشَفَقَةً مِمَّا عِنْدِي…
আমাদের রব আল্লাহ তাআলা দুই ব্যক্তির প্রতি অত্যন্ত খুশি হন (তন্মধ্যে এক ব্যক্তি হল)–
ঐ ব্যক্তি, যে লেপ ও বিছানা ছেড়ে নিজের প্রিয়মানুষ ও পরিবারের মাঝ থেকে (শেষ রাতে) নামাযের জন্য উঠে গেছে।
আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের ডাক দিয়ে বলেন, হে আমার ফেরেশতারা! আমার এ বান্দার প্রতি লক্ষ কর। সে লেপ ও বিছানা ছেড়ে নিজের প্রিয়মানুষ ও পরিবারের মাঝ থেকে নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে গেছে, আমার নিআমতের আশায় এবং আমার আযাবের ভয়ে!… –মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৫৩৬১; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৯৪৯; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৫৮
তাদের জন্য রয়েছে কল্পনাহীন অফুরন্ত নিআমতরাজি
যারা তাহাজ্জুদের পাবন্দী করেন, শেষ রাতে আরামের বিছানা ত্যাগ করে যিকির-আযকার ও ইবাদতে মগ্ন থাকেন, তারা ইবাদুর রহমান। আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহ তাদের জন্য মনোমুগ্ধকর এমন সব নায-নিআমত রেখেছেন, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না এবং মানুষ তার সীমিত আকল-বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে তা কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন–
اِنَّمَا یُؤْمِنُ بِاٰیٰتِنَا الَّذِیْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا یَسْتَكْبِرُوْنَ، تَتَجَافٰی جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ یَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا وَّمِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ، فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِیَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْیُنٍ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ.
আমার আয়াতসমূহে তো ঈমান আনে কেবল তারা, যারা এর দ্বারা যখন উপদেশপ্রাপ্ত হয়, তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজ প্রতিপালকের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে। আর তারা অহংকার করে না।
(রাতের বেলা) তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে পৃথক করে, ভয় ও আশার সাথে তারা নিজ প্রতিপালককে ডাকতে থাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি, তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে।
সুতরাং কেউই জানে না এরূপ লোকদের জন্য নয়ন প্রীতির কত কী উপকরণ লুকিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ। –সূরা সাজদা (৩২) : ১৫-১৭
রাতের শেষ প্রহর : দুআ কবুলের বিশেষ মুহূর্ত
শেষ রজনী বরকতপূর্ণ ও রহমতঘেরা সময়। দুআ কবুলের বিশেষ মুহূর্ত। আল্লাহ বান্দার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন। বান্দা যে দুআ করে তা কবুল করেন।
আমর ইবনে আবাসা রা. বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম। তখন তিনি ‘উকায’ বাজারে ছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম–
يَا رَسُولَ الله! فَهَلْ مِنْ دَعْوَةٍ أَقْرَبُ مِنْ أُخْرَى، أَوْ سَاعَةٍ؟
ইয়া রাসূলাল্লাহ! বিশেষ কোনো দুআ বা বিশেষ কোনো সময় আছে কি, যা আল্লাহ তাআলার কাছে অন্য দুআ ও অন্য সময় থেকে অধিক প্রিয়?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
نَعَمْ، إِنَّ أَقْرَبَ مَا يَكُونُ الرَّبُّ مِنَ الْعَبْدِ جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرِ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَكُونَ مِمَّنْ يَذْكُرُ الله فِي تِلْكَ السَّاعَةِ فَكُنْ.
অবশ্যই আছে। রাব্বে কারীম বান্দার সবচেয়ে নিকটবর্তী হন রাতের শেষ প্রহরে। সুতরাং সম্ভব হলে ঐ সময় যারা আল্লাহর যিকির করে, তাদের মধ্যে তুমিও শামিল হয়ে যাও। –সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৪৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৭৯; সুনানে নাসায়ী,
হাদীস ৫৭২
যে সময় উন্মুক্ত হয় রহমতের দুয়ারসমূহ
রাতের শেষ প্রহর খায়ের ও কল্যাণের আধার। এসময় উন্মুক্ত হয় আল্লাহর দয়া ও দানের প্রশস্ত দুয়ার। আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফিরাতের সাগরে যেন জোয়ার আসে। তিনি বান্দার প্রতি কৃপাদৃষ্টি দেন। বান্দাকে দান করার জন্য, বান্দার গুনাহ মাফ করার জন্য এবং বান্দার হাজত ও প্রয়োজন পুরা করার জন্য ডাকতে থাকেন।
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
يَتَنَزَّلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الآخِرُ، يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَه، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَه.
আমাদের রব আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে প্রথম আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কে আছ, আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আছ, আমার কাছে (কিছু) চাইবে, আমি তাকে দান করব! কে আছ, আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব! –সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮
সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য হাদীসগ্রন্থের বর্ণনায় এ-ও এসেছে যে–
فَلَا يَزَالُ كَذূلِكَ حَتَّى يُضِيْءَ الْفَجْرُ.
আল্লাহ তাআলা এভাবে ঘোষণা করতে থাকেন, সুবহে সাদিক উদিত হওয়া পর্যন্ত। –সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭৫৯২; জামে তিরমিযী, হাদীস ৪৪৬
তাহাজ্জুদ নেক বান্দাদের গুণ এবং বহুবিধ কল্যাণের মাধ্যম
যুগে যুগে যারা আল্লাহকে মহব্বত করেছেন, আল্লাহর ওলী হয়েছেন, কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদ ও শেষ রাতের যিকির-ইস্তিগফার ছিল তাদের একটি প্রিয় আমল। এমনকি পূর্ববর্তী উম্মতের যারা সালেহ তথা নেককার বান্দা ছিলেন তারাও কিয়ামুল লাইলের প্রতি বেশ যত্ন নিতেন। কারণ এর মাধ্যমে আল্লাহর পরম নৈকট্য লাভ হয়, গুনাহ মাফ হয় এবং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়!
আবু উমামা রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللَّيْلِ فَإِنَّه دَأْبُ الصَّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمُكَفِّرَةٌ لِلسَّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ عَنِ الْإِثْمِ.
তোমরা অবশ্যই তাহাজ্জুদের পাবন্দী করবে। কেননা, তাহাজ্জুদ ছিল পূর্ববর্তী সালেহীনের অভ্যাস। এ নামায তোমাদেরকে আপন রবের নৈকট্য দান করে, তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করায় এবং তোমাদেরকে গুনাহ থেকে বিরত রাখে। –সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৫৩; মুস্তাদরাকে হাকেম,
হাদীস ১১৫৬
তারা লাভ করবে জান্নাতের বিশেষ প্রকোষ্ঠ
জান্নাতে বিশেষ ধরনের কক্ষ আছে, এত জাকজমকপূর্ণ এবং এমন স্বচ্ছ ও যে, এর ভেতর থেকে বাহির এবং বাহির থেকে ভেতর দেখা যাবে। যারা এই অসাধারণ কামরার অধিকারী হবে, তাদের একটি সিফাত হচ্ছে, তারা তাহাজ্জুদের পাবন্দ হবেন।
আবু মালেক আশআরী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেছেন–
إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرْفَةً يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا، وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرِهَا أَعَدَّهَا اللهُ لِمَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَأَلَانَ الْكَلَامَ، وَتَابَعَ الصِّيَامَ وَصَلَّى وَالنَّاسُ نِيَامٌ.
জান্নাতে একটি কক্ষ আছে, যার বাহির থেকে ভেতর এবং ভেতর থেকে বাহির দেখা যাবে। এই কামরাটি আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিদের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায়, কোমল স্বরে কথা বলে, বেশি বেশি রোযা রাখে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাযে দণ্ডায়মান হয়। –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২৯০৫; জামে মা‘মার ইবনে রাশেদ, হাদীস ২০৮৮৩; মুজামে কাবীর, তবরানী ৩/৩০১ (হাদীস ৩৪৬৬)
দুই রাকাত নামায সমস্ত পৃথিবীর চেয়ে দামি
হাসসান ইবনে আতিয়্যা রাহ. বলেন, আমাদের নিকট এই হাদীস পৌঁছেছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا الْعَبْدُ فِي جَوْفِ اللَّيْلِ، خَيْرٌ لَه مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَفَرَضْتُهُمَا عَلَيْهِمْ (إسناده مرسل قوي(
রাতের গভীরে দুই রাকাত নামায দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার চেয়েও উত্তম। আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হওয়ার আশঙ্কা না করতাম, তাহলে আমি তাদের ওপর শেষ রাতের দুই রাকাত নামায ফরয করে দিতাম। –আযযুহ্দ ওয়ার রাকাইক, আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক, হাদীস ১২৮৯
নবীজী আপনজনকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে দিতেন
কিয়ামুল লাইলের ফযীলত ও বরকত অনেক। এর প্রাপ্তি ও পুরস্কার বেশুমার। এ থেকে গাফেল থাকা অনেক বড় মাহরূমি ও বঞ্চনার কারণ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাইতেন তাঁর আপনজন ও প্রিয় মানুষেরা যেন এ বরকত ও ফযীলত থেকে বঞ্চিত না হয়। তাই তাহাজ্জুদের সময় তিনি পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক রাতে লক্ষ করলেন, আলী রা. ও ফাতেমা রা. তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হননি। তাদেরকে জাগানোর জন্য তিনি পরপর দুইবার গিয়েছেন। প্রথমবার জাগানোর পর ওঠেননি। তাই পরে গিয়ে আবার জাগিয়েছেন। শুনুন সেই বিবরণ আলী রা.-এর যবানে।
আলী রা. বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ রাতে আমি ও ফাতেমার (ঘরের) কাছে এসে (বাহির থেকে ডাক দিয়ে) বললেন–
أَلاَ تُصَلِّيَانِ؟
আরে! তোমরা কি তাহাজ্জুদ পড়বে না?
–সহীহ বুখারী, হাদীস ১১২৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৭৫
হাদীসটির আরেক বর্ণনায় এসেছে, আলী রা. বলেন–
دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَى فَاطِمَةَ مِنَ اللَّيْلِ، فَأَيْقَظَنَا لِلصَّلاةِ، قَالَ: ثُمَّ رَجَعَ إِلَى بَيْتِه فَصَلَّى هَوِيًّا مِنَ اللَّيْلِ، قَالَ: فَلَمْ يَسْمَعْ لَنَا حِسًّا، قَالَ: فَرَجَعَ إِلَيْنَا، فَأَيْقَظَنَا وَقَالَ: قُومَا فَصَلِّيَا
এক শেষ রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ও ফাতেমার ঘরে এলেন এবং নামাযের জন্য ডেকে দিলেন। আমাদের জাগিয়ে তিনি চলে গেছেন। এরপর দীর্ঘক্ষণ নামায পড়েছেন।
এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যে আমাদের কোনো সাড়া-শব্দ পাননি, তাই আবার এলেন এবং আমাদের জাগালেন। বললেন, ওঠো, নামায পড়।… –মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৭০৫; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬১২; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৩৯
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদেরও তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত করতেন। উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেরেশানীর হালতে ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং বললেন–
سُبْحَانَ اللهِ، مَاذَا أَنْزَلَ اللهُ مِنَ الخَزَائِنِ، وَمَاذَا أُنْزِلَ مِنَ الفِتَنِ، مَنْ يُوقِظُ صَوَاحِبَ الحُجُرَاتِ –يُرِيدُ أَزْوَاجَه لِكَيْ يُصَلِّينَ.
‘সুবহানাল্লাহ’! আল্লাহ তাআলা কত খাযানা নাযিল করেছেন! এবং কত ফেতনা অবতীর্ণ হয়েছে! কে আছে, কক্ষবাসিনীদের তথা তাঁর স্ত্রীদের তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য জাগিয়ে দেবে! –সহীহ বুখারী, হাদীস ৭০৬৯; জামে তিরমিযী, হাদীস ২১৯৬
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, ধন-সম্পদের প্রাচুর্য অনেক ফেতনার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়। আরো বুঝে আসে, ফেতনা থেকে বাঁচার বড় একটা মাধ্যম হল তাহাজ্জুদের নামায।
সাহাবায়ে কেরামও পরিবারের লোকদের তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে দিতেন
সাহাবায়ে কেরাম রা. সব ক্ষেত্রেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করতেন। এক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন পরিবারের লোকদেরকে কিয়ামুল লাইলের জন্য জাগ্রত করতেন, সাহাবায়ে কেরামও স্ত্রী ও সন্তানদিগকে তাহাজ্জুদের সময় ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন।
উমর রা.-এর গোলাম আসলাম আদাভী রাহ. বলেন–
إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ، حَتَّى إِذَا كَانَ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ، أَيْقَظَ أَهْلَه لِلصَّلاَةِ، يَقُولُ لَهُم: الصَّلاَةَ الصَّلاَةَ، ثُمَّ يَتْلُو هذِهِ الآيَةَ: وَأْمُرْ أَهْلَكَ بِالصَّلاَةِ وَاصْطَبِرْ عَلَيْهَا لاَ نَسْأَلُكَ رِزْقًا نَحْنُ نَرْزُقُكَ وَالْعَاقِبَةُ لِلتَّقْوَى.
উমর ইবনে খাত্তাব রা. আল্লাহ যতটুকু তাওফীক দেন রাতের বেলা নামায পড়তে থাকতেন। একপর্যায়ে যখন রাতের শেষ প্রহর এসে যেত, নামাযের জন্য পরিবারের লোকদের জাগিয়ে দিতেন। তিনি বলতেন, ‘নামায’, ‘নামায’।
এরপর এই আয়াত তিলাওয়াত করতেন (তরজমা)– এবং নিজ পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ করো এবং নিজেও তাতে অবিচল থাক। আমি তোমার কাছে রিযিক চাই না; রিযিক তো আমিই দেব। আর শুভ পরিণাম তো তাকওয়ারই। [সূরা ত্ব-হা (২০) : ১৩২] –মুয়াত্তা মালেক, আছার ৩১১; সুনানে ছুগরা, বাইহাকী, আছার ৮০২
সুতরাং আমরা নিজেরা তাহাজ্জুদের পাবন্দ হওয়ার চেষ্টা করব এবং আপনজনদের এর পাবন্দী করার জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দান করব, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তাআলাই তাওফীকদাতা।
ঐ স্বামী-স্ত্রীর প্রতি আল্লাহ রহম করুন…
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ স্বামী-স্ত্রীর জন্য রহমতের দুআ করেছেন, যাদের একজন তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হয়, এরপর অন্যজনকে জাগিয়ে দেয়।
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন–
رَحِمَ اللهُ رَجُلًا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّى وَأَيْقَظَ امْرَأَتَه فَصَلَّتْ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا الْمَاءَ، رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّتْ، وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ الْمَاءَ.
ঐ ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ তাআলা রহম করুন, যে রাতে ঘুম থেকে উঠেছে, নামায পড়েছে এবং আপন স্ত্রীকে জাগিয়েছে। ফলে স্ত্রীও নামায পড়েছে। আর স্ত্রী না উঠতে চাইলে (তাকে জাগানোর জন্য) তার চেহারায় পানি ছিটিয়েছে।
আল্লাহ তাআলা ঐ নারীর প্রতিও রহম করুন, যে রাতে ঘুম থেকে জেগেছে, এরপর নামায পড়েছে এবং স্বামীকে জাগিয়েছে। তখন সেও নামায পড়েছে। স্বামী উঠতে অস্বীকার করলে (তাকে ওঠানোর জন্য) তার চেহারায় পানির ছিটা দিয়েছে। –সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪৫০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৬১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৪৮; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ২৫৬৭
আসুন, আমরা নিজেরা তাহাজ্জুদের পাবন্দী করি, পরিবার-পরিজনকে এর জন্য উদ্বুদ্ধ করি এবং স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সহযোগিতা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন– আমীন।